ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করবেন

রূপগঞ্জ ক্ষেত্রের গ্যাস আড়াই বছর পর গ্রিডে যোগ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

রূপগঞ্জ ক্ষেত্রের গ্যাস আড়াই বছর পর গ্রিডে যোগ হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ অবশেষে রূপগঞ্জ ক্ষেত্রের গ্যাস গ্রিডে যোগ হচ্ছে। গ্যাস পাওয়ার আড়াই বছর পর ক্ষেত্রটির গ্যাস গ্রিডে আসছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে সড়ক এবং জনপথ বিভাগের সঙ্গে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সমঝোতা হওয়ায় পাইপ লাইন নির্মাণ হচ্ছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাস সঞ্চালন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গ্যাস ক্ষেত্রটি পূর্বাচল আবাসিক এলাকায়। এখান থেকে গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। আড়াই বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও অনুমতি যোগাড় করতে ব্যর্থ হয় বাপেক্স। আনুষ্ঠানিকভাবে জ্বালানি বিভাগকে বিষয়টি জানায় তিতাস। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বিষয়টিতে সমঝোতা হয়। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী গত সপ্তাহে রূপগঞ্জের গ্যাস লাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের আরও দুটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। প্রকল্পগুলো হচ্ছে দুটি পাইপ লাইনসহ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) নতুন ভবন। ঢাকার অদূরে ২০১৪ সালে গ্যাস পাওয়ায় আশার আলো দেখা যায়। তখন বলা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের গ্যাসের সঙ্কট নিরসন করবে রূপগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্র। প্রকল্পের সব কাজ ঠিকঠাক শেষ হলেও পাইপ লাইন নির্মাণ নিয়ে জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন এখান থেকে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে যোগ হবে। বাপেক্সের পরিকল্পনায় দেখা যায় ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। রূপগঞ্জকে ২০১৪ সালের ২২ জুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করে পেট্রোবাংলা। আকারে খুব বেশি বড় না হলেও দেশের ২৬তম গ্যাস ক্ষেত্রটির জরিপ শেষ করে আবারও কূপ খনন করা যায় কি না তা বিবেচনা করার কথাও অতীতে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। বাপেক্স সূত্র জানায়, রূপগঞ্জে প্রায় তিন হাজার ৬০০ মিটার গভীর অনুসন্ধান কূপের শেষ দিক থেকে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে তিন হাজার ৩০০ মিটার গভীরে গ্যাসের আরেকটি স্তর রয়েছে। ওই স্তরটি ছয় মিটার পূরত্বের। সেখানে আরও গ্যাস মজুদ রয়েছে। সঙ্গতকারণেই তৃতীয়মাত্রার জরিপ শেষে আরও কূপ খনন করলে বেশি গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকা। এখানে বড় বড় গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রও রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শিল্প মালিকরা প্রায় গ্যাসের নিম্ন চাপের অভিযোগ করেন। রূপগঞ্জ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হলে নিম্নচাপের সমস্যা নিরসন করা সম্ভব। বাপেক্স ২০১০ সালে রূপগঞ্জে দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালায়। এতে সেখানে গ্যাসের অস্তিত্ব থাকার বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে অনুসন্ধান কূপ খনন করে গ্যাস আবিষ্কার করা হয়। ২০১৫ সালেই এখানে তৃতীয়মাত্রার জরিপ চালিয়ে আরও কূপ খনন করার কথা ছিল। কিন্তু আড়াই বছরেও সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন নির্মাণ করতে না পারায় ঝুলে গেছে প্রকল্প। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল ॥ চার হাজার ৯৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ইআরডি জানিয়েছিল সরকারী তহবিল থেকে ৯২০ কোটি ৮৭ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১১ কোটি ৯০ লাখ এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ থেকে তিন হাজার ৯০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাসমান এই টার্মিনাল ব্যবহার করে জ্বালানি তেল খালাস করা যাবে। দেশে এ ধরনের টার্মিনাল নির্মাণ এই প্রথম। মহেশখালী দ্বীপের কাছে গভীর সমুদ্রে ভাসমান তেল খালাসের টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রামের আনোয়ারার ডিপোকে টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ২২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের ইপিসি-নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরো (সিপিপি) কাজ করবে। চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করা হয়। বিপিসি বলছে এখন একটি এক লাখ টনের লাইটার্জ জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে ১১ দিন সময় প্রয়োজন হয়। টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা দুই দিনে নেমে আসবে। বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-২০১০ এ টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইন এবং সিঙ্গেল মুরিং টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি অফশোরে ১৪৬ কিলোমিটার ও অনশোরে ৭৪ কিলোমিটার সর্বমোট ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন (এর মধ্যে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের ৩২ কিলোমিটার এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৮৮ কিলোমিটার)। মহেশখালী দ্বীপে ট্যাংক ফার্ম ও পাম্পস্টেশন স্থাপন। স্কাড সিস্টেম স্থাপন। ভূমি অধিগ্রহণ, অধিযাচন ও ক্ষতিপূরণ। বিশেষজ্ঞ সেবা এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট পূর্ত কাজ করা হবে।
×