ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী মাহমুদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী মাহমুদুল্লাহ

শুধুমাত্র নেতৃত্ব গুণ দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে একতাবদ্ধ হওয়া যায়, ছিনিয়ে আনা যায় সাফল্য। সেটার জ্বলজ্বলে উদাহরণ এখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ আসরে নড়বড়ে একটি দল খুলনা টাইটান্সকে নিজের নেতৃত্ব গুণ ও পারফর্মেন্স দিয়ে একক শীর্ষস্থান এনে দিয়েছেন তিনি। গত আসরেও সাদামাটা দল গড়েছিল বরিশাল বুলসকে। সেই দলকে একইভাবে দারুণ নেতৃত্বে রানার্সআপ করেছিলেন। এবার নবাগত খুলনা টাইটান্সকে নিয়ে কারও মনে হয়নি তারা ফেবারিট। কিন্তু একের পর এক চমক দেখিয়ে গেছে দলটি। যখন বারেবারেই অভাবনীয় কিছু ঘটতে থাকে তখন অবশ্য সেটাকে বিস্ময়কর বলা যায় না। এখন খুলনার সাফল্যকেও তাই চমক বলা যাচ্ছে না আর। অচিন্তনীয় সাফল্য আনার পেছনে কৃতিত্বের পুরোটাই দেয়া যায় মাহমুদুল্লাহকে। বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব আর নিজের পারফর্মেন্সে পরিষ্কারভাবেই তিনি দলকে দুটি অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছেন। একেবারে গোছানো দলে পরিণত হয়েছে খুলনা। নতুন দলের অধিনায়ক হিসেবেও তাই সাফল্য ধরা দিয়েছে তাকে। ঢাকায় প্রথম পর্বে একটি পরাজয়ই শুধু কিছুটা কালির দাগ দিয়েছে। তবে সেই পরাজয়ের পর টানা চার ম্যাচ জিতে চট্টগ্রামে বিপিএলের দ্বিতীয় পর্বটা শতভাগ সাফল্যে শেষ করেছে খুলনা টাইটান্স। দলের প্রয়োজনে অনেক ভূমিকাতেই দেখা গেছে মাহমুদুল্লাহকে। জাতীয় দলে ওয়ানডেতে চার নম্বরে জায়গাটা নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। তবে ৫, ৬ ও ৭ এমনকি ৩ নম্বরেও ব্যাট হাতে নেমেছেন। টেস্ট ক্রিকেট আসলে পাঁচ নম্বরে আর টি-২০ ক্রিকেটে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করেন। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলের পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ম্যানেজমেন্ট যেভাবে চেয়েছে ব্যাট করেছেন সবসময়। কখনও ঠা-া মস্তিষ্কে ধীর-স্থির থেকেছেন, আবার কখনও ব্যাট চালিয়েছেন উচ্চ মেজাজে। টি-২০ ক্রিকেটে বিধ্বংসী মনোভাব থাকাটাই জরুরী। টি-২০ ক্রিকেট মানেই ধুমধারাক্কা ব্যাটিং। এবার বিপিএল টি-২০ শুরুর আগে মাহমুদুল্লাহ দাবি জানিয়েছিলেন দলের প্রয়োজনে তিনি আরও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে চান। গত আসরে বরিশাল বুলসের অধিনায়কত্ব করেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ আসরে। দারুণ নেতৃত্ব গুণ দিয়ে দলকে রানার্সআপ করিয়েছেন। এবার নতুন দল খুলনা টাইটান্সের অধিনায়কত্ব মাহমুদুল্লাহর কাঁধে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এরকম দলকে অধিনায়কত্ব করতে উপভোগ করি। ঢাকা, চিটাগাং, কুমিল্লা দলে বড় বড় নাম আছে। আরও বড় বড় খেলোয়াড় আছে। আমি গত বছরই এটা অনুভব করেছি যে নির্দিষ্ট দিনে যদি আপনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেন কেউ আপনাকে হারাতে পারবে না। আমার এটাই লক্ষ্য থাকে। চেষ্টা করব এভাবেই যেন টুর্নামেন্টে এগোতে পারি।’ শুধুমাত্র ঢাকায় প্রথম পর্বের একটা দিনই বাজে গেছে মাহমুদুল্লাহর। এরপর খুলনাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছেন, টানা চারটি জয় তুলে নিয়েছে নবাগত দলটি। পৌঁছে গেছে এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। চলতি বছর নতুন করে মাহমুদুল্লাহকে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। মূলত দলের প্রয়োজনে ধীরস্থির ভঙ্গিতে শীতল মনোভাবেই ব্যাট চালিয়েছেন তিনি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে। কিন্তু চলতি বছর টি-২০ এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে সেই খোলস ছেড়ে রুদ্রমূর্তি নিয়েছেন। ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন মাহমুদুল্লাহ। আক্রমণাত্মক মেজাজটা অবশ্য এবার আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘দল যেভাবে চায়, দলের সমন্বয় যেভাবে চায়, অধিনায়ক হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব থাকবে। দায়িত্ব অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব। দলের যদি চাহিদা থাকে আরও আক্রমণাত্মক খেলতে হবে তাহলে প্রয়োজনে আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করব। যদি দলের চাহিদা থাকে দেখেশুনে খেলা তাহলে সেভাবেই খেলব।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করার সুযোগ হয়নি মাহমুদুল্লাহর। ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ে সফরের পরই মুশফিকুর রহীম বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব পান। তার ডেপুটি হিসেবে মাহমুদুল্লাহ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই দলকে নেতৃত্ব দেন এবং দলের জন্য সফলতাও এনেছেন। নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘চ্যাম্পিয়নশিপের দাবিদার প্রায় সবগুলো দলই। সাতটা দলই এ লক্ষ্যেই নামবে। তবে ভাল ক্রিকেট খেলাটাই মূল লক্ষ্য। কম তারকাপূর্ণ দলের নেতৃত্ব দেয়া একটা ভাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করা তখনই সহজ হয় যখন খেলোয়াড়রা পারফর্ম করে। এই বিশ্বাসটা যদি আপনি খেলোয়াড়দের দিতে পারেন, স্বাধীনতা দেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ জিনিসটা আমি সবসময় বিশ্বাস করি। আমি চাই আমার ক্রিকেটাররা সবসময় এটা বিশ্বাস করেই খেলুক।’ এভাবেই নিজ দলের ড্রেসিং রুমের পরিবেশটা হাসিখুশি রাখতে চান মাহমুদুল্লাহ। সেই সঙ্গে নিজের নৈপুণ্য দিয়ে দারুণ কিছু উপহার দিতে চান দলকে। কথার সঙ্গে কাজের সঙ্গতি দেখা গেছে বিপিএল মাঠে গড়ানোর পরই। এবার বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয় দিয়ে শুরু করে খুলনা। সেই ম্যাচে শেষ ওভারে প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংসের জিততে প্রয়োজন ছিল ৬ রানের। ওই ওভারটা অধিনায়ক হয়েও নিজের কাঁধেই নিয়েছেন বোলিংয়ের আর ম্যাজিক দেখিয়েছেন দুই উইকেট তুলে নিয়ে মাত্র ২ রান দিয়ে। অবশ্য পরের ম্যাচেই মাত্র ৪৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে বিপিএল ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংসের লজ্জার সঙ্গে সঙ্গে ৯ উইকেটের নির্মম পরাজয় বরণ করে। কিন্তু মাহমুদুল্লাহই আবার টেনে তুলেছেন দলকে সেই ধ্বংস থেকে। পরের ম্যাচেই চিটাগাং ভাইকিংসের বিরুদ্ধে ৪ রানের অভাবনীয় আরেকটি জয়! এবারও শেষ ওভারে মাহমুদুল্লাহর বোলিং ম্যাজিক। ৭ রান প্রয়োজন ছিল চিটাগাংয়ের, কিন্তু মাহমুদুল্লাহ ৩ উইকেট তুলে নেয়ার পাশাপাশি রান দেন মাত্র ২! তারপর ধীরে ধীরে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত খুলনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়ের ব্যবধানটা সহজ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১৩, ঢাকা ডায়নামাইটসের বিরুদ্ধে ৯ রান ও বরিশাল বুলসের বিরুদ্ধে ২২ রানে জিতেছে মাহমুদুল্লাহর দল। মূলত মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিংয়ে সবার দৃষ্টি থাকলেও তিনি প্রথমদিকে তেমন রান পাননি। তবে সর্বশেষ দুই ম্যাচে স্বরূপে ফিরেছেন। ডায়নামাইটসের বিরুদ্ধে চলতি আসরে নিজের প্রথম অর্ধশতক হাঁকান তিনি। ৪৪ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দেন। সর্বশেষ ম্যাচেও ২৬ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। সবমিলিয়ে ৬ ম্যাচে ২৬.১৬ গড়ে ১৫৭ রান করেছেন। আর বল হাতে ৬ ম্যাচে ১২.২৮ গড় ও ৭.৮১ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৭ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তার কাছাকাছি শুধু আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি। এ আফগান তারকা বল হাতে ১১ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৪৮.৬৬ গড়ে ১৪৬ রান করেছেন। তবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের পাশাপাশি দলকে সংঘবদ্ধ রেখে দারুণ নেতৃত্বে একের পর এক সাফল্য এনে দেয়ায় এবার বিপিএলে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দাবিতে এই মুহূর্তে সবাইকে ছাড়িয়ে মাহমুদুল্লাহ।
×