ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিন্স হেনরী স্নাল

বেহাল রাজধানী

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

বেহাল রাজধানী

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর, মসজিদের শহর, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শহর, বিশ্বের রিক্সা রাজধানী ও বাংলাদেশের রাজধানী নামে খ্যাত ‘ঢাকা’ এ বছর মোটামোটিভাবে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকার মধ্যে ৪র্থতম অবস্থানে রয়েছে। গত বছর ১৪০টি শহর নিয়ে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর চালানো জরিপে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৯ নম্বর আর এ বছর ১৩৭। এই জরিপ চালানো হয় মূলত শহরের স্থায়িত্ব, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও অবকাঠামোর দিক বিশ্লেষণ করে। আর এ বছর ঢাকা মহানগরীর ফলাফল যথাক্রমে স্থায়িত্বে ২৮.২, স্বাস্থ্যসেবায় ৫০, সংস্কৃতি এবং পরিবেশে ৪৩.৩, শিক্ষায় ৪১.৭ ও অবকাঠামোয় ২৬.৮ এবং গড় হিসাবে ১০০ থেকে ঢাকার সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বর ৩৮.৭ যা গত বছরের থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। এবারও মেলবোর্ন শহর সবচেয়ে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকার শীর্ষে তার অবস্থান এবং অন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো হলো যথাক্রমে ভিয়েন্না, ভ্যানকুভের, টরোন্টো, কালগ্যারি। ২০১২ সালে ইআইইউ-এর চালানো সমীক্ষানুযায়ী পৃথিবীর অবসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। অর্থাৎ, যেখানে ঢাকা পূর্বে একের অধিকবার অবসবাসযোগ্য শহরের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছিল, সেখানে এখন কিছুটা উন্নতি হয়ে মোটামুটি বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে। কিন্তু বর্তমানে ঢাকার যে বেহাল দশা, যেভাবে নানা রোগ, শোক ও সমস্যায় জর্জড়িত হয়ে ধুকে ধুকে টিকে আছে তাতে পরবর্তীকালে পুনরায় অবসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ঢাকা মহানগরীর আয়তন ৮১৫.৮৫ বর্গ কিলোমিটার এবং লোক সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র, উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্র ইত্যাদি ঢাকায় হওয়াতে প্রতিদিনই বিবিধ প্রয়োজনে মানুষ ঢাকায় গমন করছে যা হিসাবে আনা হলে এর জনসংখ্যা উল্লেখিত সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। ঢাকা মহানগরীতে একদিকে ব্যাপক সুবিধা যেমন আছে, তেমনি নানাবিধ সমস্যাও বিদ্যামান। তন্মধ্যে অন্যতম হলোÑ দুঃসহ যানজট, অলি-গলি ও প্রধান সড়কগুলোর পাশে দুর্গন্ধ ছড়ানো খোলা ডাস্টবিন, ওভারব্রিজ ও উড়াল সড়কে কুরুচিসম্পন্ন সিনেমার পোস্টার যা নাগরিক বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রকাশ্য স্থানে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের স্থান। এছাড়া অনেক সড়ক মানুষ ও যানবাহনের আধিক্যের তুলনায় সংকীর্ণ, কিন্তু সেখানকার হাটা-চলার ফুটপাথও বেদখল হয়ে অনেক হকারদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে, তারা সেখানে নানা জিনিসপত্র দিয়ে পসরা সাজিয়ে শাহেনসার মতো ব্যবসা করতে ব্যতিব্যস্ত। যেন দেশে কোন নিয়ম নেই। সকলেরই মনে রাখা আবশ্যক- ঢাকা শহর একা কারোর নয়, সবার। সমস্যা হলো, ‘এই শহরটা আমার, আমাকেই এটার যতœ নিতে হবে’, এই বোধটুকুও বর্তমানে অনেকে বিস্মৃত হয়েছেন ও দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণও সবার মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই প্রথমেই সবার মনে পরিচ্ছন্নতা, নান্দনিকতা, দায়িত্ববোধ, ও অপরের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা-চেতনা আনা খুবই জরুরি, তাতেই বিভিন্ন সড়কের পাশে আবর্জনা নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে মূত্র ত্যাগের কুঅভ্যাস, প্রধান সড়ক ব্যতিরেকে ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতা অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমসহ ‘নগর সৌন্দর্যবর্ধন অভিযান’ পরিচালনার ব্যবস্থা করা গেলে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুদের মনে নাগরিক চেতনা জাগ্রত হবে। সর্বোপরি, বহুবিধ রোগে রোগাক্রান্ত ঢাকা শহরের অসুস্থটা দূরীকরণে তার পাশে দাঁড়ানো সবারই একান্ত কর্তব্য। ঘোষগাঁও, ময়মনসিংহ থেকে
×