ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বেজিংয়ের হুঁশিয়ারি

পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করলে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্ক দিয়ে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর চীনের ওপর শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে বেজিং এখন ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে বলে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি প্রিজৎকার মঙ্গলবার জানিয়েছেন। খবর ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালের। প্রিজৎকার বলেছেন, ‘চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি রয়েছে।’ তিনি ওয়াশিংটনে চীন-মার্কিন উচ্চ পর্যায় বাণিজ্য আলোচনার অবকাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, মার্কিন শ্রমিক ও শিল্প কারখানার ক্ষতি হতে পারে। পুরো অর্থনীতিকেই মাসুল গুনতে হতে পারে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রশ্নটি এখন সামনে এসেছে। কারণ তার অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ক্ষমতায় আসলে চীনকে কারেন্সি ম্যানিপুলেটর দেশ হিসেবে ঘোষণা দেবেন। তিনি বারংবার চীনের পণ্যের ওপর বিপুল পরিমাণ ট্যারিফ বসানোর কথা বলেছেন। ট্রাম্প এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেননি। কিন্তু তিনি এরই মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১২ দেশের সঙ্গে করা ওবামা প্রশাসনের ট্রান্স প্যসিফিক পার্টনারশিপ বা টিটিপি বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি সোমবার আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রিজৎকার বলেছেন, এর ফলে চীন ওই অঞ্চলে পছন্দমতো নিজস্ব কর্মসূচী নিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে নিয়ে ১২ জাতি ওই চুক্তিতে চীনকে অবশ্য বাদ রাখা হয়েছিল। প্রিজৎকার মনে করেন চীনকে এভাবে এক তরফা সুযোগ করে দেয়া ঠিক হয়নি। এদিকে ট্রাম্প টিপিপি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়ার পর আঞ্চলিক কয়েকটি দেশ এখন চীনের উদ্যোগে নেয়া বাণিজ্য জোটে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদিকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেমন করেন তা দেখার জন্য চীন অপেক্ষা করা ও দেখার নীতি অনুসরণ করতে চায় বলে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াংয়ি মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে বলেছেন। দোভাষীর মাধ্যমে দেয়া ওয়াংয়ি আরও বলেন, ওয়াশিংটনের হবু প্রশাসনের সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক কেমন হবে সেটি আগে থেকে ধারণা করা কঠিন। তবে বিদ্যমান বাণিজ্যক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থেই দুদেশ বজায় রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অনেকেই এখন ধারণা করতে শুরু করেছে যে, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ বোধ হয় বেধে গেল। বাস্তবে এ রকম আভাস দেয়া খুবই কঠিন। টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় গবেষণা সংস্থা এশিয়া ট্রেড সেন্টারের ডেবোরাহ এলমস বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত হতাশাজনক খবর। এর অর্থ হলো এ ধরনের বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব শেষ। আর এটা করে মূল চাবিকাঠি তুলে দেয়া হচ্ছে এশিয়ার হাতে। এশিয়া প্যাসিফিক অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ হারুমি তাগুচি মনে করেন, টিপিপি বাতিল হলে এশিয়ায় শূন্যতা সৃষ্টি হবে। সেই শূন্যতা পূরণের জন্য চীন এগিয়ে আসবে। পেরুর রাজধানী লিমায় এপেক নেতারা ট্রাম্পের বিরোধিতা সত্ত্বেও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অব্যাহত রাখার পক্ষে কথা বলেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প যেভাবে বাগাড়ম্বর করেছিলেন, ক্ষমতায় আসার পরও তিনি যদি সে পথেই হাঁটেন তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ বেধে যাওয়া কোন অস্বাভাবিক ঘটনা হবে না। অনেকে মনে করেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প বাস্তববদী দৃষ্টিভঙ্গি করতে পারেন। চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ইষ্পাত শিল্প এখন চাপের মধ্যে পড়েছে। ইস্পাত, এ্যালুমিনিয়ামের দাম পড়ে গেছে। এজন্য শ্রমিক ছাঁটাই থেকে শুরু করে অনেক কারখানা বন্ধ করে করে দিতে হয়েছে।
×