ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০১৬

রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত চায় বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতও করতে চায় দলটি। এজন্য তাঁর কাছে সময় আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের অভিভাবক। ইসি গঠনের দায়িত্ব যেহেতু তাঁর ওপর। তাই খালেদা জিয়ার প্রস্তার তাঁর কাছে পাঠানোর জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে এই প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য তিনি আমাদের সময় দেবেন আশা করি। সোমবার পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, রবিবার রাতে বিএনপি পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও সময় পাইনি। অপেক্ষায় আছি, তিনি কখন সময় দেবেন। কারণ সংবিধান অনুযায়ী কেবল রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার রাখেন উল্লেখ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি তো কোন দলের নয়। আওয়ামী লীগের নয়। কারণ যেদিন তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সেদিন থেকেই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। এখন তিনি সকলের রাষ্ট্রপতি। তিনি এ বিষয়ে দায়িত্ব নেবেন। বিএনপি মনে করে, দেশে বর্তমান যে সঙ্কট চলছে সেটি নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক। তিনি এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করার উদ্যোগ নেবেন বলে বিএনপি আশা করে। গত শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তাঁর দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে কমিশনে নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করা হবে। এই নাম থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনার গঠনে রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির মাধ্যমে ১০টি নাম বাছাই করবেন। সেখান থেকে বিভিন্ন দলের প্রস্তাবিত অভিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। অবশ্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের এ প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় এ প্রস্তাব অন্তঃসারশূন্য ও জাতির সঙ্গে তামাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপিকে এর আগে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারা সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অতীত প্রসঙ্গ টেনে তো লাভ নেই। দেশে বর্তমান যে সমস্যা ও সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা উপলব্ধি করেই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব করেছেন। এটা নিয়েই আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন এটি একটি প্রস্তাব মাত্র। এটা একটা আলোচনার ভিত্তি হতে পারে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি আন্তরিক হয় তাহলে সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি এ প্রস্তাŸের ভিত্তিতে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারেন। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে সব দলের কাছেই এটি পাঠানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন করার কোনও উপায় নেই। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। নতুন ইসি গঠন করে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায় এবং কমিশনকে একটি শক্তিশালী সংগঠনের পরিণত করা যায় সেজন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিএনপির পক্ষে একটি নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিএনপি তার সিদ্ধান্ত জানাবে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। তবে বর্তমান কমিশন গঠনের আগে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করেছিলেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বিএনপি এবারও সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। শেখ হাসিনার প্রভু আছে বন্ধু নেই- গয়েশ্বর ॥ এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মন্তব্য করেছে বিদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভু আছে। কিন্তু তার কোন বন্ধু নেই। এ কারণেই ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকলেও তিনি কিছু বলতে পারেন না। বিএসএফ গুলি করে মানুষ মারছে তিনি কোন কথা বলতে পারেন না। এসব বিষয়ে সরকার সব সময় নতজানু আচরণ করেন। তিনি বলেন, এ সরকারের মদদে দেশে গুম হত্যা চলছেই। সরকার নিজেদের ইচ্ছা প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠুর আচরণ করছে। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ লিখতে সাহস পায় না। মিডিয়া সরকারের তোষামোদ করছে। এই হলো দেশের অবস্থা। সোমবার জাজীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। বলেন, বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ তারেক রহমানের নাম বিক্রি করে স্বার্থসিদ্ধি করছেন। দেশের ভেতরে কিছু ধান্দাবাজ তারেক রহমানের নাম বিক্রি করছেন। তারা বলে, ভাইয়ের সঙ্গে কথা হইছে। কী আজব। এদের কাছ থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়ার প্রস্তাব মেনে নিন- দুদু ॥ এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ইসি গঠনে বেগম জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছে তা না মানলে সরকারকে বিকল্প প্রস্তাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে চলমান নির্বাচনী সঙ্কট দূরীকরণে খালেদা জিয়ার মেনে নিতে হবে। না হয় তাদের এ ধরনের একটার প্রস্তাব দিতে হবে। ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন এদেশের মানুষ আর চায় না। এ ধরনের নির্বাচনের আয়োজন করা হলে সরকারকে ভুলের খেসারত দিতে হবে। সরকার দেশের সঙ্কট নিরসনে ব্যর্থ হলে কিভাবে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আসতে হয় তা দেশের জনগণ ভাল করেই জানে। দেশের মানুষ কারও কাছে মাথ নত করে না বলে উল্লেখ করেন। সোমবার দুপুরে রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদে মওলানা ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
×