ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বল বিকৃত করেছেন কোহালি

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

বল বিকৃত করেছেন কোহালি

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিরাট কোহালি বনাম ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড। বিরাট কোহালি বনাম পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশাখাপত্তনমে টেস্ট যুদ্ধ জিতে উঠতে না উঠতেই নতুন বাউন্সারের সামনে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক। যেখানে এক ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ভিডিও ফুটেজ তুলে দিয়ে অভিযোগ করেছে, বিরাট নাকি রাজকোটে প্রথম টেস্টে বল বিকৃত করেছেন। যে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার পর ওয়াঘার ও পার থেকে আসতে থাকে একের পর বিস্ফোরক মন্তব্য। যেখানে আব্দুল কাদির থেকে হারুন রশিদ— সবাই দাবি তুলেছেন, বিরাটকে শাস্তি দিক আইসিসি। যেমন দেওয়া হয়েছে ফাফ দু’প্লেসিকে। মঙ্গলবারই আইসিসি জানিয়ে দিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে বল বিকৃতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন দু’প্লেসি। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের পুরো ম্যাচ ফি জরিমানা করা হলেও তৃতীয় টেস্টে খেলতে পারবেন তিনি। যে উদাহরণ সামনে তুলে প্রাক্তন পাক ক্রিকেটারদের একটা অংশ দাবি করছে, দু’প্লেসিকে যদি মিডিয়ার ফুটেজ দেখার পর দোষী ঘোষণা করা হয়, তা হলে বিরাটকে কেন করা হবে না? ঘটনা হল, আইসিসি-র নিয়মেই তা সম্ভব হচ্ছে না। wসংবাদসংস্থা জানিয়েছে, আইসিসি-র নিয়ম অনুযায়ী রাজকোট টেস্ট শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে সরকারি ভাবে অভিযোগ জমা পড়লে তা খতিয়ে দেখত আইসিসি। এ ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা শেষ হয়ে যায় ১৮ নভেম্বর। সরকারি কোনও অভিযোগ ভারত অধিনায়কের বিরুদ্ধে করা হয়নি। ফলে শাস্তিরও আর প্রশ্ন নেই। কিন্তু ঘটনা হল, শাস্তি হোক বা না হোক, বিরাটকে নিয়ে এই অভিযোগ কেন উঠল? ইংল্যান্ডের একটি ট্যাবলয়েড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংবাদপত্র গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে রাজকোট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের একটি ভিডিও পোস্ট করে। যেখানে দেখা যায়, বলটা হাতে নিয়ে বিরাট একবার মুখে আঙুল দিচ্ছেন আর তার পরে বলটা পালিশ করছেন। মুখের মধ্যে কিছু একটা আবছা ভাবে দেখা গেলেও সেটা কী বোঝা যাচ্ছে না। ট্যাবলয়েডের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, বিরাটের মুখে মিষ্টি জাতীয় কিছু ছিল। যার উপর আঙুল ঘষে তিনি বল পালিশ করেন। ঠিক যেমন দু’প্লেসি মুখের মিন্টে আঙুল ঘষে নিয়ে করেছিলেন। অভিযোগের কথা শোনার পর রীতিমতো হতবাক ভারতীয় টিম। টিম সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ রকম যে কোনও অভিযোগ উঠতে পারে, তা নিয়ে সামান্যতম ধারণাও ছিল না কারও। জানা যাচ্ছে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার দিন দশেক পরেও আইসিসি, আম্পায়ার বা ম্যাচ রেফারির তরফে কিছুই জানানো হয়নি টিমকে। শনিবার থেকে মোহালিতে শুরু তৃতীয় টেস্ট। বিরাট নিজে এ দিন লুধিয়ানায় ফ্যানদের একটি অনুষ্ঠানে যান। পরে যার ছবি টুইট করে লেখেন, ‘‘দুর্দান্ত একটা সন্ধ্যা কাটল। এই ভালবাসার জন্য লুধিয়ানাকে ধন্যবাদ। আবার দেখা হবে।’’ বল বিকৃতির অভিযোগ সামনে আসার পরেই ঝড় ওঠে সোশ্যাল মি়ডিয়ায়। বড় একটা অংশ বলতে থাকে, টেস্ট হেরে গিয়ে এ বার ইংল্যান্ডের প্রচারমাধ্যম নোংরা খেলায় নেমেছে। চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বিরাটের উপর। ট্যাবলয়েডটি অবশ্য এটা মেনে নিয়েছে, যে পরিষ্কার করে বোঝা যায়নি বিরাটের মুখে কী ছিল। দু’প্লেসির ক্ষেত্রে যেটা বোঝা গিয়েছিল। তা ছাড়া দু’প্লেসির ক্ষেত্রে অভিযোগটা টেস্ট শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই সরকারি ভাবে করা হয়েছিল। বিরাটের ক্ষেত্রে যেটা হয়নি। আইসিসি-র নিয়ম সম্পর্কে না জেনেই বিরাট নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটাররা। পাক প্রচারমাধ্যমে আব্দুল কাদির যেমন বলেছেন, ‘‘বিরাটকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত আইসিসি-র।’’ কাদিরের চাঞ্চল্যকর দাবি, বিরাটকে যদি আইসিসি শাস্তি না দেয়, তা হলে সদস্য দেশগুলোর উচিত আইসিসি- কে চিঠি দিয়ে শাস্তি দাবি করা। ‘‘পাকিস্তানি কোনও ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আইসিসি খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। পাক ক্রিকেটারদের সাসপেন্ড করে দেয়। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটারের নাম উঠলেই চুপ করে যায়,’’ বলেছেন প্রাক্তন লেগ স্পিনার। ঘটনা হল, আইসিসি চেয়ারম্যান আবার এখন এক জন ভারতীয়। তাই এ প্রশ্নটাও উঠছে, যে কাদির এবং পাকিস্তানিদের তিরের লক্ষ্য কি বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহরও? পাকিস্তানের আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার হারুন রশিদ বলছেন, দু’প্লেসির ক্ষেত্রে আম্পায়াররা শেষ পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজকে প্রমাণ হিসেবে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু বিরাটের ক্ষেত্রে এখনও চুপ আছেন। তাই রশিদের আশঙ্কা, বিরাটের হয়তো শাস্তি হবে না কারণ ‘‘আম্পায়াররা বিরাটের ক্ষেত্রে এখনও কিছু বলছেন না।’’ প্রাক্তন পিসিবি চেয়ারম্যান খালিদ মাসুদের দাবি, আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারি চুপ থাকার জন্য তাঁদেরও যেন শাস্তি দেওয়া হয়। এত দিন লড়াইটা ছিল ইংল্যান্ডের এগারো জনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবারের পর বিরাট কোহালি আবিষ্কার করলেন, তালিকায় ‘শত্রুসংখ্যা’ বেড়ে গিয়েছে। কেন শাস্তির আশঙ্কা নেই আম্পায়ার, দুই দলের ক্রিকেট বোর্ডের সিইও বা আইসিসি সিইও সরকারি ভাবে কোনও ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন। আইসিসি সিইও ছা়ড়া বাকিরা অভিযোগ করলে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করতে হবে। আইসিসি সিইও অভিযোগ করতে পারেন পাঁচ দিনের মধ্যে। রাজকোট টেস্ট শেষ হয়েছে ১৩ নভেম্বর। বিরাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার শেষ তারিখ ছিল ১৮ নভেম্বর। এর পরে নিয়মমতো অভিযোগ গ্রাহ্য হবে না। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×