স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে পাঁচ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দশ কেজি বিস্ফোরক, জিহাদী বইপুস্তকসহ জঙ্গীবাদের নানা আলামত। ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতারকৃত তিনজন নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) এবং র্যাবের হাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতারকৃত দুজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। সোমবার রাতে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। অভিযানে গ্রেফতার হয় রাশেদুর রহমান ওরফে সুমন (২৪), শাহিদুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৩) ও বাবু হাওলাদার ওরফে হোসেন (২৮)। তাদের কাছ থেকে দশ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করত। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বোমা তৈরির জন্য মজুদ করেছিল। ডাকাতি থেকে সংগৃহীত অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্য বিক্রির টাকা সংগঠনের কাজে ব্যয় করত তারা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে আরও তথ্য পেতে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।
অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া দুটোর দিকে র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চিটাগাং রোডে অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেফতার হয় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য মোঃ আব্বাস আলী (২৭), পিতা- মোঃ ইদ্রিস আলী, গ্রাম- ছনকান্দা, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ ও মোঃ সাব্বির হোসেন ওরফে সাজু (২২), পিতা- মোঃ সাহেব আলী, গ্রাম- ধুমেরকুঠি, হারাগাছ পৌরসভা, থানা- কাউনিয়া, জেলা- রংপুর। তাদের কাছ থেকে জিহাদী বইপুস্তক, চাপাতি ও ছুরি উদ্ধার হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আব্বাস আলী ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের নিজ গ্রামে একটি ঘরোয়া মাহফিলে কারাবন্দী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি মাওলানা জসীমুদ্দিন রাহমানীর বয়ান শুনে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে গাজীপুর জেলার সাইনবোর্ডের হাজীর পুকুর এলাকায় বসবাস করত। সেখানে ফিরোজ ও সেলিম নামে দুজনের সঙ্গে জিহাদী বইপত্র লেনদেনের সূত্র ধরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয়। পরবর্তীতে তারা রাহমানীর সঙ্গে অনেকবার সাক্ষাত করেছে। আব্বাস জঙ্গী সংগঠনটির ঢাকা বিভাগের অন্যতম সমন্বয়কদের একজন ছিল। সে অনেককে জঙ্গী সংগঠনটির সিøপার সেলের সঙ্গে যুক্ত করে। ফেসবুকে তারা ৭-৮ জনের গ্রুপ তৈরি করে যোগাযোগ রাখত।
অপরজন সাব্বির হোসেন সাজু বেশকিছু ফেসবুক আইডির এ্যাডমিন হিসেবে নিযুক্ত ছিল। অপারেশনাল ও গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজের জন্য সাব্বির প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রুপের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করত। সাব্বির প্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শী। তাদের সহযোগী হিসেবে রাশেদুল ইসলাম স্বপন, কামাল, শহীদ, হুজাইফা, আব্দুল আজিজ, রাফিন, আব্দুল হাই ও আদনানসহ আরও অনেকের নাম জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রধান লক্ষ্য ছিল গাজীপুরের কাশিমপুর কারগার থেকে রাহমানীকে মুক্ত করা। এজন্য তারা প্রয়োজনে কারাগারে হামলা চালাতেও প্রস্তুত ছিল। তারা হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এছাড়াও তাদের আলোচিত ব্লগার এবং তাদের ভাষায় কথিত নাস্তিকদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল। রাহমানীর পাশাপাশি তামিম আল আদনানি নামে একজনের নাম প্রকাশ পেয়েছে। তামিম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে। তামিম আল আদনানি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় রয়েছে। সেখান থেকেই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।