ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৮ ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কর্তব্যপরায়ণ, শৃঙ্খলা বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ। মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই পেশাগতভাবে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দক্ষ, সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বুধবার দুপুরে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সদর দফতরে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৮টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য যত জনবল প্রয়োজন, যুদ্ধ সরঞ্জাম যা যা প্রয়োজন, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সেসব সরঞ্জাম আমরা দিচ্ছি। বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদী সংলগ্ন এলাকায় লেবুখালী সেনানিবাসে একটি পদাতিক ডিভিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের রামুতে আরেকটি পদাতিক ডিভিশন গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদেশে এভাবে পদাতিক ডিভিশন গড়ে তুলে আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৮টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আজ সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন, পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন। আমি বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ ডিভিশনকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলবেন এবং একই সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আত্মনিয়োগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বাংলাদেশের বাইরেও শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে কর্মরত সৈনিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সৈনিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সৎ, কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের ব্যাপারে আমরা অবগত রয়েছি। এজন্য আপনাদের বিভিন্ন কল্যাণের বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, রেশন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বাইরে সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করেছে। উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যাতে আপনাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিপাগল আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অকুতোভয়, তেজদীপ্ত ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশকিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এ্যাভিয়েশনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে যোগ করেছে নতুনমাত্রা। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আজ বিশ্বব্যাপী এ দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পেয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৭৩৮ ফ্লাইটে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর হযরত শাহজালাল (র) মাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে গাড়িবহর শাহজালাল (র) মাজারে এসে পৌঁছায়। বেলা ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহপরান (র) মাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে বেলা ১টার দিকে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সদর দফতরে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৮টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা থেকে সিলেটে সফরসঙ্গী হয়ে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান, দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও দীপু মনি, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল (অব) সফিউল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন এ ব্রিগেড ও ইউনিট প্রতিষ্ঠা, সিলেট অঞ্চলের অবকাঠামো, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণ সৃষ্টি করেছে। সিলেটে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের উন্নয়ন ওই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়েছে এবং সেনাসদস্যদের কাছে তাদের প্রত্যাশা বেড়েছে। ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেটে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। তিন বছরের মাথায় এ ডিভিশনের অধীনে একটি নতুন পদাতিক ব্রিগেডসহ নয়টি ইউনিটের গোড়াপত্তন করা সম্ভব হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী ‘অভিভূত’ হয়ে বলেন, ‘১৭ পদাতিক ডিভিশনের উন্নয়ন এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে এবং আপনাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা বেড়েছে।’ দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। নতুন এ ব্রিগেড ও ইউনিটগুলোর ‘বিক্রমশালী’ প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেনাবহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষা নীতিতে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন জানিয়ে পিতার বক্তৃতা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করেন শেখ হাসিনা। ‘১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী ওই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি জ্ঞানভিত্তিক পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যের নৈতিক ও মানসিক শক্তি এবং পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছি।’ আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দৃঢ় করার জন্য সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশকিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার সরকারের চলতি মেয়াদে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে ‘অভূতপূর্ব’ উন্নতি হয়েছে। ফোর্সেস গোলের আওতায় ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরে অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এ্যাভিয়েশনে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সংযোজনের কথা উল্লেখ করেন। সকালে ১১ পদাতিক ব্রিগেডের সদর দফতরে পৌঁছলে সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সিলেট এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী।
×