ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষে রংপুর রাইডার্স

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষে রংপুর রাইডার্স

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খুলনা টাইটান্স জিতলে শীর্ষস্থান অক্ষুণœ থাকত। আর খুলনাকে হারালে রংপুর রাইডার্স শীর্ষে উঠত। এমন সমীকরণকে সামনে রেখে দুই দল মঙ্গলবার পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করতে নামে। তাতে বাজিমাত করে রংপুর। খুলনাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল রংপুর। ম্যাচে টস জিতে খুলনা আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। ভাগ্য সহায় থাকা খুলনার ভাগ্যে এবার রংপুর আঘাত হানে। টানা চার ম্যাচে জিতে রংপুরের কাছে এসে ধরাশায়ী হয় খুলনা। ২ উইকেট করে নেয়া স্পিনার আরাফাত সানি ও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি এবং পেসার রুবেল হোসেনের তোপে পড়ে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রানের বেশি করতে পারেনি খুলনা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩২ রান করে তাইবুর রহমান। জবাবে আফগানিস্তানের মারমুখী ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদের ৩৭, পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির ২৬ ও মোহাম্মদ মিঠুনের অপরাজিত ৪৯ রানে জিতে যায় রংপুর। ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯ ওভারে ১২৯ রান করে জয় পায় রংপুর। এ ম্যাচটিতে খেলতে নামার আগে ৬টি ম্যাচ খেলেছিল খুলনা। মাত্র ১টিতে হেরেছিল। সেই একটি ম্যাচে হার হয় রংপুরের বিপক্ষেই। প্রথম লেগে ৪৪ রানেই রংপুরের বিপক্ষে গুটিয়ে গিয়েছিল খুলনা। হারও হয়েছিল বড় ব্যবধানে। এবারও হার হলো। ফিরতি লেগেও রংপুরের কাছে পাত্তা পায়নি খুলনা। রংপুর রাইডার্সও দুর্দান্ত খেলছে। এর আগে ৫ ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছিল। এবার খুলনাকে হারিয়ে ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতেই জয় তুলে নিল। এই জয় রংপুরকে পয়েন্টের শীর্ষেও উঠিয়ে দিল। খুলনার সমান ১০ পয়েন্ট পেয়েছে রংপুর। কিন্তু রানরেটে এগিয়ে থেকে খুলনাকে পেছনে ফেলল রংপুর। এত অল্প রান করে কী আর ম্যাচ জেতা যায়। ভাগ্য কী আর সবসময়ই সহায় হয়। রংপুর দলটিও তো শক্তিশালী। ব্যাটিং-বোলিংয়ে ব্যালান্স দল। সেই প্রমাণ আবারও মিলল। খুলনার করা রান অতিক্রম করতে তাই ৬ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় রংপুর। সৌম্য সরকার অবশ্য যথারীতি ব্যর্থ হয়েছেন। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আফগান হার্টহিটার মোহাম্মদ শাহজাদ ও মোহাম্মদ মিঠুন মিলে যে ৭৪ রানের জুটি গড়েছেন, সেখানে ম্যাচ জয় সহজ হয়ে যায়। ৮৭ রানের সময় শাহজাদ (৩৭) আউট হওয়ার পর তৃতীয় উইকেটে মিঠুন ও আফ্রিদি মিলেও ৩৫ রানের জুটি গড়েন। আফ্রিদি (২৬) যখন আউট হন, তখন রংপুরের জিততে ৪ রান লাগে। ১৩ বল হাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারেই জিতে যায় রংপুর। মিঠুন অপরাজিত ৪৯ রান করেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৯তম ওভার করতে আসেন। কোন চমক যদি দেখানো যায়। কিন্তু কিছুই করতে পারলেন না। এক ওভারেই ৭ রান দিয়ে দিলেন। সবসময় কী আর চমক হয়! এবার আর হয়নি। রংপুরের বিপক্ষে তাই আবারও হারল খুলনা। খুলনার ব্যাটিং বরাবরই যেন দুর্দশাগ্রস্ত। দুটি ম্যাচে শুধু দেড় শ’ রানের বেশি করতে পেরেছে দলটি। কিন্তু রংপুর দুর্দান্ত দল। এ দলটির বিপক্ষে দেড় শ’ রান করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যেতে পারত। হয়ত জয়ও তুলে নেয়া যেত। কিন্তু ১২৬ টার্গেট রংপুরের কাছে সহজ টার্গেটই। সেই টার্গেট খুলনার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার জন্যই পেয়েছে রংপুর। ৩৮ রানেই গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতে, নয়ত বল হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন। ব্যাট হাতে ভাল করলে দলের স্কোরবোর্ডে মজবুত হয়। নয়ত না। এবারও তাই দেখার মিলল। শুরুতেই যে ৩ উইকেট পড়ল, এর মধ্যে মাহমুদুল্লাহও আউট হলেন। এরপর চতুর্থ উইকেটে ইংল্যান্ডের রিকি ওয়েসেলস ও তাইবুর রহমান যদি ৫৬ রানের জুটি না গড়তেন, তাহলে ১০০ রানও হয়ত করতে পারত না খুলনা। ৯৪ রানে যেই ওয়েসেলস আউট হয়ে যান, এরপর ১২৫ রানের বেশি করতেই পারেনি খুলনা। আরও ৩টি উইকেটও হারিয়েছে দলটি। সেই সঙ্গে ম্যাচ শেষে হারই হয়েছে নিয়তি। এ হারে শীর্ষস্থানও হারিয়েছে খুলনা। খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষস্থানে উঠে গেছে রংপুর। দুই দলেরই চট্টগ্রাম পর্ব দারুণ কেটেছে। এ পর্বে দুই দলই তিনটি করে ম্যাচ খেলেছে। ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারানোর পর বরিশাল বুলসকে হারিয়ে ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছিল খুলনা। চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রথম লেগের মতো ফিরতি লেগেও রংপুরের কাছে হেরেছে। তবে খুলনার চেয়েও চট্টগ্রাম পর্বে রংপুর ভালো করেছে। তিন ম্যাচের তিনটিই জিতে নিয়েছে। বরিশাল বুলস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে খুলনাকে হারিয়ে দিল। আর তাতে করে শীর্ষে থেকেই ঢাকা পর্বে খেলতে নামবে রংপুর। টুর্নামেন্টে ৭টি দল খেলছে। এর মধ্যে ঢাকা ডায়নামাইটসের নেতৃত্বে সাকিব আল হাসান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেতৃত্বে মাশরাফি বিন মর্তুজা, বরিশাল বুলসের নেতৃত্বে মুশফিকুর রহীম, চিটাগাং ভাইকিংসের নেতৃত্বে তামিম ইকবাল, খুলনা টাইটান্সের নেতৃত্বে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও রাজশাহী কিংসের নেতৃত্বে ড্যারেন সামি আছেন। দলগুলোর নেতৃত্বে তারকা ক্রিকেটাররাই রয়েছেন। শুধু রংপুর রাইডার্সে তারকাখ্যাতিহীন নাঈম ইসলাম আছেন। তিনিই মাতিয়ে দিচ্ছেন। নেতৃত্বগুণে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষেও উঠে গেল রংপুর। স্কোর ॥ খুলনা ইনিংস ১২৫/৭; ২০ ওভার (ফ্লেচার ৮, মজিদ ১০, ওয়েসেলস ২৭, মাহমুদুল্লাহ ১১, তাইবুর ৩২, আরিফুল ২২, হাওয়েল ৩, কাপালী ৩*; আরাফাত ২/১৬, আফ্রিদি ২/৩০)। রংপুর ইনিংস ১২৯/৩; ১৯ ওভার (শাহজাদ ৩৭, সৌম্য ৩, মিঠুন ৪৯*, আফ্রিদি ২৬, ডওসন ৫*; মাহমুদুল্লাহ ১/১৪)। ফল ॥ রংপুর রাইডার্স ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ শহীদ আফ্রিদি (রংপুর রাইডার্স)।
×