ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনা হোক রোধ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

দুর্ঘটনা হোক রোধ

নিরাপদ যানবাহন হিসেবে বিশ্বে রেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভারতের মতো বিশাল দেশটিকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে রেল ব্যবস্থা। দেশটির বেশিরভাগ মানুষেরই জীবনযাত্রা রেলনির্ভর। সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ, তদারকিতে যে গাফিলতি রয়েছে, তার নমুনা রবিবার ভোরের আগে উত্তর প্রদেশের কানপুরে সংঘটিত রেল দুর্ঘটনাটি। এমন ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা প্রতিবেশী বাংলাদেশকেও মর্মাহত করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সোয়া শ’ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বিস্তৃত ট্রেন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আসছেন। রেল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থতম। শতবর্ষেরও আগে এই উপমহাদেশে ব্রিটিশরা রেল ব্যবস্থা চালু করেছিল। সেই ব্যবস্থা ক্রমশ আধুনিক হয়ে উঠেছে। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের যুগ আর এখন নেই। তবে একুশ শতকের উপযোগী রেললাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ বগি সংস্কারের কাজটির গতি অতি শ্লথ। যন্ত্রপাতি পুরনো হওয়ায় তাই প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। ভারতের রেলমন্ত্রক গত বছর রেল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও বিস্তৃতির জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এজন্য ১৩৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কাজ যে তেমন হয়নি বা হচ্ছে না, তার প্রমাণ রেখে গেল কানপুরের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। কানপুর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। যে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ’ ট্রেন যাতায়াত করে। ভয়ারহ এ দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও রেললাইনের ত্রুটির কারণে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। শীতে লাইন সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। তবে পাটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেস ট্রেনটির বগিগুলো ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলো আগেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল। স্মরণকালের এ ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটে রাত তিনটার দিকে। কানপুর থেকে এক শ’ কিলোমিটার দূরে পুখরাইয়া নামক প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়। দুর্ঘটনা যখন ঘটে অধিকাংশ যাত্রী তখন গভীর ঘুমে। ইঞ্জিনের পেছনে থাকা দুটি সিøপার কোচ পরস্পরের সঙ্গে প্রচ- ধাক্কায় লোহারপি-ের আকার নেয়। পরের দুটি কোচ ছিটকে যায় দূরে ফসলি জমির মধ্যে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরেকটি এসি কোচ। ইঞ্জিনের পেছনে থাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি বগির মধ্যে একটি প্রায় চ্যাপ্টা হয়ে আরেকটির নিচে আটকে যায়। ট্রেনটিতে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিল। চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা লাইনচ্যুত হলে প্রায় সব যাত্রীই মারা যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪২ জনের লাশ উদ্ধার করা গেছে। দু’শতাধিক আহত যাত্রীকে নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা পর উদ্ধার কাজ শুরু হয় এবং বহু মৃত ও জীবিতকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ভারতের রেলমন্ত্রক রেলের সুরক্ষা নিয়ে কাড়ি কাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা শোনালেও, দুর্ঘটনা ঠেকাতে পারছে না। প্রাথমিক তদন্তে এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসছে রেলের গাফিলতির তথ্যই। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম থাকলেও রেললাইনে যে ফাটল ছিল, তার মেরামত করা হয়নি বলে উদ্ধার পাওয়া যাত্রীরা বলছেন। বলা যায়, রেলের উপেক্ষাতেই ঘটে গেল এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ট্রেনটি চালুর এক ঘণ্টা পর থেকেই চাকা থেকে শব্দ হচ্ছিল। যাত্রীরা জানালেও কর্মরত রেলওয়ের লোকজন তাতে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে যাত্রা শুরুর তেরো ঘণ্টার মাথায় ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। বাংলাদেশও ট্রেন দুর্ঘটনার কবল থেকে মুক্ত নয়। প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। পণ্যবাহী থেকে যাত্রীবাহী উভয় ধরনের রেল সার্ভিস চালু থাকলেও বাংলাদেশেও গাফিলতির চিত্র প্রকট। অথচ রেল হতে পারে সারা বাংলার প্রধান যোগাযোগ বাহন। কিন্তু তার লক্ষণ নেই। কানপুরের দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। ঘটনার তদন্ত শেষে দোষীদের শান্তির পাশাপাশি রেল ব্যবস্থাকে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে প্রত্যাশা প্রতিবেশী হিসেবেও।
×