ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ থেকে বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল ফেস্টিভ্যাল

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পণ্ডিত ওস্তাদরা আসছেন, প্রস্তুত আর্মি স্টেডিয়াম

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পণ্ডিত ওস্তাদরা আসছেন, প্রস্তুত আর্মি স্টেডিয়াম

মোরসালিন মিজান ॥ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। সঙ্গীতের মূল। কণ্ঠের খেলা। যন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ। সব মিলিয়ে অনবদ্য। আচ্ছন্ন করে রাখে। খুব বড় প্রমাণ বেঙ্গল ক্ল্যাসিকাল ফেস্টিভ্যাল। গত চার বছরে আয়োজনটি অনন্য উচ্চতা স্পর্শ করেছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সুচিন্তা এখন বাংলাদেশের অর্জন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের কথা। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে বসছে পঞ্চম আসর। সন্ধ্যায় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে উদ্বোধন করা হবে পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজনের। এরই মাঝে সব বয়সী শ্রোতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ক্ল্যাসিকাল ফেস্টিভ্যাল। সারা বছর অনেকেই অপেক্ষা করে থাকেন। সেই অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আজ। বিশাল মঞ্চ প্রস্তুত। হাজার হাজার মানুষ আগেই নিবন্ধিত হয়েছেন। রাতভর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনবেন তারা। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবে বর্ণাঢ্য পরিবেশনা নিয়ে থাকছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পীরা। প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, বিদুষী গিরিজা দেবী, শিব কুমার শর্মা, অজয় চক্রবর্তী, ওস্তাদ রশিদ খান, রাহুল শর্মার মতো বহু বিখ্যাত ও বিশ্বনন্দিত শিল্পীরা বিভিন্ন ঘরানার কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন। থাকছেন বাংলাদেশের শিল্পীরাও। এবার দেশীয় শিল্পীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে মঞ্চে ওঠবেন তারা। সব মিলিয়ে বিপুল আয়োজন। বড়সড় উৎসব। কেমন প্রস্তুতি? জানতে চাইলে আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, আমরা সব সময়ই একটি সুন্দর সফল উৎসব করতে চেয়েছি। এবারও এর কোন ব্যতিক্রম হবে না। আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এর আগে চারবার উৎসবটি আয়োজন করা হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকে বিশাল কর্মী বাহিনী কাজ করছে। উৎসবের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ চলবে। এবারও উৎসবে উপমহাদেশের খ্যাতিমান ওস্তাদ ও প-িতরা উপস্থিত থাকবেন। প্রতিশ্রুতিশীল নবীনরাও তাদের পরিবেশনা নিয়ে শ্রোতাদের সামনে আসবেন। সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের উৎসবে সকলকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। আয়োজক সূত্র জানায়, আজ উৎসবের সূচনা করা হবে বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা দিয়ে। ‘রবি-করোজ্জ্বল’ শীর্ষক দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল নৃত্যনন্দন। আয়োজকদের ভাষায়Ñ নৃত্যশৈলীর নানা ধারা রবীন্দ্রনাথে এসে মিলেছিল যে মোহনায় তার উৎস ও পরম্পরা দিয়ে গাঁথা হবে রবি-করোজ্জ্বল নৃত্যমালিকা। পরে বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দী। প্রবীণ গোদখি-ির বাঁশি বাজাবেন। রাতিশ টাগড বাজাবেন বেহালা। তবলায় থাকবেন রামদাস পালসুল। এ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে উৎসবের। উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবারও শুরু হবে পরিবেশনা। ঢাকার শ্রোতাদের কাছে খুব প্রিয় পরিচিত প্রবীণ উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী পরিবেশন করবেন খেয়াল। ক্ল্যাসিকাল ফেস্টিভ্যালের নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তিনি। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার শিল্পীর পরিবেশনা হতে পারে দিনের প্রধান আকর্ষণ। এদিন সরোদ বাজাবেন ওস্তাদ আশিষ খান। খেয়াল যুগলবন্দী ‘জাসরাঙ্গি’ পরিবেশন করবেন বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপা-ে ও প-িত সঞ্জীব অভয়ঙ্কর। প্রথম দিনের আয়োজন শেষ হবে ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠান শুরু হবে বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগালের ওডিশি নৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে। ওডিশি নৃত্যধারার খ্যাতিমান প্রবক্তা শিল্পী মাধবী মুডগাল। আরুশি মুডগালও ওড়িশি নৃত্যধারার জনপ্রিয় শিল্পী। কৌশলগত উৎকর্ষ ও মূলধারার নৃত্যে নতুন মাত্রা সংযোজনের জন্য সুনাম অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় পরিবেশনাটি বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের। দলীয় তবলা পরিবেশন করবেন চিন্ময় ভৌমিক, ফাহমিদা নাজনিন সুমাইয়া, এম জে জে ভুবন, নুসরাত-ই-জাহান খুসবু, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক ও সুপান্থ মজুমদার। খেয়াল পরিবশেন করবেন বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। উৎসবের প্রিয় শিল্পী রাহুল শর্মা সন্তুর বাজিয়ে শুনাবেন। তিনি প-িত শিবকুমার শর্মার সন্তান। তার কাছেই শিখেছেন। রিচার্ড ক্লেডারম্যান ও কার্সি লর্ডসহ খ্যাতিসম্পন্ন বহু গায়ক ও বাদকের সঙ্গে একই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। রাহুল ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক। তবে ধ্রুপদী সঙ্গীত এবং নিরীক্ষাধর্মী সঙ্গীতে তার বিশেষ দক্ষতা। এদিন দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করবেন মোহম্মদ শোয়েব। সেতার বাজাবেন পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। প-িত উল্লাস কশলকারের খেয়াল শোনার জন্য বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন শ্রোতা। এদিন রাতে খেয়াল পরিবেশন করেন তিনি। এরপর বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দী। প-িত রনু মজুমদারের বাঁশি ও ইউ. রাজেশের ম্যান্ডোলিন কথা বলবে একসঙ্গে। জানা যায়, তৃতীয় দিন শনিবার উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ওস্তাদ রাশিদ খান। খেয়াল শোনাবেন তিনি। তার জন্যও অপেক্ষা করে থাকবেন শ্রোতা। এর আগে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসব। শিল্পীরা দলীয় সরোদ পরিবেশন করবেন। পরে বাঁশি বাজিয়ে শুনাবেন শশাঙ্ক সুব্রহ্ম্যণন। খেয়াল পরিবেশন করবেন ড. প্রভা আত্রে। অনুষ্ঠানে তবলা বাজাবেন প-িত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ধ্রুপদ শুনাবেন প-িত উদয় ভাওয়ালকার। প-িত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় শোনাবেন সেতার। চতুর্থ দিনে রবিবার খেয়াল শোনাবেন প-িত অজয় চক্রবর্তী। পাতিয়ালা-কসুর ঘরানার শিল্পী অন্যান্য প্রধান ঘরানার বৈশিষ্ট্যও রপ্ত করেছেন। প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারও বিখ্যাত। বিভিন্ন গায়কির উপাদানে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। অনুষ্ঠানে সরোদ বাজাবেন তিনি। এদিন দলীয় কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের শিল্পী মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল রেওয়াজ। তবলা পরিবেশন করবেন নীলেশ রণদেব। খেয়াল পরিবেশন করবেন জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলা যুগলবন্দী পরিবেশন করবেন প-িত যোগেশ শামসি ও প-িত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্ণাটক কণ্ঠসঙ্গীত যুগলবন্দী নিয়ে আসবেন রঞ্জনী ও গায়ত্রী। আয়োজকরা জানান, পঞ্চম ও সমাপনী দিন সোমবার হবে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এদিন প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি শোনার সুযোগ পাবে ঢাকা। কিংবদন্তি এই বংশিবাদক ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ। এবারও তার সঙ্গে রাত জাগবেন হাজার হাজার শ্রোতা। এর আগে মঞ্চে থাকছেন আরেক বিখ্যাত শিল্পী প-িত শিবকুমার শর্মা। সন্তুর বাজাবেন তিনি। কাশ্মিরী লোকসঙ্গীতে ব্যবহৃত সন্তুরকে মার্গসঙ্গীতের মঞ্চে আনেন শিল্পী। একনিষ্ঠ অধ্যবসায়, ক্লান্তিহীন গবেষণা ও পুনঃপুনঃ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে সন্তুরবাদনে নতুন মাত্রা সংযোজন করেন তিনি। তারও আগে দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। দলীয় সেতার বাজাবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের একদল শিক্ষার্থী। খেয়াল পরিবেশন করবেন কুমার মারদুর ও আরতী আঙ্কালিকার। সেতার বাজাবেন প-িত কুশল দাস। এভাবে দারুণ জমজমাট হয়ে ওঠবে প্রতিটি রাত। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের পরিবেশনা। চমৎকার আয়োজন আরও হোক। সঙ্গীতের ছোঁয়ায় জেগে ওঠুক মানবিক আত্মা।
×