ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রোন আমদানি নীতিমালা হচ্ছে ॥ আইন মেনে বৈধপথে আনা যাবে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ নভেম্বর ২০১৬

ড্রোন আমদানি নীতিমালা হচ্ছে ॥ আইন মেনে বৈধপথে আনা যাবে

এম শাহজাহান ॥ নীতিমালা মেনে যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বৈধপথে ড্রোন আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। এতদিন খেলনা হিসেবে আমদানি হলেও এখন থেকে ‘প্রয়োজনীয়’ সামগ্রী হিসেবে ড্রোন আমদানি করা যাবে। এ লক্ষ্যে ড্রোন আমদানিতে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি চলতি ২০১৫-১৮ আমদানি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অবৈধপথে চালকবিহীন ছোট উড়ন্ত যান বা ড্রোন আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার তা নিয়ন্ত্রণে এই নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূমি জরিপ, ওপর থেকে নিচের ছবি তোলা, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে ড্রোন আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির ব্যাপারে কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, আমদানি নীতিমালায় ড্রোন আমদানির কোন সুযোগ নেই। এ কারণে বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত ড্রোন আটক করছে কাস্টমস ও শুল্ক কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত তিন মাসে ৩৮টি চালকবিহীন ছোট উড়ন্ত যান বা ড্রোন আটক করা হয়েছে। এগুলো বিমানবন্দরের কার্গো গুদাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে আমদানি নীতিমালায় ড্রোন আমদানির সুযোগ না থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্কনীতি বিভাগেও কোন নির্দেশনা নেই। তারপরও ড্রোন আমদানি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানি এবং আমদানির ক্ষেত্রে বিমানবাহিনী বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অথবা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে কি না, সে বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। বৈধভাবে সরকারী অনুমতি নিয়ে যাতে ড্রোন আমদানি হতে পারে এজন্য নীতিমালা করা হচ্ছে। এ কারণে চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) মুন্সি শফিউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ড্রোন আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে এ বিষয়ে একটি আমদানি নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নীতিমালা না থাকায় প্রয়োজন পড়লেও ড্রোন আমদানি করা যাচ্ছে না। এটি শুধু খেলনা হিসেবে নয়, বিভিন্ন ধরনের কাজে লাগছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ড্রোন আমদানির সুযোগ দেবে সরকার। তিনি বলেন, ড্রোন আমদানির বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে, আরও করা হবে। আর যেহেতু এটি উড়ন্ত ছোট যান, তাই এ বিষয়টি সিভিল এ্যাভিয়েশনও দেখছে। নীতিমালা করা হলেও এটি উড্ডয়ন এবং আমদানিতে অবশ্যই সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। আমদানি নীতিমালায় এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া হবে। তিনি বলেন, ড্রোন আমদানিতে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট লাগবে। এটি জনস্বার্থে কোন ক্ষতির কারণ না হয় সেজন্য আমদানিকারকদেরও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। একই সঙ্গে আমদানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগবে। এছাড়া আরও কয়েকটি বিষয় সন্নিবেশিত করা হবে। জানা গেছে, গত তিন মাসে আটক ড্রোনগুলো নিতে ঢাকা কাস্টম হাউসের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। কোন আবেদনও করা হয়নি। সর্বশেষ আটক ড্রোনগুলো চীনের তৈরি। শুল্ক গোয়েন্দারা গত সেপ্টেম্বর মাসে গার্মেন্টসের আমদানি করা কাপড়ের ভেতরে লুকিয়ে আনা পাঁচটি ড্রোন উদ্ধার করেছিলেন। বিমানবন্দরে কুরিয়ার গেট দিয়ে খালাসের সময় এগুলো জব্দ করা হয়। ওই কাপড় ও ড্রোন কারা এনেছে, তা জানাতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এনবিআরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রোনগুলো রিমোর্ট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত। এসব ড্রোন ৪০০ ফুট বা ৪০ তলা ভবনের সমান উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। ওড়ার সময় কোন শব্দ হয় না। পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে এ ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, আটক ড্রোনের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একাধিক গোয়েন্দা সদস্য সম্প্রতি কাস্টম হাউসে সংশ্লিষ্ট শুল্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
×