ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লৌহজংয়ে ১৫ গ্রামের শিক্ষার্থী

ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ লৌহজংয়ের পদ্মার চরের ১৫টি গ্রামের প্রায় হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকা ও ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পারি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার জন্য লৌহজংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা পড়াশোনা করেন। পদ্মা চরের কয়েক কিলোমিটার দুর্গম পথ হেঁটে মাঝ চরে একটি খাল পার হয়ে তারপর পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের আসতে হয় এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ছুটি শেষে কখনও তাদের বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয় আবার কখনও অনেক রাত হয়ে যায়। উপজেলার উত্তর দিঘলী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পাটুলির চরের হানিফ জানান, ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে কোন রকম কিছু খেয়ে কখনও না খেয়ে স্কুলের উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রথমে হেঁটে, এরপর মাঝচরের খালের মধ্যে একটি খেয়া পার হয়ে শেষে পদ্মা নদীর আরেকটি খেয়া পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসতে হয় প্রতিদিন। স্কুল ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি খেয়া মিস করলেই রাত হয়। এভাবেই পদ্মার চরের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি আর ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিক্ষা নিতে আসে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে। লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নয়ন আক্তার জানান, পদ্মার চরের দোয়াল্লীর চর গ্রাম থেকে রাস্তাঘাট তেমন না থাকায় চরের কাশবনের ভিতর দিয়ে হেঁটে এসে পদ্মা নদী পার হতে খেয়া নৌকার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। খেয়া পার হয়ে স্কুলে যেতে আবার অটোরিক্সা অথবা নসিমন, করিমনের অপেক্ষা করতে হয়। কখনও আকাশ খারাপ থাকলে আর স্কুলে আসা হয় না। খুব ভোরে বাড়ি থেকে আসার কারণে অনেক সময় সকালের নাস্তা খাওয়া হয় না দুপুরের টিফিন সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়। তাই নদীর ওপর একটি ব্রিজ হলে আমাদের স্কুলে আসতে খুব সহজ হতো। পদ্মার চরের ১৫টি গ্রামের মধ্যে গত বছর জাপানের একটি সংগঠন ওই দেশে কর্মরত কিছু বাংলাদেশী যুবকের সহযোগিতায় এই চরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলে। এছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসব চরে নেই। লৌহজংয়ের ঘোড়াদৌড় বাজারে পদ্মা নদীসংলগ্ন উত্তর দিঘলী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মৃধা জানান, এই বিদ্যালয়ের ৯শ’ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক-তৃতীংশ শিক্ষার্থীই চর এলাকার। এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চর এলাকা থেকে কষ্ট শিকার করে স্কুলে আসে। অনেক সময় খেয়া নৌকা ডুবে তাদের কাপড়চোপড় ভিজে যায়, বই খাতাও নষ্ট হয়। জীবনের ঝুঁকি আর প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে হচ্ছে। চরে এমন সব দুর্গম এলাকা রয়েছে যেখান থেকে বর্ষা মৌসুমে স্কুলে আসা খুব কষ্ট সাধ্য। তাই বর্ষা মৌসুমে অনেক শিশু ইচ্ছে থাকলেও বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রফিকুল ইসলাম ঢালী জানান, আগে চর এলাকায় তেমন রাস্তাঘাট ছিল না। তবে বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি চর এলাকায় ১০টি গ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করেছেন এবং একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প করেছেন, চর এলাকার প্রায় সব বাড়িতে সোলারের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া শীঘ্রই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হবে। একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, পদ্মার চর থেকে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীরা পদ্মা নদীর খেয়া পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হচ্ছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। তবে এ সমস্যা হয়তো আর বেশি দিন থাকবে না। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু প্রকল্প এ উপজেলায় হচ্ছে। একটি পানি শোধানাগার সেটিও এ উপজেলায় হচ্ছে। তাছাড়া অলিম্পিক ভিলেজ এই পদ্মার চর এলাকাতেই হচ্ছে। এই চর এলাকায় উন্নয়নের ছোয়া লাগতে শুরু করেছে। তবে খুব শীঘ্রই এই চরাঞ্চলের পরিবর্তন আসবে। চর এলাকায় ৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রস্তাবনাও রয়েছে।
×