ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন

বিদ্যুত সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ সম্প্রসারণ, সংস্কারের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

বিদ্যুত সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ সম্প্রসারণ, সংস্কারের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যে সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ, ক্ষমতাবর্ধন এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য তিনটি বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ৭টিসহ মোট ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের সভায় এসব প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হবে প্রায় ৮ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে প্রায় ৫৮৫ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে প্রায় ১৩ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। সভায় ১৩ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ‘পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা এখন যে পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করি, তা যদি ঠিকমত সঞ্চালন করতে পারি, তাহলে বিদ্যুতের অনেক অপচয় ও সিস্টেম লস কমে যাবে। তাছাড়া এখন প্রত্যেক গ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপিত হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুত সঞ্চালনের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এ লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ৪০০ কেভি নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ৪০০ কেভি বিদ্যমান সাবস্টেশন সম্প্রসারণ এবং ১৩২/৩৩ কেভির ৫টি সাবস্টেশন সংস্কার করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ৩ হাজার ৭২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বাকি ৯ হাজার ৭০৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা চীন সরকারের কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে বিদ্যুত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্প ছাড়াও আজ একনেক সভায় গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন ও পুনর্বাসনের জন্য আরও দু’টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এই দু’টি প্রকল্প হলো-বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোট সাড়ে নয় লাখ নতুন গ্রাহক বিদ্যুত সংযোগ পাবেন। প্রকল্প দুটি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একই এলাকায় যেন পিডিবি এবং আরইবির সংযোগ না থাকে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একই এলাকায় পিডিবি ও আরইবির সংযোগ থাকলে তাতে প্রতিষ্ঠান দু’টির মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, এই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারাদেশে গ্রামীণ এলাকায় সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিদ্যমান বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে। একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। গ্যাস ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি এক্সপানশন-আশুগঞ্জ টু বাখরাবাদ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এ প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্টিলের দাম কম থাকায় যত গ্যাস লাইন তৈরি সংক্রান্ত প্রকল্প রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, এ সময় কম দামে পাইপ কেনার সুযোগ রয়েছে। সভায় মুরাদপুর ২ নং গেট ও জিইসি জংশন ফ্লাইওভার নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- ঢাকার গুলশান, ধানম-ি ও মোহাম্মদপুরে ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। টঙ্গী-কালিগঞ্জ-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা আঞ্চলিক মহাসড়কের (আর০৩০১) শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু হতে পাঁচদোনা পর্যন্ত অংশ জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (১ম পর্যায়), এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
×