ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপী বাতিলের প্রভাব

বেনাপোল বন্দরে আমদানি রফতানি বাধাগ্রস্ত

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২১ নভেম্বর ২০১৬

বেনাপোল বন্দরে আমদানি  রফতানি বাধাগ্রস্ত

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ হঠাৎ করে ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপী বাতিল করায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীদের। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি ও টিটির সংখ্যা কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। কবে নাগাদ এ মন্দা কাটতে পারে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ডিসেম্বরের আগে এ অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রতিদিন সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ ট্রাক পণ্য ভারত থেকে আমদানি হতো। কিন্তু ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপী বাতিল করার পর তা কমে নেমে এসেছে আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ ট্রাকে। আর বাংলাদেশী পণ্য রফতানি কমেছে প্রায় অর্ধেক। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানিকারক ঢাকার হাজারীবাগের রবিন এন্টারটপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রবিন জানান, এখন এলসি খুললে লাভ তো দূরের কথা; অর্ধেক পুঁজিও থাকবে না। এছাড়া ভারতীয় রফতানিকারকরাও রুপীর বাজার স্বাভাবিক হওয়ার পর এলসি খুলতে বলেছেন। তাই আপাতত আমদানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন তারা। দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান যশোরের নওয়াপাড়া উপজেলার সিডল টেক্সটাইল বিডি লিমিটেডের প্রতিনিধি আইয়ুব হোসেন জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন তাদের ছয় থেকে সাত ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে। এখন রুপী বাতিল ও নতুন রুপী সঙ্কটের কারণে ভারতীয় আমদানিকারকরা ব্যাংকে টিটি করতে পারছেন না। এতে নতুন করে রফতানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশী কোন আমদানিকারককে ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য প্রথমে ভারতীয় রফতানিকারকের নামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পণ্যের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ ইউএস ডলার দিয়ে এলসি খুলতে হয়। ভারতীয় রফতানিকারকরা নিজের অর্থে ওই পণ্য কিনে বাংলাদেশে পাঠান। বন্দর থেকে পণ্য খালাস করার পর রফতানিকারকরা ব্যাংক থেকে আমদানিকারকের পাঠানো এলসির টাকা তোলেন। কিন্তু এখন ভারতীয় ব্যাংকে পর্যাপ্ত নতুন নোটের সরবরাহ না থাকায় তারা এলসির পাওনা টাকা ওঠাতে পারছেন না। ফলে লোকসানের ভয়ে এলসিও করতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশী পণ্য রফতানির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। বেনাপোল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর এলসি শাখার প্রধান কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন জানান, অনেক আমদানিকারক তাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে ভারতীয় রুপী বাতিলে বাংলাদেশী টাকার মান আগের চেয়ে কমে গেছে। এতে লোকসানের ভয়ে তারা আপাতত এলসি খুলছেন না। ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি মাসের ১ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত বেনাপোল শাখায় ১৩ জন আমদানিকারক এলসি খুলেছেন। আর রুপী বাতিলের পর ৭ থেকে ১৯ নবেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১০টি এলসি খোলা হয়েছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রায় ট্রেডার্সের মালিক প্রদীপ কুমার রায় জানান, ৫০০ ও হাজার রুপী বাতিলের ফলে ব্যাংকগুলোতে নোটের সরবারহ কম। এজন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কারেন্ট এ্যাকাউন্ট হোল্ডার ব্যবসায়ীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রুপী উঠাতে পারবেন। আর সেভিংস এ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা ২৪ হাজার টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু এ পরিমাণ রুপী দিতেও হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তিনি আরও জানান, কেউ হয়তো ৩০ লাখ টাকার পণ্য রফতানি করতে চান, কিন্তু তিনি মাত্র ৫০ হাজার টাকা তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। যা সেভাবে কাজে আসবে না তার। তাই আপাতত অনেকের মতো তিনিও বাণিজ্য বন্ধ রেখেছেন। বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপার) আব্দুস ছামাদ জানান, ১ থেকে ২ নবেম্বর পর্যন্ত ২২৫ ট্রাক বাংলাদেশী পণ্য ভারতে রফতানি হয়। রুপী বাতিলের ঘোষণার পর ১৩ ও ১৪ নবেম্বর রফতানি হয় মাত্র দেড়শ’ ট্রাক। একইভাবে কমেছে আমদানিও। প্রসঙ্গত, ৮ নবেম্বর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি ওই দিন রাত ১২টা থেকে ৫০০ এবং ১০০০ রুপী বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর হয়রানি, দুর্ভোগ ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাসপোর্ট যাত্রী ও আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।
×