ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশকে আরও দক্ষ করতে ২শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

পুলিশকে আরও দক্ষ করতে ২শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

তপন বিশ্বাস ॥ দেশের পুলিশ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ ও চৌকস করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মোট প্রায় তিন শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রাজধানীর পুলিশের অপারেশন সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দু’শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তায়নের দায়িত্ব পালন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি নদী এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৯টি নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৭ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত পৃথক দু’টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। পর্যায়ক্রমে আরও প্রকল্প হাতে নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, রাজধানীর প্রায় ২ কোটি নাগরিকসহ ভিভিআইপি ও ভিআইপি ব্যক্তি এবং দেশী-বিদেশী অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে। দিন পরিবর্তনের পাশাপাশি সন্ত্রাসীরাও আধুনিক হচ্ছে। তাদের মোকাবেলায় পুলিশকেও আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে মতামতে বলা হয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ডিএমপির অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। ফলে প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার নাগরিকদের অধিকতর নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নগরবাসীসহ রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ডিএমপির ওপর ন্যস্ত। বর্তমানে ডিএমপির ৪৯টি পুলিশ স্টেশন রয়েছে। শীঘ্রই আরও ১০টি নতুন পুলিশ স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ অবস্থায় ডিএমপির জন্য জিপ, ডাবল কেবিন পিক-আপ, পেট্রোল কার, মোটর সাইকেল, মিনিবাস ও ট্রাক, মিনি ট্রাক ইত্যাদি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এমন পরিপ্রেক্ষতে সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা অপরিহার্য। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সার্বিক বিবেচনায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ১০০টি ২৫০ সিসি মোটরসাইকেল, ২০০টি ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল, ২০টি মিনিবাস, ৫০টি ট্রাক, ৫০টি মিনি ট্রাক, ৫২ সিট বিশিষ্ট ৫০টি বাস, ২০টি প্রিজন ভ্যান, ১০টি জিপ, ৭টি প্রটেকশন জিপ, ১৮৮টি ডাবল কোবিন পিক-আপ ভ্যান, ২৫টি পেট্রোল কার ও দুটি ক্যানাইন ভ্যান ক্রয় করা, এক হাজার জনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়া এবং কেন্দ্রীয় মোটর ওয়ার্কশপ স্থাপন করা। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অর্থ বিভাগ হতে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির মূল্য পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর জারিকৃত পরিপত্র বা আদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় সকল যানবাহনের একক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে, ক্রয়কৃত যানবাহনগুলো সরকারী প্রতিষ্ঠান হতে সংগ্রহের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় নিতে হবে, ডিএমপির বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের অনুমোদিত সংখ্যা এবং এর মধ্যে অকেজো ঘোষিত ও বর্তমানে চালু যানবাহনের সংখ্যা কত তা প্রকল্প প্রস্তাবের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। নদী এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধে ১৯ নৌপুলিশ ফাঁড়ি হচ্ছে ॥ নদী এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হচ্ছে। এজন্য ১৯টি নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৭ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যৌথভাবে বাংলাদেশ পুলিশ ও গণপূর্ত অধিদফতর। যেসব জেলায় পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করা হবে সেগুলো হলো-বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালীর বাউফল, বরগুনার পাথরঘাটা, চাঁদপুরের, চাঁদপুর সদর ও মতলব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, মাদারীপুরের রাজৈর, নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও আড়াইহাজার, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও লাখাই, বাগেরহাটের শরণখোলা ও মংলা, খুলনার কয়রা ও দাকোপ এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। এ বিষয়ে মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নৌপুলিশের উন্নত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃষ্টি ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী এলাকায় ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী কর্মকা- দমন ও প্রতিরোধসহ নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম ইউনিট হলো নৌপুলিশ। কিন্তু নৌপুলিশের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত দাফতরিক সুযোগ-সুবিধা, ইকুইপমেন্টসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। বিদ্যমান ৪৬টির মধ্যে ১৯টি নৌপুলিশ ফাঁড়ির অবকাঠামো খুবই নাজুক এবং শতবর্ষ পুরনো। ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা, জানমাল রক্ষার্থে প্রস্তাবিত ১৯টি নৌপুলিশ ফাঁড়ির পুরনো অবকাঠামো বাদ দিয়ে নতুন অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পুলিশ এবং গণপূর্ত অধিদফতর বাস্তবায়নের জন্য ১৯টি নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও ব্যারাক নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে-টাইপ প্ল্যানে ১০টি পুলিশ আউটপোস্ট নির্মাণ, টাইপ প্ল্যানে ৯টি পুলিশ আউটপোস্ট নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, অভ্যন্তরীণ স্যানিটারি ও ওয়াটার সাপ্লাই স্থাপন, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ সড়ক, কম্পাউন্ড ড্রেন, আরবরিকালচার নির্মাণ, ২ সেট কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ২টি ফটোকপিয়ার, ৪৬ সেট আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় এবং ৭টি গাড়ি, ১০টি পেট্রোল বোট, ৪০টি মোটরসাইকেল সংগ্রহ ইত্যাদি। এই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাহিদার ভিত্তিতে আরও নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। দেশের পুলিশ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন ও দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। দেশে কোন অবস্থায় যাতে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ মাথা তুলে দাঁড়াতে না পালে সে লক্ষ্যে সরকার এই ব্যবস্থা নিচ্ছে।
×