ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গবর্নরের সঙ্গে নতুন ৯ ব্যাংকের বৈঠক

স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২২ নভেম্বর ২০১৬

স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিয়ম মেনে নতুন ৯ ব্যাংককে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন ব্যাংগুলোর সর্বশেষ আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনামূলক বৈঠকে এসব সাবধান ও পরামর্শ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান, নির্বাহী পরিচালক ড. নির্মল চন্দ্র ভক্ত, মহাব্যবস্থাপক এসএম রবিউল হাসান ও ৯ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান বলেন, ঋণ বিতরণ যেন এক কেন্দ্রীক না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা ও যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণে বারণ করা হয়েছে। সর্বোপরি ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণভাবে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে এবিবির সাবেক সভাপতি ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, আগ্রাসী ব্যাংকিং পরিহার, খেলাপী ঋণ কমানো ও ৪ থেকে ৫টি ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, গত ২৩ জুলাই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়ার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০ পরিচালক থাকলে ৩ স্বতন্ত্র পরিচালক এবং ১২ পরিচালক থাকলে ২ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। নতুন ব্যাংকের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে নুরুল আমিন আরও বলেন, ৩০ শতাংশ কৃষি ঋণ সরাসরি বিতরণ ও সিএসআর খাতে ১০ শতাংশ অর্থ ব্যয় নতুন ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হয়ে গেছে। এটা কমাতে বলেছি। একটি শাখা শহরে খুললে একটি গ্রামে খোলার পরিবর্তে দুইটি শাখা শহরে খুললে একটি শাখা গ্রামে খোলার প্রস্তাব করেছি। জানা গেছে, নানা পরিকল্পনা নিয়ে বছর তিনেক আগে কার্যক্রম শুরু করে নতুন ৯ ব্যাংক। তবে লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়নি কোন ব্যাংকের। বরং খেলাপী ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যয় বেড়েছে ব্যাংকগুলোর। সেপ্টেম্বরে এসব ব্যাংকের ৫৫৮ কোটি টাকা খেলাপীতে পরিণত হয়েছে। এক বছর আগে খেলাপী ঋণ ছিল ১৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপী ঋণ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি ব্যাংকগুলোর। অল্প সময়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে এদের কেউ কেউ। সার্বিক বিষয়ে আলোচনা ও দিকনির্দেশনা দিতে ব্যাংকগুলোর এমডিদের নিয়ে বৈঠকটি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে নতুন ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপীতে পরিণত হয়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা, যা ২ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের বছরের একই সময় ১৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপীী ছিল ১৬৪ কোটি টাকা, যা এক দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এতে এক বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা ৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা, যা প্রায় সাড়ে তিনগুণ। বর্তমানের এ খেলাপী ঋণ আগের প্রান্তিক তথা গত জুনের তুলনায়ও অনেক। জুনে নতুন ব্যাংকগুলোর ২৩ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৩৯২ কোটি টাকা খেলাপী ছিল। ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস বৈদেশিক বাণিজ্যের বিপরীতে পাওয়া কমিশন। বৈদেশিক বাণিজ্যে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই কোন নতুন ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মাত্র সাড়ে ১১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বড় কোন ব্যাংক করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিংয়ে রাজি না হওয়ায় আমদানি, রফতানি বা অন্য বৈদেশিক বাণিজ্যও হচ্ছে না। আমদানির জন্য এলসি খুলতে বা রফতানির অর্থ দেশে আনতে করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজন হয়। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, খেলাপী ঋণের ফারমার্স ব্যাংকের তিন হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপীীতে পরিণত হয়েছে ২৭৭ কোটি টাকা, যা ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের তিন হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ এখন খেলাপী। খেলাপী ঋণের এ হার অনেক আগে থেকে কার্যক্রমে থাকা অনেক ব্যাংকের তুলনায় বেশি। মেঘনা ব্যাংক খেলাপীর দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকটির এক হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫৭ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এখন খেলাপী। শতকরা হারে এর পরের অবস্থানে থাকা এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ২ দশমিক ২৭ শতাংশ বা ২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা এখন খেলাপীতে পরিণত হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংকে খেলাপী ঋণ রয়েছে ২৭ কোটি টাকা, যা এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। এনআরবি গ্লোবালে ৩৩ কোটি ১২ লাখ বা এক দশমিক ১৪ শতাংশ।
×