ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজন্মের তিন রত্ন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২২ নভেম্বর ২০১৬

প্রজন্মের তিন রত্ন

আয়মান সাদিক কুসংস্কার ও কুশিক্ষা দূরীকরণের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক পটভূমি বদলে দেয়া এবং দেশের সর্বত্র সমন্বিত শিক্ষার স্বপ্নের বীজ বুননে শুরু হয়েছিল টেন মিনিট স্কুলের পথচলা। বর্তমানে এটি সর্ববৃহৎ অনলাইন স্কুল। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি উদ্যোগ টেন মিনিট স্কুল। এর উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের স্নাতক শেষবর্ষের ছাত্র আয়মান সাদিক। পাঁচ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় উপযুক্ত নির্দেশনা পাননি। তাই সফলতা পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ভর্তি হয়ে আয়মান সাদিক পড়লেন মহা মুসিবতে। স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান ক্লাসে বসে তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। সে সময় হঠাৎই ইউটিউবে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের ওপর কিছু টিউটোরিয়াল খুঁজে পেলেন। এরপর ‘সতেরোটা ভিডিও দেখে আবিষ্কার করলেন, হিসাববিজ্ঞানের মোটা বইটার ১৭টা অধ্যায় পড়া শেষ তার। সেই কোর্সে তিনি ‘এ’ পেয়েছিলেন। এরপর তিনি ভাবলেন, সহজে শেখার এই উপায়টা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিলে কেমন হয়? এই ভাবনা থেকেই বছর দুয়েক আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল টেন মিনিট স্কুল ডটকম (১০ সরহঁঃব ংপযড়ড়ষ. পড়স) নামের ওয়েবসাইটটির। নামে ‘স্কুল’ হলেও টেন মিনিট স্কুল শুধু স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং সম্পূর্ণ বিনা খরচে ব্যবহারযোগ্য এ সাইটটির কনটেন্টগুলো জেএসসি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের কাছেও সমানভাবে সমাদৃত। এই বিপুল জনপ্রিয়তার পেছনে অবদান রেখে চলেছে একঝাঁক তরুণ-তরুণীর নিরলস শ্রম ও প্রচেষ্টা। স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন প্ল্যাটফর্মটির উন্নয়নে এবং সমৃদ্ধকরণে। তামিম শাহরিয়ার সুবিন তামিম শাহরিয়ার সুবিন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন ২০০৬ সালে। ক্যারিয়ার শুরু হয় একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে। সেখানে দুই সেমিস্টার কাটানোর পর তিনি বুঝতে পারলেন যে কিছু শিখছেন না। তাই চাকরি ছেড়ে দেন। তারপর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশের খ্যাতনামা একটি কোম্পানিতে যোগ দেন। সেখানে দেড় বছর কাজ করার পর আরও দেড় বছর কাজ করেন প্লেডম বাংলাদেশে (তৎকালীন ট্রিপার্ট ল্যাবস)। চাকরি করতে গিয়ে তামিম শাহরিয়ার সুবিন মনে হলো তার পুরোপুরি মেধা ও শ্রম আসলে কাজে লাগাতে পড়ছেন না। তাই নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি চাকরির ইন্টারভিউ অফার পেয়েছিলেন। ফেসবুক থেকে তাকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় ২০১০ সালের জুন মাসে, আর গুগল থেকে চাকরির ইন্টারভিউ অফার পান ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তাদের তিনি তখন ইন্টারভিউ দিতে অপারগতা জানান এবং আরও কয়েক বছর নিজের দেশে কাটানোর ইচ্ছার কথা জানান। কারণ, তিনি দেশে থাকতে চেয়েছিলেন। আর দেশে থাকার অনেক কারণের মধ্যে প্রধান ছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা। এক সময় রেন্টএকোডার ডটকম (ৎবহঃধপড়ফবৎ.পড়স) নামে একটি সাইটে তিনি মাঝে মধ্যে কাজ করতেন। ২০১০-এর জুন মাসে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি নিজের প্রতিষ্ঠানে চলে আসেন। ২০০২ সাল থেকে এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা এবং অন্য জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় টানা চার বছর অংশ নিয়েছেন তামিম। এছাড়া নিয়মিতভাবে অনলাইন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তামিম সিলেটে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য প্যারালাল ম্যাথ স্কুল চালু করেছিলেন। এর কিছুদিন পরই যুক্ত হন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে। এখন এর একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হন তিনি। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে তামিম তাঁর প্রথম বই লেখা শুরু করেন ২০০৯ সালে এবং ২০১১ সালের বইমেলায় এটি প্রকাশিত হয়। সওগাত নাজবিন খান সওগাত নাজবিন খান। সম্প্রতি তিনি নির্বাচিত হন জাতিসংঘের তরুণ নেতা হিসেবে। সারা বিশ্ব থেকে ১৭ জন তরুণ নেতা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। তাদেরই একজন আমাদের ময়মনসিংহের প্রতিভাময়ী নাজবিন খান। অন্য ১৬ জনের মতো তিনিও নিজ দেশে কাজ করে যাচ্ছেন জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জনে। বাবার সরকারী চাকরিজীবী। তাই কয়েকটি বিদ্যালয়ে পড়তে হয় নাজবিনকে। মেধাবী বলে ভর্তির সময় এক ক্লাস ওপরে নাম লেখান। নাজবিন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) থেকে ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং -এ অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর ইউনেস্কোর স্কলারশিপে ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দূষণমুক্ত জ্বালানি (গ্রিন এনার্জি) বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ময়মনসিংহে ‘এইচ এ ডিজিটাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন, যেখানে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছেলে-মেয়েদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পড়ানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ হতদরিদ্র পরিবারের ৩৩৬ জন নিবন্ধিত শিক্ষার্থীকে নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। ধ্রুব হাসান
×