ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা নিয়ে নিরীক্ষা নয়

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২২ নভেম্বর ২০১৬

শিক্ষা নিয়ে নিরীক্ষা নয়

জাতীয় শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই স্তর পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। গত কয়েক বছর ধরে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত একটি এবং ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলতি বছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এবার থেকে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। এ নিয়ে প্রায় আড়াই কোটি প্রাথমিক-এবতেদায়ী শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছিলেন। যা হোক অন্তত কচিকাঁচা শিশুদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও টানাপড়েন বন্ধ হবে। কিন্তু হা হতোস্মি! অচিরেই জানা গেল যে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিপরিষদ। সেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি টেকেনি। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে, জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে হলে সময় প্রয়োজন। কেননা, এর জন্য লাগবে অর্থ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, উপযুক্ত শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ, তাদের মর্যাদা সর্বোপরি যথাযথ পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তাহলে এত আগেই কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ঘোষণা করার দরকার কী ছিল? প্রাথমিক শিক্ষা ও বইপুস্তক অবৈতনিক হলেও সমাপনী পরীক্ষার নামে শিশুদের কোচিং ও সৃজনশীল প্রশ্নের নামে গাইড বইয়ের জন্য গুচ্ছের খরচ হয়ে থাকে অভিভাবকদের। এর ওপর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ কেন্দ্র পরিবর্তনের দুশ্চিন্তা ও দৌড়ঝাঁপ তো আছেই। এই অসহায়ত্ব থেকে শিশু ও অভিভাবকদের মুক্তি দেবে কে? তদুপরি আগামীতে কবে থেকে তারা এই অহেতুক বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন তা বলতে পারছে না কেউÑ না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের শিক্ষানীতি নিয়ে বোলচাল চলছে স্বাধীনতার পর থেকেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও কিছু কম হচ্ছে না। সবচেয়ে যা দুঃখজনক, তা হলো, একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী গঠনমূলক ও স্বনির্ভর একমুখী শিক্ষানীতি আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, প্রণয়ন করা পর্যন্ত সম্ভব হলো না। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাই চলছে কয়েক স্তরে। একদিকে প্রাথমিক শিক্ষা, অন্যদিকে এবতেদায়ী শিক্ষা ও কওমী মাদ্রাসা। কিন্ডার গার্টেনসহ ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলও চলছে। কোনটির সঙ্গে কোনটির সমন্বয় নেই। পাঠ্যপুস্তকসহ সিলেবাসও আলাদা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থাও তথৈবচ। কোন সমন্বয় নেই। দেশে শিক্ষা নিয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক চিন্তকের অভাব আছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নেও সমস্যা বিরাজমান। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেন শিক্ষার সমন্বয় সাধন ও আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক ও জরুরী। শিশুদের জন্য একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে, শুরুতেই তা হোঁচট খেতে বাধ্য। সে অবস্থায় ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাস্তর বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে ধাপে ধাপে। অবকাঠামো বিনির্মাণসহ শিক্ষকদের নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তদনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক। যা হবে আধুনিক ও যুগপোযোগী। একাধিক মন্ত্রণালয় এ অধিদফতরের পরিবর্তে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা আনতে হবে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বর্তমানে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আশানুরূপ নয়। নানামুখী ও একমুখী শিক্ষা প্রবর্তনে আমলাতন্ত্রও প্রতিবন্ধক। পাঠ্যপুস্তকের প্রকাশকগোষ্ঠী এবং কোচিং ও গাইড বই ব্যবসায়ীরাও কম অন্তরায় নয়। দীর্ঘদিন থেকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এর পেছনে কাজ করছে। শিক্ষার মান উন্নয়নসহ যথাযথ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে এসবই দূর করতে হবে।
×