ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২২ নভেম্বর ২০১৬

গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সময়। কয়েকদিন পরেই আমরা বরণ করে নেব নতুন একটি দশক। কঠিন সেই নতুনকে বরণের পূর্বেই গত ১৯ নবেম্বর মুম্বাইয়ে গগজউঅ গ্রাউন্ডে হয়ে গেল ২০১৬ সালের সবচেয়ে জমকালো অনুষ্ঠান ‘দ্য গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল ইন্ডিয়া ২০১৬’। এতে অংশ নেন আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘কোল্ড প্লে।’ সঙ্গে আরও ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, রণবীর সিংহ, ক্যাটরিনা কাইফ, এ আর রহমান, সোনম কপূর, মোনালি ঠাকুর প্রমুখ তারকা। এর পূর্বে কোয়ান্টিকোতে অভিনয় করার ফলে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া একজন গ্লোবাল আইকন হয়ে উঠেছিলেন তাই তিনি নিউইয়র্কে উপস্থিত জনতার সামনে ‘ইন্ডিয়া গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল ২০১৬ ’-এর সূচনা করেন। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য পূনম মহাজন এবং কোল্ড প্লে-এর প্রধান গায়ক ক্রিস মার্টিন। গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল ইন্ডিয়া ২০১৬-এর মঞ্চে লিঙ্গ সমতা নিয়ে প্রচার করলেন মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন। লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ কী, কেন সমাজে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে এসব-ই উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। উল্লেখ্য, বিগ বি-র সাম্প্রতিক ছবি ‘পিঙ্ক’-এর বিষয়বস্তুও লিঙ্গ-সমতা। মঞ্চে আবৃত্তি পাঠ করেন অমিতাভ। এরপর ব্যারিটন গলায় গান গেয়ে শোনান দর্শকদের। বলিউডের হেভিওয়েট তারকাদের সঙ্গে একি মঞ্চে পারফর্ম করে কোল্ড প্লে। যেদিন ঘোষণা হয় ‘কোল্ডপ্লে’ ১৯ নবেম্বর মুম্বাইতে শো করবে, সেদিন থেকেই তরুণদের মাঝে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। এক কোল্ডপ্লেপ্রেমী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন- আমরা, মানে যাদের কাছে ‘ইয়েলো’ এক সময়ের ‘তোমাকে চাই’ বা ‘নীলাঞ্জনা’র সমকক্ষ, তারা শুধুই ওয়েবসাইট খুলে বসে আছে দুটো টিকেট পাওয়ার আশায়। পাগলামি এমন পর্যায়ে গেছে যে, মা-বাবারা আমাদের দেখলেই পালিয়ে যাচ্ছেন টিকেটের দাম শুনে। সেটা নিয়েও চলছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। কেউ বলছে ২৫ হাজার টাকা একটা টিকেট। কেউ বলছে দশ হাজার। কেউ বলছে ফ্রি। আমাদের দলে রয়েছেন প্রচুর ‘বিটলস’ কী ‘আব্বা’র ফ্যান যাঁরা তাঁদের কলেজ দিনের উন্মাদনা খুঁজে পান ‘কোল্ডপ্লে’র গানে। কিন্তু কী আছে সেই গানগুলোয়? আছে দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো কষ্ট। আছে অভাবনীয় সাইকোডেলিক রোমাঞ্চ। আছে রেজিমেন্টেড এস্টাবলিশমেন্টের প্রতি ক্ষোভ। আছে ভালবাসার টকমিষ্টি স্বাদ। সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ইলেক্ট্রনিক প্যাচ, অপূর্ব ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্রাকচারিং আর লিরিক্সের ইন্দ্রজাল। ঠিক ‘বছর কুড়ি আগে’ চারজন বন্ধু মিলে লন্ডনের স্যাঁতসেঁতে কুয়াশার গভীরে তৈরি করে এই অতুলনীয় ব্যান্ডটি। বলে রাখা ভাল আধুনিক রক সঙ্গীতের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডগুলোর অন্যতম কোল্ডপ্লে। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নবীনবরণ সপ্তাহে ক্রিস মার্টিন ও জনি বাকল্যান্ডের পরিচয় ঘটে। তাঁরা সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরটি তাঁদের একসঙ্গে একটি গানের দল করার কথা ভাবতে ভাবতে কাটে। এরপর তাঁরা পেক্টোরালজ নামে একটি দল গড়েন। গাই বেরিম্যান নামের আরেক সহপাঠী তাঁদের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে যোগদান করেন। কিছুদিন পর তাঁরা দলের নাম বদলে স্টারফিশ রাখেন। সে সময় থেকেই শুরু হয় ছোট ক্লাবগুলোয় তাঁদের সঙ্গীত পরিবেশন করা। ক্রিস মার্টিনের স্কুল জীবনের এক বন্ধু ফিল হার্ভেকে তাঁরা দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। ফিল হার্ভে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ক্লাসিকসের ছাত্র। এখন পর্যন্ত ফিল হার্ভে তাঁদের সঙ্গে দলের একজন সদস্যের মতোই আছেন। দলটির একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ আসে, যখন উইল চ্যাম্পিয়ন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন। উইল পিয়ানো, গিটার, বেজ ও টিন হুইসেল বাজাতে বাজাতে শৈশব-কৈশোর পার করেন। তবে তিনি এই দলের সঙ্গে পারকাশন বাজাতে আসেন। এর পূর্ব অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। তবে তিনি খুব অল্প সময়েই ড্রামস বাজানো আয়ত্ত করে ফেলেন। এরপর তাঁরা আবারও দলের নাম পরিবর্তন করে কোল্ডপ্লে রাখেন। এটা ১৯৯৮ সালের কথা। পার্লোফোনের ব্যানারে ব্যান্ডের প্রথম এ্যালবাম ‘প্যারাস্যুটস’ প্রকাশ হয় ২০০০ সালে। ‘ইয়োলো’, ‘ট্রাবল’ ও ‘ডোন্ট প্যানিক’ শ্রোতারা লুফে নেয়। ফলে এ্যালবামটি স্থান করে নেয় ইউকে টপচার্টে। প্লাটিনাম খেতাবসহ ইউকে বিলবোর্ড টপচার্টের ৫১ নম্বরেও জায়গা পায় তাদের এ্যালবামটি। আর কোল্ডপ্লের দ্বিতীয় এ্যালবাম প্রকাশের এক দশকেরও বেশি সময় পর নতুন ইতিহাস স্থাপন করে। তাদের এ্যালবামগুলো হলো এ রাশ অফ ব্লাড টু দ্য হেড (২০০২), এক্স এ্যান্ড ওয়াই (২০০৫), ভিভা লা ভিডা অর ডেথ এ্যান্ড অল হিজ ফ্রেন্ডস (২০০৮), মাইলো জাইলোটো (২০১১), ঘোস্ট স্টোরিস (২০১৪), এ হেড ফুল অফ ড্রিমস (২০১৫)। কোল্ডপ্লে।­এর প্যারাডাইস, ইয়োলো ও ফিক্স ইউ- মঞ্চে উঠে সবই গাওয়া হলো। আর ব্রিটিশ রক ব্যান্ড কোল্ডপ্লের গাওয়া এই জনপ্রিয় গানগুলোর তালে তালে মেতে উঠল মুম্বাই। তবে অনুষ্ঠানের শেষপর্বে উচ্ছ্বাসের বাধ ভাঙল, যখন বন্দে মাতরম গেয়ে উঠল ব্রিটিশ রক ব্যান্ড কোল্ডপ্লে। প্রধান গায়ক ক্রিস মার্টিনের গলায় বন্দে মাতরম যেন আলাদা একটা মাত্রা যোগ করল রাতের গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যালে। এখানেই শেষ নয়, তিনি গাইলেন মা তুঝে সালাম গানটিও। আর এই গান চলাকালীন মঞ্চে ডেকে নিলেন বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক এ আর রহমানকেও। এমনকী, নিজের মতো করে গেয়েছেন এ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল ছবির চান্না মেরেয়া গানটিও।
×