ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেয়র পদ থেকে আইভীর ইস্তফা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

মেয়র পদ থেকে আইভীর ইস্তফা

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। বুধবার বিকেল তিনটায় নগর ভবনে তার শেষ দিনের কর্মদিবস শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মন্ত্রী বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। পরে নগর ভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, দলীয় বিভেদ ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে কাজ করবে। এদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের স্বার্থে সেনা মোতায়েন করতে হবে। বিএনপি দলীয় প্রার্থীর সেনা মোতায়েনের দাবি নাকচ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ওই রকম কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বুধবার পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ৯, সাধারণ সদস্য পদে ১৮৮ এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৪০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে জমা পড়েছে মেয়র পদে এলডিপির হাজী কামাল প্রধান, সাধারণ সদস্য ৫৩ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। প্রার্থীরা ঋণখেলাপী কিনা তা যাচাইয়ের নির্দেশ ॥ অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান, নাসিক নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা ঋণখেলাপি কিনা, তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রার্থীদের খেলাপী ঋণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঋণের হালনাগাদ তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে। সংবাদ সম্মেলনে আইভী যা বলেন ॥ আইভী বলেন, আমি বিগত ৫ বছর এখানে কাজ করেছি। আমার সর্বস্ব দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি, সফলতা কি আছে তা আপনারাই দেখেছেন। জনগণের জবাবদিহিমূলক বিভিন্ন বই করেছি, ৫ বছরের যে হিসাব-নিকাশ তার সব কিছু আমাদের এখানে আছে। যখন আপনাদের প্রয়োজন তখনই সিটি কর্পোরেশন থেকে নিতে পারবেন। আমার সফলতা আমি নিজে বলতে চাই না। গত ৫ বছরে আমি কতটুকু সফল এবং কতটুকু ব্যর্থ তা নারায়ণগঞ্জবাসীই বিচার করবে। আমার ব্যর্থতার কথা যদি বলতে চাই, তবে বলব, আমি শতভাগ ট্যাক্স আদায় করতে পারিনি। এটাই আমার জন্য ব্যর্থতা। তবে ৬০ ভাগ ট্যাক্স আদায় করেছি। আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে এই কথাটাই বলতে চাই সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সরকার আমাদের টাকা দিয়েছে, প্রকল্প দিয়েছে, দাতা সংস্থাগুলো আমাদের সহযোগিতা করেছে। বিশিষ করে এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাইকা, জাপান, ইউএনডিপি এই সংস্থাগুলো সিটি কর্পোরেশন কে প্রকল্প দিয়ে, সাহায্য সহযোগিতা করেছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের অনেক প্রকল্প দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি, আমাদের নিজস্ব তহবিল এবং সবকিছু মিলিয়ে ৬শ’ কোটি টাকার বেশি কাজ হয়েছে। ৯ তলা বিশিষ্ট আধুনিক নগর ভবন, জিমখানা লেকের কাজ চলমান আছে। প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে বাবুরাইল খালকে ধলেশ্বরী এবং শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে দিব। বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জে কি কাজ হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আমি এটুকু বলতে পারি, যতদিন সিটি কর্পোরেশনে ছিলাম, ততদিন মনপ্রাণ এবং আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এতটুকু ফাঁকি দেইনি। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জবাসী যে জয় উপহার দিয়েছে তা আমাকেসহ গোটা নারায়ণগঞ্জে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। যারা আমাকে ভোট দিয়েছে সেই ভোটারদের জন্য আমি আমার জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি। কখনও কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করিনি। সত্যের জন্য কাজ করে গেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। এই জন্য আমাকে অনেকের কাছে অপদস্থ হতে হয়েছে। অনেকে আমাকে অসম্মানিত করার চেষ্টা করেছে। আমি কোন কিছুতেই থেমে থাকিনি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি সিটি কর্পোরেশনবাসীর কাছে আপীল করতে চাই, আমি আপনাদের সঙ্গে ৫ বছর কাজ করেছি, তার পূর্বে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় ৮ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। মোট ১৩ বছর দায়িত্ব পালনকালে সিটি কর্পোরেশনের কোন ভোটারের সঙ্গে কোন ফাঁকি দেই নাই। অন্যায় করি নাই, মিথ্যা বলি নাই। যতটুকু পেরেছি সবার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাই জনগণের কাছে বলতে চাই ২০১৬ তে এসে আমি আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছি। ২২ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সে নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে আবেদন করতে চাই, আমার কাজের, সততার এবং আমি আপনাদের মানুষ হিসেবে আবার আপনাদের সেবা করতে চাই। সেই সুযোগটা আমাকে করে দেবেন। আপনাদের কাছে এই আপীল করছি। আশা করছি আপনারা আমার পাশে থাকবেন এবং দোয়া করবেন। আইভী পরে হেঁটে নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর দুই নং রেলগেট এলাকার দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দেওভোগের বাড়িতে ফিরে যান। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা ॥ নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, আইভীর জন্য নয়, দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করব। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য তিনি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
×