ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গারো তরুণী ধর্ষণ

রুবেলের স্বীকারোক্তি কারাগারে প্রেরণ

প্রকাশিত: ০৮:২২, ২১ নভেম্বর ২০১৬

 রুবেলের স্বীকারোক্তি কারাগারে প্রেরণ

আজাদ সুলায়মান ॥ রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রুবেলের অপরাধ জগত সম্পর্কে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গারো তরুণী ধর্ষণের আগেও সে নানা ধরনের অপরাধ করেছে। রিমান্ডে রুবেল গারো তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। বলেছে, মেয়েটিকে রাস্তায় একা দেখতে পেয়েই এমন খারাপ সিদ্ধান্ত নিই। পুলিশ জানিয়েছে, রুবেল দায় স্বীকার করলেও ঘটনার বিবরণে একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল ও তার সহযোগীদের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই ধর্ষকের ছয় দিনের রিমান্ডের পঞ্চম দিন জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। এলাকাবাসী জানায়, রুবেলের নামে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বাড্ডা এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম সে করে বেড়াত। এ বিষয়ে তার নামে অনেক অভিযোগ থাকলেও সাক্ষীর অভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তার নামে বাড্ডা থানায় ২০১২ সালের আগস্টে মারামারির একটি মামলা দায়ের হয়, (নম্বর ২৫) ২০১৫ সালের মে মাসে মারামারি সংক্রান্ত আরেকটি মামলা দায়ের হয়, (নম্বর ২৫)। গত ৪ নবেম্বর বাড্ডা থানায় এক গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়, (নম্বর ৩৭) এ ঘটনায় আটকের পর আদালত থেকে পালানোর অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় আদালত অবমাননা সংক্রান্ত একটি মামলা হয় (নম্বর ১৮) এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানায় গত ২৬ অক্টোবর রাতে বাড্ডা এলাকায় এক গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪ নবেম্বর বাড্ডা থানায় ওই তরুণী বাদী হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এতে রুবেল, সালাউদ্দিনসহ অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ জানায়, রুবেল আদালত থেকে পালিয়ে হাতকড়া পরা হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে প্রথমে একটি তুলার দোকানে যায়। সেখানে হাতকড়া ঢাকার জন্য কৌশলে হাতের মধ্যে কাপড় ও তুলা নেয়। পরে কাপড় ও তুলা দিয়ে হ্যান্ডকাফের ওপর ব্যান্ডেজ করে আদালতের পেছনে একটি মসজিদে আশ্রয় নেয়। সেখানে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করার পর অসুস্থতার ভান করে পালিয়ে যায় রুবেল। পালানোর সময় হাতকড়াসহ হাতটি পকেটে করে পালিয়ে যায়। হ্যান্ডকাফের ওপর ব্যান্ডেজ করে মসজিদে বসে সে আছরের নামাজ আদায় করে। মসজিদ থেকে বের হয়ে পাশের দোকান থেকে একটি সিগারেট ও এক কাপ চা খায়। তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা আনায়। সন্ধ্যার পর সে মসজিদ থেকে বের হয়ে ব্যান্ডেজ হাতে বাড্ডায় ফিরে যায়। এর পর সে অসুস্থতার ভান করে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ায়। সে পালিয়ে ভাটারার নূরের চালা এলাকায় গিয়ে একটি বাড়ির ছাদে রাত কাটায়। সকালে টঙ্গী বোর্ড বাজার যায় হাতকড়া কাটাতে। কিন্তু হাতকড়া কাটাতে ব্যর্থ হয়ে সোমবার সে আবার বাড্ডায় ফিরে আসে। সুবাস্তু টাওয়ারের পেছনে খালের পাশে গিয়ে দুটি ঘরের মাঝখানে খালি জায়গায় রাতে ঘুমায়। পুলিশের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল। পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে উত্তর বাড্ডা এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে মঙ্গলবার সকালে সুবাস্তু টাওয়ারের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পুলিশের গাফিলতির দরুণ ইতোমধ্যে দুই পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- বাড্ডা থানার দারোগা এমরান উল হাসান ও দীপক চন্দ্র পোদ্দার । উল্লেখ্য ২৫ অক্টোবর ঢাকায় গারো তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার পর ২৮ অক্টোবর বাড্ডা থানায় মামলা হয়। পুলিশ ওইদিনই সালাউদ্দিন নামে রুবেলের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে। খিলক্ষেতের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন ওই গারো তরুণী। গত ২৫ অক্টোবর তিনি তার হবু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে উত্তর বাড্ডার পুরাতন থানা রোডের বাড়িতে যান। বিকেল চারটার দিকে সেখান থেকে বের হওয়ার পর পরই স্থানীয় সাত-আট যুবক তাদের ঘিরে ফেলে ও মারধর করে। পরে তরুণীকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানে রুবেল তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
×