ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খোকন তালুকদার

দৈনন্দিন জীবনে প্রবন্ধ সাহিত্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২১ নভেম্বর ২০১৬

দৈনন্দিন জীবনে প্রবন্ধ সাহিত্য

বাংলা সাহিত্য রীতির যে সকল শাখা প্রশাখা রয়েছে তন্মধ্যে প্রবন্ধের অবস্থান সবার শেষে। দিনে দিনে এর অবস্থান আরও নিচে নেমে আসছে। প্রবন্ধের লেখক যেমন সীমিত তেমনি এর পাঠকও। অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যের এই দিকটি অবহেলার তলানিতে পরে আছে সে আমাদের জ্ঞাতসারেই হোক আর অজ্ঞাতসারেই হোক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যারা প্রবন্ধ লিখেন ঘুরেফিরে তারাই প্রবন্ধ পড়েন। সাহিত্যেরও এই দিকটির প্রতি আমাদের যে কত অবহেলা, অবজ্ঞা, তা আমরা বিগত বইমেলাগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। যেখানে গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই বের হচ্ছে শত শত সেখানে প্রবন্ধের মাত্রাটা কত তা প্রশ্ন রাখে। কত? হাতেগোনা কয়েকটা পাওয়া যাবে। আসলে প্রবন্ধের প্রয়োজনীয়তা কেন? কেন আমরা প্রবন্ধে আগ্রহী হব? কী লাভ প্রবন্ধ পড়ে? আমাদের কাছে তা এখনও বোধগম্য হয়ে উঠেনি। গল্প, কবিতা, উপন্যাস যদি মনের খোরাক হয়, তাহলে জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তার খোরাক হচ্ছে প্রবন্ধ। যা খুবই জরুরী। প্রবন্ধ মানেই তো অভাব ( ঈৎরংরং) বোধের কথা। অভাবটা আসলে কীসে? তাও প্রশ্ন বটে। অভারটা সব জায়গাতেই। রূপটা শুধু ভিন্ন। তাই চাই প্রবন্ধের সার্বজনীনতা। অভারটা মুক্তির, ঐক্যের, সৃষ্টির, জাতির, জাতীয়তাবাদের, জাতীয়তাবোধের, স্বাধীনতার। স্বাধীনতার জন্যও স্বাধীনতা থাকা চাই। চাই ঐক্য, সৃষ্টি, জাতি, জাতীয়তাবাদ, জাতীয়তাবোধ। চাই মুক্তির উপায়। কে এনে দেবে তা? আমাদেরই এসবের উপায়ান্তর বের করতে হবে। প্রবন্ধ মানুষকে ভাবতে শিখায়, চিন্তা শক্তি বিকাশে সাহায্য করে, সচেতন করে সার্বিক বিষয়ে। এখানেই প্রবন্ধের আবশ্যকতা, সার্থকতা। গল্প, উপন্যাস, কবিতা মানুষের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, সুখ, শান্তি, ভালবাসার পরিচায়ক হিসেবে কাজ করে। সুখ, শান্তি, ভালবাসা এসব বাদ দিয়ে যদি আমরা বাকি বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি তাহলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। সমাজ জীবনে মানুষের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা এই সব উপাদানগুলো গল্প, কবিতা, উপন্যাসের মাধ্যেমে আমাদের হ্রদয়কে ভেদ করে। মনের খোরাক জোগায়। কিন্তু জ্ঞানের? জ্ঞানের আহার পাওয়া যাবে এই সব দুঃখ, কষ্ট, বেদনা লাগবের উপায়ান্তর বের করার মাধ্যমে। তাই প্রবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি চাই প্রচার এবং প্রসার। বড়কে আরও বড় করা যেন আমাদের ধ্যান-জ্ঞান না হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, প্রমথ চৌধুরী, কাজী আবদুল ওদুদ, মোতাদের হোসেন চৌধুরী ওনাদের পরিচয় আমাদের কাছে হয় কবি না হয় উপন্যাসিক। কেন? এরাও তো প্রবন্ধ লিখেছেন। তবে পরিচয়টা প্রবন্ধকার হিসেবে নয় কেন? ঋৎধহপরং ইধপড়হ, ঠরৎমরহরধ ডড়ড়ষভ, এবড়ৎমব ঙৎবিষষ, অফফরংড়হ ধহফ ঝঃববষব এরা তো আমাদের কাছে উপন্যাসিক হিসেবে আসেনি। এসেছে প্রবন্ধকার হিসেবে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো কেন? প্রশ্ন থেকে যায় এখানেই। কথা আসতে পারে ওনারা তো ইংরেজী-সাহিত্যের। তা ঠিক। কিন্তু ওনারা ইংরেজী-সাহিত্যের লোক হয়েও যদি বাংলা সাহিত্যে অধিক পঠিত হয় আমাদের ক্ষেত্রে তা কেন ওল্টা হবে? এ আমাদের ব্যর্থতা। আমরা আমাদের প্রবন্ধকে সার্বজনীন স্বীকৃতি দিতে পারিনি। তারা পেরেছে। তবে এখন আমাদের দু’এক জনের লেখা এখন ইংরেজীতে অনুবাদ হচ্ছে। এটা আশার বাণী বটে। তবে তা আরও আগেই দরকার ছিল। কিন্তু এদের পরে যারা প্রবন্ধ লিখেছেন বা লিখছেন, তাদের অবস্থানটা কোথায়? সেটা ভাববার বিষয়। বর্তমানে অনেক শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, সুশীল শ্রেণীর কয়েকজন প্রবন্ধ লিখছেন। তা প্রবন্ধপ্রেমীদের মনে আশা জাগাচ্ছে।
×