ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের রুল

সাকার ছেলে ও স্ত্রীর খালাসের রায় কেন বাতিল হবে না?

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

সাকার ছেলে ও স্ত্রীর খালাসের রায় কেন বাতিল হবে না?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে খালাসের রায় বাতিল করে কেন তাদের সাজা দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশ পাওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে সাকার স্ত্রী ও পুত্রকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। আবেদনকারীর পক্ষে আদালতে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোঃ সাজ্জাদ আলী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম জহিরুল হক। তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ শহিদুল ইসলাম খান। বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের খসড়া ফাঁসের মামলার রায় দেন। রায়ে সাকার স্ত্রী ও ছেলেকে খালাস দিয়ে তার আইনজীবীসহ পাঁচজনকে কারাদ-ের রায় ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম। সাজপ্রাপ্তদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামকে ১০ বছরের কারাদন্ড, সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও ছয় মাসের সাজা ভোগ করতে হবে। আর সাকার ম্যানেজার মাহবুবুল, আইনজীবী ফখরুলের সহকারী মেহেদী হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী ও ফারুক হোসেনকে সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তা না দিলে আরও এক মাস জেলে কাটাতে হবে তাদের। ওই সময় জামিনে থাকা ফারহাত কাদের আদালতে উপস্থিত থাকলেও তার ছেলে হুম্মামকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকেদের বলেন, “আদালত আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলেছে।” আদেশের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে সাকাপতœী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে আত্মসমর্পণ করতে এবং বিচারিক আদালতকে তাদের জামিন দিতেও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর রায় ফাঁসের এই মামলায় সাত বছরের কারাদ-প্রাপ্ত অন্যতম আসামি তার ম্যানেজার মাহবুবুল আহসান বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ৬ নবেম্বর হাইকোর্টে আপীল করেন। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মত্যুদ- বহাল থাকায় গতবছর ২২ নবেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। ওই রায়ের দিন সকালেই তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা রায়ের ‘খসড়া কপি’ও সংবাদকর্মীদেরও দেখান। তারা আদালতের রায় নিয়ে কটাক্ষও করেন। রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। পরে ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এর আগে তৎকালীন রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায়ের খসড়া কপির অংশ বিশেষ কোন না কোনভাবে ‘লিকড’ (ফাঁস) হতে পারে। তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ দুষ্ট চক্র যারা ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচারিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় এবং যারা এই অপকর্মের সুবিধাভোগী তারাই এটি করেছে বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করে। আশা করছি সত্য বেরিয়ে আসবে। অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার পর ২০১৪ সালের ২৮ অগাস্ট ডিবির পরিদর্শক মোঃ শাহজাহান এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যাতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়। সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার শুরু হয়, সাক্ষ্য শুরু হয় ২৮ মার্চ। তদন্তের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবীর সহকারী মেহেদী বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের খসড়ার অংশবিশেষ বের করেন। ওই অংশটিই রায়ের দিন আদালতে সাংবাদিকদের দেখানো হয়। এর আগে ১৪ ও ২৮ আগস্ট দুই দফা তারিখ রাখা হলেও লেখা শেষ না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার রায় পিছিয়ে দেন বিচারক। অবশেষে রায় ঘোষণা করা হয় ১৫ সেপ্টেম্বর।
×