ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইভীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন শামীম ওসমান- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত

নাসিক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

নাসিক নির্বাচন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনের মাঠে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নাসিকের বর্তমান মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীকে ফের মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রথমদিকে দোটানায় থাকলেও মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। দলীয় প্রার্থী আইভীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীসহ জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে মঙ্গলবার রাতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিএনপিও রাতে বৈঠক করে নির্বাচনী লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণ করেছে। এক কথায়, নাসিক নির্বাচনকে উভয় দলই জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হিসেবেই নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকার প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী হলেও এ নির্বাচন ওসমান পরিবারের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। নাসিক নির্বাচনে আইভী বিজয়ী হলে তা শামীম ওসমানকে যেমন ক্রেডিট দেয়া হবে, আবার ফল বিপর্যয় ঘটলে তার খেসারতও দিতে হবে তাকে। এ লক্ষ্যে নাসিক নির্বাচনকে নিয়ে নৌকার প্রার্থী আইভীকে যেমন অনৈক্য দূর করে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তেমনি শামীম ওসমানকেও আইভীর পক্ষে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ ওেয়া হয়েছে মঙ্গলবার রাতের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। অন্যদিকে, বিএনপি নাসিক নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে নিয়ে এতে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জয়-পরাজয় যাই-ই হোক না কেন, এ নির্বাচন থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি ইস্যু হাতে পেতে চায় দলটি। নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাকি বর্জন, এ নিয়ে দোটানায় ছিল বিএনপি। পরে দফায় দফায় বৈঠক করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানান দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এর পরই মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জানা গেছে, নাসিক নির্বাচনকে ইস্যু হতে দেবে না সরকার। এ কারণেই ডাঃ আইভীকেই মেয়র পদে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দুই সিনিয়র নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি উপদলের চরম বিরোধ রয়েছে। এটি প্রকাশ্য। এখানে তৃণমূল থেকে নাম আসার পরও আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে আইভীকে মনোনয়ন দিয়েছে। আর তাকে মনোনয়ন দেয়ার অর্থই হলো সরকার নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এ জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তাদের দলও। এ জন্য নারায়ণগঞ্জের গৃহবিবাদ নিরসনে কাজ করছেন স্বয়ং দলীয়প্রধান । ফলে এই নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি ইস্যু তৈরি করতে পারবে না। আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শামীম-আইভীর বৈঠক ॥ নাসিক নির্বাচন সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং দলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে সকল ভেদাভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপা আপনি প্রার্থী দিয়েছেন, আমরা সবাই তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে গণভবনে প্রবেশ করেন মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রবেশ করেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল হাইসহ জেলা ও মহানগরের নেতারা। আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, আবদুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। রাত সোয়া আটটার দিকে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাত করতে আসা নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী ডাঃ আইভীর বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করার নির্দেশ দেন বলে বৈঠক সূত্র জানায়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবনের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সবাই অঙ্গীকার করেছে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করবে। দল করলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা সবাইকে মেনে চলতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসায় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ জেনেই আমরা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। সেটাই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এবং সবাই একমত হয়েছে। এখানে দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই। আইভী-শামীম সম্পর্ক নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল পরিবার। ভাইয়ে ভাইয়েও ঝগড়া হয়। এখানে মৌলিক বিষয় নির্বাচন, এখানে ভেদাভেদের সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ আছে। আওয়ামী লীগের ঐক্য অটুট আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কারণ, আমরা একটি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। একটি চেতনাকে নিয়ে রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই আমরা যাকে মনোনয়ন দিয়েছি তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে। বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনার এক পর্যায়ে শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রীর সামনে অভিযোগ করে বলেন, মেয়র আইভী দলের বিরুদ্ধে কথা বলে, দলের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। এমনকি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) বিরুদ্ধেও সে কথা বলেছে। এ সময় ডাঃ আইভী এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি ত্বকি হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, এটা ঠিক আছে। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। এ সময় শামীম ওসমান ‘ভিডিও আছে’ উল্লেখ করলে প্রধানমন্ত্রী দু’জনকেই থামিয়ে বলেন, দলে বহুজন আছে যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছে, মাথা ফাটিয়ে দিতে চেয়েছে। আমি তাদের অনেককে মন্ত্রী করেছি, নেতা বানিয়েছি। আমার গায়ের চামড়া মোটা, এসব কথা আমার গায়ে লাগে না। সূত্রটি আরও জানায়, কথোপকথনের এক পর্যায়ে শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনয়নবঞ্চিত আনোয়ার হোসেন অভিযোগের সুরে বলেন, তাহলে আমাদের বিদায় করে দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই দুই নেতাকে পদত্যাগপত্র দেয়ার আহ্বান জানালে তারা চুপ হয়ে যান। এ সময় আনোয়ার হোসেনকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার আপনি আইভীর পক্ষ নিয়ে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। এবার আইভীকে মনোনয়ন দিলাম, আর আপনি শামীম ওসমানের পক্ষ নিলেন। আপনি পেয়েছেনটা কি?’ এ নিয়ে দীর্ঘ কথোপকথনের পর শামীম ওসমানসহ জেলা ও মহানগর নেতারা মেয়র পদে ডাঃ আইভীকে বিজয়ী করে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিশ্রুতি দেন। সভা শেষে শামীম ওসমান মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করার কথা বললে প্রধানমন্ত্রী হাস্যোজ্জ্বলকণ্ঠে বলেন ‘আগে আইভীকে জিতিয়ে আনো, তারপর দোয়া করব।’ রাত সোয়া দশটা পর্যন্ত চলা এই বৈঠক শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শামীম ওসমান ও ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড আইভীকে আবারও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশীদ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সভাপতি মজিবুর রহমান এই তিনজনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হলেও মনোনয়ন বোর্ড সার্বিক বিচারে আইভীকেই মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়। পরে আইভীর পক্ষে নারায়ণগঞ্জের সব পর্যায়ের নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করতেই মঙ্গলবার গণভবনে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত দুই নেতা জানান, নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী। এখানে আওয়ামী লীগের কারও আইভীর বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। কারও বিরোধিতা করার এমন কোন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে। এ কড়া বার্তাও দেয়া হয়েছে দু’গ্রুপকেই। শামীম ওসমানকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, আইভী নৌকার প্রার্থী, শেখ হাসিনার প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। পরে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রুহুল কবির রিজভী এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান। রিজভী বলেন, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং তাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ নারায়ণগঞ্জ এমনিতেই পরিচয় হয়েছে গডফাদারদের শহর। রিজভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাধারণ মানুষ যদি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পায় তাহলে তাদের পছন্দমতো লোককে ভোট দেবে, গডফাদারকে ভোট দেবে না। তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীকে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াতের পক্ষে দলমত নির্বিশেষে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান। নির্ভয়ে সবাই ভোট দিতে পারলে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ভোট দেবে- দুদু ॥ নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘অল কমিউনিটি ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি প্রার্র্থী হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে ॥ এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দলের আগের মহানগর কমিটির সহআইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে তার কোন পদ নেই। সাখাওয়াত হোসেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরই সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী মেয়র পদে থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেয়র আইভী গণমাধ্যমকর্মীদের কোন বক্তব্য দেননি। তফসিল ঘোষণার ৭ দিন পর বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করায় মঙ্গলবার থেকে নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। এতে মহানগরের ভোটাররা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার আশা করছেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাখাওয়াত হোসেনের নাম ঘোষণা করলেও মঙ্গলবার তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। বিএনপি প্রার্থী দেয়ায় বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকরা উজ্জীবিত ও আনন্দিত। মহানগরের সিনিয়র নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। আইভী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন Ñ সাখাওয়াত হোসেন ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বর্তমান মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী মেয়র পদে থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তার মতো একজন মানুষ আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন, এটা আমার কল্পনাতেই ছিল না। আমি মাত্র বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়েছি, আমি আমার দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন তিনি। তাকে (সাখাওয়াত হোসেনকে) মনোনয়ন দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল সব কিছু বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের প্রার্থী। তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। দলীয় চেয়ারপার্সনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দলের প্রার্থী, তারা আমার পক্ষে কাজ করবেন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী বর্তমান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী জানান, কাল (বুধবার) এ বিষয়ে আমি আমার প্রতিক্রিয়া জানাব। মেয়র পদে আরও দুজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আর দুজন তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মঙ্গলবার জাসদ (ইনু) থেকে মোসলেমউদ্দিন আহমেদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজবাহউদ্দিন ভুলু মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এই নিয়ে মেয়র পদে মোট ৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য পদে ৩৭ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর আগে গত কয়েকদিনে মেয়র পদে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস সোহেল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাঈল, এলডিপির হাজী কামাল প্রধান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গতকাল জাসদের (ইনু) মোসলেমউদ্দিন আহমেদ এবং স্বতন্ত্র থেকে মেজবাহউদ্দিন ভুলু মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জন। বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া ॥ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, যেহেতু আমি নির্বাচন করব না; সিনিয়র কেউ নির্বাচন করবে না তাই কাউকে না কাউকে তো মনোনয়ন দিতে হবে। তাই কেন্দ্র থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাই আমাদের দলীয় প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন বঞ্চিত নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, ব্যক্তি কোন মুখ্য নয়। আমি মনে করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ধানের শীষ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন করার একটি সুযোগ করে দিয়েছেন। সেটাই হচ্ছে আমাদের বড় ব্যাপার। ইনশাআল্লাহ সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপার্সন যাকে যোগ্য বিবেচনা করে মনোনয়ন দিয়েছেন। তার পক্ষে ইনশাআল্লাহ আমরা বিএনপি সর্বস্তরের নেতাকর্মী সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধই আছি। আমাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাই। আমরা দলের নিবেদিত নেতাকর্মী, আমরা অবশ্যই তার পক্ষেই কাজ কবর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোটে আবুল কালাম বলেন, দলনেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই কাজ করব।
×