ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ দিনে ৪শ’ পরিবার বসেছে পথে

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন তীব্র

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২২ নভেম্বর ২০১৬

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন তীব্র

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর বাজার এলাকা এবং কোদালকাটি ইউনিয়নের কোদালকাটি বাজার এলাকায় অসময়ে ব্রহ্মপুত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে গত দশ দিনে ওই ইউনিয়নে চারশ’ পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে। ভাঙ্গনের শিকার মানুষ জানিয়েছে গত ১০ নবেম্বর থেকে নদে হঠাৎ ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং তা অব্যাহত রয়েছে। যে হারে ভাঙছে তাতে ওই ইউনিয়ন নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। সরেজমিনে ভাঙ্গনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নয়াচর বাজার এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার ও কোদালকাটি বাজার এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওই ভয়াবহ ভাঙ্গন চলছে। ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে দিয়ারারচর, সবুজপাড়া, গোয়ালপাড়া, বাজারপাড়া। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে দিয়ারারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। নয়াচর গোয়ালপাড়া গ্রামের দিনমজুর চাঁন মিয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। শেষ সম্বল বাড়ির ভিটা তাও নদীতে বিলীন হয়ে গেল। এখন অন্যের জায়গায় আছি। একই গ্রামের হাফিজা বেওয়া বলেন, ‘আমার এখন থাকার জায়গা নেই। একটি ঘর ছিল তাও নদীতে ভেঙ্গে গেছে। এই নদে আমি ১৫ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। ’ ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে গেছে আতোয়ার হোসেন, ইয়াছিন আলী, সাজু মিয়া, আব্দুর রহীম, নীলকান্ত, আছিয়া বেগম ও ফাতেমা বেগমের মতো প্রায় দুই পরিবার। রাজীবপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নয়াচর সবুজপাড়া গ্রামের বিলকিস খাতুন জানান, অর্ধশত বছরের পুরাতন নয়াচর বাজারের অর্ধেক এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই মুহূর্তে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ইউনিয়নবাসী। কেননা মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ৬ গ্রামের দুইশ’ পরিবারের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে আরও অসংখ্য পরিবার। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। অপরদিকে ওই একই নদে কোদালকাটি ইউনিয়নের বাজার পাড়া, সাজাই, সাজাই হাঁটুদেওয়ানী পাড়া, মধ্য সাজাই, কারিগরপাড়াসহ দুই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙ্গনের তা-ব চলছে। এখানে দুইশরও বেশি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান, ভাঙ্গনের শিকার মানুষগুলো দিনমজুর হওয়ার কারণে তাদের মাঝে হাহাকার। যে হারে ভাঙ্গছে তা প্রতিরোধ করা না গেলে কোদালকাটি নামের যে ইউনিয়ন ছিল তা ক’দিন পর খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, নয়াচর আর কোদালকাটিতে নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সমন্বয় সভায় নদী ভাঙ্গনের বিষয় এবং প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজীবপুরে নদের ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, নয়াচর বাজার এলাকায় আমরা এরই মধ্যে বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলেছি। এছাড়া সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আমরা একটা প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
×