ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাহিদুল আলম জয়

ফুটবলার হয়ে আমি গর্বিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

ফুটবলার হয়ে আমি গর্বিত

বাংলাদেশের উঠতি ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ নাম ওয়াহেদ আহমেদ। পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুতেই ঢাকা মোহামেডানের হয়ে কোটি টাকার সুপার কাপে স্বপ্নের পারফরমেন্স প্রদর্শন করেন। সেই থেকে শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি পুণ্যভূমি সিলেটের এই তরুণকে। বর্তমানে খেলছেন আরেক জনপ্রিয় ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেডে। শুরুর মতো ছন্দে না থাকলেও চেনা রূপে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছেন কার্যকরী এই স্ট্রাইকার। চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলেই ফিরতে চান গোলের ধারায়। ময়মনসিংহে বিজেএমসির বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষ দিকে গোল করে আবাহনীকে জিতিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ২০১২-১৩ মৌসুম ওয়াহেদের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। বিভিন্ন ক্লাবের দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠিত ফুটবলারকে পেছনে ফেলে হয়ে যান সুপার হিরো। কোটি টাকার সুপার কাপে হন সর্বোচ্চ গোলদাতা। সবচেয়ে বড় চমক ছিল ফাইনালে। শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে তার করা একমাত্র গোলেই কোটি টাকার ট্রফি জেতে ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো শিবির। ওয়াহেদের তারকাখ্যাতির সেই শুরু অথচ অবাক ব্যাপার, তাঁর ফুটবলার হওয়ার কথা ছিল না। শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ক্রিকেট খেলে। অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়ত ক্রিকেটারই হবেন ওয়াহেদ। কিন্তু ২০০৩ সালে আচমকা গতিপথ বদলে যায় এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে। ওই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার সুবাদে নজরে পড়ে যান অনেকের। এরপর ওয়াহেদ ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফুটবলে। সুযোগ হয়ে যায় সিলেট অনূর্ধ-১৬ দলে। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেকের ধারণা, ক্রিকেটটা ছেড়ে দিয়ে হয়ত আপসোস করেন ওয়াহেদ! কিন্তু না, জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ফুটবলে আসাটা তার সঠিক সিদ্ধান্ত। পারিবারিকভাবেই ফুটবলের সঙ্গে সখ্য। ওয়াহেদের বাবাসহ পরিবারের প্রায় সবাই ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঢাকা আবাহনীর এই স্ট্রাইকার বলেন, ‘ক্রিকেটও ভাল খেলতাম, তবে ফুটবলের প্রতি টানটা বেশি ছিল। ফুটবলকে বেছে নেয়া আমার সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি ভুল করিনি।’ ক্রিকেটার হলে হয়ত নাম, যশ, খ্যাতি, অর্থ বেশি হতো। তবে এতে বিন্দু পরিমাণ আপসোস নেই ওয়াহেদের, ‘আমার কোনো আপসোস নেই। ফুটবলার হতে পেরে আমি হ্যাপি, গর্বিত। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি এটা অনেক বড় পাওয়া। দেশের জন্য তো বটেই, সিলেটবাসীকে দিতে চাই সাফল্য।’ বড় ক্লাবে শুরুটা জ্বলজ্বলে, তবে এখন কেমন যেন ফ্যাকাশে। তবে দ্রুত কামব্যাক করার স্বপ্ন ওয়াহেদের, ‘আমি কামব্যাক করার চেষ্টা করছি। পরিশ্রম করে চলেছি ছন্দে ফিরতে। হয়ত দ্রুতই চেনা রূপে ফিরব। পরের ম্যাচগুলোতে গোল করতে চাই।’ আবাহনীর হয়ে এখনও ট্রফি জিততে পারেন নি। বিপিএল জিততে তাই মুখিয়ে। এ প্রসঙ্গে ওয়াহেদ জানান, ‘সবাই পরিশ্রম করছে, চাওয়া একটাই চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমরা বেশ কিছু পয়েন্ট নষ্ট করেছি, আর করতে চাই না। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে, সবাই সিরিয়াস নিজের শতভাগ দিতে।’ মোহামেডানের হয়ে মাঠ মাতানোর পর এখন ঠিকানা আবাহনীতে। ভালবাসা কার প্রতি বেশি? ওয়াহেদ বলেন, ‘মোহামেডানের হয়ে সুপারকাপসহ তিনটি ট্রফি জিতেছি। এজন্য টানটা একটু বেশি। আবাহনীকে এখনও কিছুই দিতে পারিনি। এখানেও সাফল্য চাই আমি। দুটি ক্লাবই আমার ভালবাসার। মোহামেডানকে যেমন ভালবাসি, তেমনি আবাহনী এখন আমার ধ্যানজ্ঞান।’ ওয়াহেদের আবাহনীতে আসা ভালভাবে নিতে পারেনি অনেক মোহামেডানপ্রেমী। তিনি জানান, ফেসবুকে অনেকে আজেবাজে কথা লিখে, গালি দেয়। এতে অবশ্য মন খারাপ করেন না ওয়াহেদ। বিষয়টিকে ভক্তদের ভালবাসার নমুনা হিসেবেই মনে করেন। ক্লাব ফুটবলের ওয়াহেদ জাতীয় দলের জার্সিতে বরাবরই অনুজ্জ্বল। এখনও লাল-সবুজের জার্সি গায়ে গোল করতে পারেননি। নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে ওয়াহেদ জানান, জাতীয় দলের হয়েও ভাল করতে চান তিনি। সিলেটে ফুটবল মানেই দর্শক। যে কোন ঘরোয়া আসরেও স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ হতে দেখা গেছে। অথচ এবার বিপিএলে চরম দর্শকখরা দেখা গেছে সিলেটের প্রথম পর্বে। বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না ওয়াহেদ। নিদারুণ কষ্ট পাওয়া সিলেটের এই ফুটবলার বলেন, ‘ঠিকমতো প্রচারণার অভাবে দর্শক হচ্ছে না। তাছাড়া খেলা রাতে হওয়া একটি কারণ। ফুটবল বেশি দেখে গ্রামের মানুষ। তাদেরকে সারাদিনের জন্য শহরে আসতে হয়। রাতে হলে কীভাবে দেখবে তারা, কোথায় থাকবে।’ সিলেটের দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ওয়াহেদ বলেন, ‘এখানকার দর্শক অনেক ভাল। যে ভাল করে তাকেই সাপোর্ট করে। আমরা যারা জাতীয় দল বা বড় বড় ক্লাবে খেলি তারা সিলেটে খেলতে আসলে দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যখন গ্যালারি থেকে আমাদের নাম ধরে চিৎকার করে তখন কি যে ভাল লাগে, গর্ব হয়। আমি সবাইকে, সিলেটবাসীকে মাঠে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
×