ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে দুদক চেয়ারম্যান

সরকারী কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাই দুর্নীতির মূল কারণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

সরকারী কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাই দুর্নীতির মূল কারণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মকর্তাদের ডিসক্রিয়েশনারি পাওয়ার বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাই দুর্নীতির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একই সাথে সহায়ক জামানত না রেখেই বিশ্বাসের উপর ঋণ প্রদান করা ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেমিনার কক্ষে করাপশান এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসেপচুয়াল রিভিউ এ্যান্ড ইমপিরিকেল এসেসমেন্ট শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যাালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান ও ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বক্তব্য রাখেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারী কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া বা সীমিত করা উচিত। রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বপ্ন দেখাবেন আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। যদি সরকারী কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে তবে রাজনৈতিক নেতাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। সরকারী কর্মকর্তাদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার কথা, কিন্তু তারা প্রভু হতে বেশি পছন্দ করেন। অনেকই রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়েছেন। কেউ কেউ চাকরি পাওয়ার পরই দোকান খুলে বসেছেন। জনগণকে খরিদ্দার বিবেচনা করে অর্থের বিনিময়ে সেবা দিতে চান আর বেতনটাকে চাকরির প্রাপ্তি মনে করেন। এ অবস্থার জন্য সরকারী পদ্ধতি দায়ী। সরকারী কার্যক্রমের পদ্ধতি পরিবর্তন জরুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ভয় দিয়ে মানুষের হৃদয়কে যেমন জয় করা যায় না, তেমনি দুর্নীতিকেও দমন করা যায় না। দুর্নীতিকে দমন করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তাদের হৃদয় জয় করতে হবে। ব্যাংক ঋণ সম্পর্কে দুর্নীতির বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি সেক্টরেই দুর্নীতি রয়েছে। ব্যাংক থেকে শুধু বিশ্বাসের ওপর সহায়ক জামানত না রেখেই ঋণ দেয়া হলো অথবা নেয়া হলো। তারপর যথারীতি যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হলো তা-না করে অন্য নামে গাড়ি-বাড়ি তৈরি করা হলো। ঋণটি কু-ঋণে পরিণত হলো। অর্থঋণ আদালতে মামলা হলো। এক সময় ব্যাংকের ব্যালেন্সশীট থেকে ঐ ঋণ উধাও হয়ে গেল। আদালতে মামলা চলতে থাকল। একসময় ঋণটি অবলোপন করা হলো। এ প্রক্রিয়া কী দুর্নীতি নয়? এভাবে আমি বলতে থাকলে অজস্র দুর্নীতির ঘটনা বলতে পারব। তাই আমি বলব নীতি বহির্ভূত অথবা বিবেক বিবর্জিত প্রতিটি কাজই দুর্নীতি। তিনি বলেন, মূল্যবোধহীন উন্নয়ন অর্থহীন। দুর্নীতিই হচ্ছে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। তাই বিশ্বের বোদ্ধারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রায় (এসডিজি) এবার শান্তি, বিচার, ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকা-ের কথা বলেছেন। মূলত আমাদের প্রয়োজন জ্ঞানসমৃদ্ধ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদের। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮৫ লাখ শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ করে কিছু কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কী হচ্ছে তা আমাদের বলতে হবে। কারণ এ সকল প্রতিষ্ঠানই জনসম্পদ তৈরির কারখানা। আমাদের দেশে বিদ্যালয়ে ভবন আছে, শ্রেণীকক্ষ আছে, খেলার মাঠ আছে, শিক্ষা উপকরণ আছে, শিক্ষক আছেন, ছাত্র-ছাত্রী আছে কিন্তু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা আছে কি? সে প্রশ্ন অনেকের মতো আমার মনেও জেগেছে। অনেকেই বলেন, শিক্ষা নেই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, শিক্ষালয়ে জনসম্পদ তৈরি হবে নাকি জনআপদ তৈরি হবে? রাজনীতিবিদদের সম্পদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমার আহ্বান-আইনের প্রয়োগ নয়, আমরা সবাই আইন মান্য করি। পদ্ধতির উন্নয়ন করি এবং তা মান্য করি। তাহলে দুর্নীতির প্রকোপ কমে আসবে। আমরা যদি দুর্নীতির প্রকোপ কমাতে না পারি তা হলে বর্তমান প্রজন্ম কিংবা পরবর্তী প্রজন্ম কেউই আমাদের ক্ষমা করবে না। সেমিনারে অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পায়। ফলে উৎপাদন, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং আইনের শাসন নিম্নগামী হয়।
×