ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের আরেক মুসলিম সম্প্রদায়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

চীনের আরেক মুসলিম সম্প্রদায়

ধর্মের ব্যাপারে অসহিষ্ণুতার জন্য চীনের কুখ্যাতি আছে। তিব্বতের বৌদ্ধরা, সুদূর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের মুসলমানরা এবং উপকূলীয় প্রদেশ ঝেজিয়াংয়ের খ্রীস্টানরা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের উপাসনালয়ে হামলাও হয়েছে। জিনজিয়াংয়ে সরকার তো ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সমার্থক হিসেবে দেখে। ওখানকার মেয়েদের মুখে নেকাব পরা নিষেধ। সরকারী পদে থাকা মুসলমানদের রমজান মাসে রোজা রাখলে ভাঙতে বাধ্য করা হয়। তবে ধর্মীয় নির্যাতনের এই নিরানন্দ চিত্রের একটা লক্ষণীয় ব্যতিক্রমও আছে। সেটা হলো দুই মুসলমান সম্প্রদায়। চীনে দুটি বড় মুসলমান গোষ্ঠী আছে। এক. জিনজিয়ার প্রদেশের উইঘুর সম্প্রদায় এবং দুই. পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ নিঙ্গজিয়ার হুই সম্প্রদায়। শেষোক্ত সম্প্রদায়টি অধিকার অজ্ঞাত অপরিচিত। তবে দুই সম্প্রদায়ের প্রতিটির লোকসংখ্যা ১ কোটি। হুইয়ের মুসলমানদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে। হুইদের বাস নিংজিয়া প্রদেশে। সেখানে মসজিদের সংখ্যা ১৯৫৮ সালে যেখানে ছিল ১৯০০ সেখানে তা আজ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার। প্রদেশের নানা স্থানে নতুন নতুন মসজিদও গড়ে উঠছে। হুই সম্প্রদায় অর্থনৈতিক দিক দিয়েও সফল। ইসলামোফোরিয়ায় তারা কদাচিৎ শিকার হয়। বিশ্বের খুব কম সংখ্যালঘু মুসলমানই এমন কথা বলতে পারে। কয়েক শতাব্দী আগে প্রথম দিকের জোয়ারে যে ইসলাম চীনে এসে পৌঁছেছিল হুইদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে সেই ইসলামের প্রতিফলন পাওয়া যায়। এদের অর্ধেকেরও বেশি সুন্নি ইসলামের হানাফি মজহাবের অনুসারী। এক-পঞ্চমাংশ অধিকতর গোঁড়া ওয়াহাবী ভাবধারার অনুসারী যে ভাবধারা চীনে এসেছিল ঊনবিংশ শতকে। হুইরা হলো জাতিগত সংখ্যালঘু। কয়েক শতাব্দী আগে এদের পূর্ব পুরুষরা পারস্য, মোঙ্গল দরবার, কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ধর্মপ্রচারক ও ব্যবসায়ী হিসেবে এসেছিল। কয়েক প্রজন্ম ধরে হানদের সঙ্গে আন্তঃবৈবাহিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে চেহারা ও ভাষায় তারা চৈনিক হয়ে গেছে। এরা গোটা চীনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশের বাস জিংজিয়াংয়ে। তারা চীনাদের সঙ্গে আন্তঃকরণের পথ বেছে নিয়েছে যা উইঘুর ও তিব্বতীরা নেয়নি। চীনা সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হুইদের একটা বৈশিষ্ট্য। ইতিহাসখ্যাত কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব হুই সম্প্রদায়ের যদিও খুব কম সংখ্যক চীনারাই তা জানে। যেমন জেং হে। চীনাদের কাছে ইনি কলম্বাসের সমান। ১৪শ’ সালের দিকে ইনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জিয়াংসু প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান এবং জাতিসত্তা বিষয়ক কমিশনের প্রধান হুই সম্প্রদায়ের। হানদের সঙ্গে হুইদের সম্পর্ক সব সময় ভাল যায়নি। ১৮৬০ ও ১৮৭০ এর দশকে হুইদের বিদ্রোহে ব্যাপক রক্তপাত ঘটেছিল। তবে ১৯৭৬ সালে মাওদের মৃত্যুর পর দু’পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়। এরই বদৌলতে তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সফল হয়েছে। চীনে হালাল খাদ্য উৎপাদনে তাদেরই আধিপত্য। চীনের সর্ববৃহৎ আরবী শিক্ষালয়টি একটি প্রাইভেট কলেজ। হুইরাই এটা প্রতিষ্ঠা করেছে ও আংশিক অর্থায়ন করেছে। এখানকার ছাত্রছাত্রীদের কর্পোরেটগুলোর দোভাষী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সরকার কতদূর হুইদের সহ্য করে তা এই ব্যাপারটা থেকে দেখা যাবে যে তারা সীমিত পরিসরে শরিয়া মেনে চলতে পারে যদিও চীনা আইসে তা স্বীকৃত নয়। নাজিয়াপুর মসজিদ ও স্থানীয় কাউন্টি আদালত একই সালিশী অলিস ব্যবহার করে থাকে। তবে শত শত বছরের আত্তীকরণ সত্ত্বেও হুইরা তাদের ধর্ম ও সত্তা কোনটাই হারায়নি। তারা একটা জটিল ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। চলমান ডেস্ক সূত্র: দি ইকোনমিস্ট
×