ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর বায়ুদূষণ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

রাজধানীর বায়ুদূষণ

রাজধানী হলো দেশের ফুসফুস। আর এই ফুসফুসই আক্রান্ত এমন এক ভয়াবহ ব্যাধিতে। এ মহানগরীতে বসবাসকারী কোটি মানুষের ফুসফুস বিপন্ন। রাজধানীতে ফুসফুস সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই নগরীর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে। বায়ুদূষণের কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের সমস্যাও বাড়ছে। এটা বহুল উচ্চারিত যে আয়তনের তুলনায় অতিরিক্ত মানুষ বসবাস করছে এই শহরে। জনতার চাপে রীতিমতো ভারাক্রান্ত ঢাকা। তার ওপর রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং নানাবিধ কলকারখানা। ঢাকার পরিবেশের এমন বিপর্যয় ঘটেছে যে শীতকাল এসে গেলেও এখানে তেমন শীত অনুভূত হচ্ছে না। অথচ প্রতিবেশী দেশে জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। বেশি দূরে যেতে হবে না, আমাদের দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয়ও প্রকৃতিসম্মতভাবে শীতকাল এসে গেছে। ব্যতিক্রম শুধু ঢাকা। বায়ুদূষণের ফলে ঢাকার দম রীতিমতো বন্ধ হওয়ার যোগাড়, নাভিশ্বাস উঠে গেছে শহরটির। তবু আমাদের কর্তৃপক্ষ তীব্র জোরালো কোন প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারছেন না। সত্যি বলতে কি ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে এবং কিছু না কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ যে সরকারকেই নিতে হবে সেটা বলাই বাহুল্য। জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আবদুল মালিক একবার নাগরিক সচেতনতার জন্য বলেছিলেন, ‘সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইড থেকে শুরু“করে মার্কারি, লেডের মতো ভারি পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুসের পাশাপাশি হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বায়ুদূষণের কারণে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, এ্যাজমা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহজনিত (সিওপিডি) রোগ বেশি হচ্ছে।’ এটা ঠিক আমাদের শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় বেশি। দিল্লী ও বেজিং শহরে আমাদের থেকে কম মাত্রার বায়ুদূষণ হওয়ার পরও সেখানে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছে। তেমনি ঢাকাবাসীকেও বায়ুদূষণের ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। জনকণ্ঠে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে নতুন তথ্যের প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বায়ুদূষণ কমাতে রাজধানী ও এর আশপাশের ইটভাঁটি, যানবাহন ও ট্যানারিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিএনসিসির মেয়র যথার্থই বলেছেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার টন নির্মাণ বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, বাসাবাড়ির বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর বেশিরভাগই বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়।’ সবুজ ঢাকা গড়তে আগামী দুই বছরে ঢাকায় তিন লাখ ২৫ হাজার গাছ লাগানো হবে এমন সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে বটে। তবে বায়ুদূষণ থেকে মুক্তির জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নগরায়ণের এ বিশ্বে শিল্প-কারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ। যদি একবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে, তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার এবং এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে।
×