ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামিল উর রহমান

বেস্ট ফ্রেন্ড ফর লাইফ হাজব্যান্ড এ্যান্ড ওয়াইফ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২১ নভেম্বর ২০১৬

বেস্ট ফ্রেন্ড ফর লাইফ  হাজব্যান্ড এ্যান্ড ওয়াইফ

‘বেস্ট ফ্রেন্ড ফর লাইফ, হাজব্যান্ড এ্যান্ড ওয়াইফ। বন্ধু হিসেবে ভালবেসে তোমায় গেঁথেছি আমারও হৃদয়ে, পুরোটা জীবন কাটাতে চায় তোমারই শুভ্র ছোয়াতে।’ বিয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন জীবনের। বাঙালী ছেলে বা মেয়ের জীবনে বিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট্ট থেকে বড় হয়ে ওঠা, পড়ালেখা করা, নিজের পায়ে দাঁড়ানো আর সব শেষে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। বাস্তবতার এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রতিনিয়ত আমরা ছুটে চলেছি। বিয়ে মানেই নতুন এক জীবন, শুরু নতুন এক অভিজ্ঞতার। জীবনে মধুর এক সময় পার করার বাস্তবতা, যে জীবনের সঙ্গী প্রিয়তমা ছাড়া আর কেউই হতে পারে না। বিয়ে মানে পরস্পরকে জানা, বন্ধুত্বকে আরও ঘনিষ্ঠ করা। পথচলার সহযাত্রী সেই হতে পারে যে ভাল বন্ধু হতে পারে। মনের ভাব, হৃদয়ের যত না বলা কথা, পাওয়া না পাওয়ার এক অসীম চাহিদা, ভালবাসার গহীন আর শুভ্র মাধুর্যতা শুধুমাত্রই তার সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায় যে হৃদয়ের এক অংশ। সেই মনের মানুষকে পেতে সবটুকুই যেন দিতে রাজি দুজনে। মানুষ একবারই জন্ম নেয়, বার বার নয়। হয়ত বা দিনটি হারিয়ে যাবে কোন এক অজানা ক্যালেন্ডারের পাতায় কিন্তু হারাবেনা কখনও মনেরও খাতায়। বিয়ে মানেই ফ্যাশন। ফ্যাশনের ছোঁয়া। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিরা কিনা যতটা ফ্যাশনকে তুলে ধরে তার থেকে হাজারো গুণ বেশি খেয়াল রাখতে হয় বর আর কনেকে। কেননা মধুর এই সময়তো বার বার আসে না। সেই আদিযুগ থেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে ফ্যাশনের রীতি, বর কনেকে মেলে ধরার রীতি চলে আসছে। সময়ের সঙ্গে তা পরিবর্তন হয়েছে, লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আর তাই এই সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই বর কনের এক নতুনত্ব প্রকাশের জায়গা। বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে বরের ড্রেস আপ সবাইকে মুগ্ধ করার মতো। বরের পোশাকের ছোঁয়ায় মনে হয় যেন রাজপুত্র তার আসনে রাজ্য চালাচ্ছে। ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বরের পোশাকে প্রথমেই আসে কোট, স্যুট, কমপ্লিট শার্ট। ব্রাউন, ব্ল্যাক কিংবা হোয়াইট। নিজের পছন্দের রঙের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া নিজেকে। অদ্ভুত এক সুন্দর লুক চলে আসে এই পোশাকে। হাতের ঘড়িটাও হওয়া চায় ব্র্যান্ডের। কোটের সঙ্গে শার্টের কালারটাও ম্যাচিং করতে কেউ ভুলেন না। আর নতুন সব ডিজাইনের সু তো আছেই। এদিকে এসব পোশাকের নিয়ে অনেকে বিয়ের সময়টাকে রাঙিয়ে তুলছেন পছন্দের শেরোয়ানি দিয়ে। পাগড়ি আর তার সঙ্গে হাতের কাজ করা শেরোয়ানি এ যেন এক আভিজ্যাতের প্রতীক। সঙ্গে জুতাটাও হওয়া চায় রাজকীয় স্টাইলের। অনেকে আবার পাইজামা পাঞ্জাবি দিয়েও বিয়ের সময়কে নিজেকে করে তুলছেন রাজপুত্র করে। এত গেল ছেলেদের পোশাক অন্য দিকে মেয়েরাও কম পিছিয়ে নেয়। বিয়ে মানেই লাল বেনারসি শাড়ি। বলা যায় শাড়ি ছাড়া বিয়ের পিড়িতে বসায় অযৌক্তিক। শাড়ির রঙ, হাতের কাজ, কাঁচের টুকরোর কাজ আর ঝলকানি মানেয় আগাম জানিয়ে দেয় শুভ বার্তার। অন্যসব পোশাককে ছাপিয়ে দিতে পারে বাঙালীর নারীর শাড়ি। নারী যেন এই পোশাকে খুঁজে পায় তার নিজেকে। সঙ্গে মাথার ঘোমটা থাকলে তো মনে হতেই পারে এ যেন এক সপ্নের রাজকন্যা। তবে অনেকে ইদানীং হলিউড স্টাইলকেও ফলো করছেন আবার অনেকে ঝুকেছেন ইন্ডিয়ান পোশাকের উপরও। লেহেঙ্গা দিয়ে সাজাতে ভুল করছেন না তারা আর হারিয়ে ফেলছেন নিজেকে এসব পোশাকের জাদুতে। আর হাতে বাহারি ডিজাইনের মেহেদি তো থাকবেই। রাজপুত্র আর রাজকন্যার হৃদয়ের গভীর ভালবাসার আদান প্রদান হলে রাজ দরবার পেতেই পারে তাজমহলের ছোঁয়া। ঠিক তেমনি বিয়েতে বর কনে তাদের ফ্যাশনের সব টুকু দিয়ে সাজিয়ে দখল করে নিতেই পারে সেই তাজমহলের আসন। যতই সাজুন আর শাড়ি পরুন, গহনা ছাড়া কি বউ সাজ পূর্ণ হয়? এক সময় বিয়ের গয়না মানেই ছিল গা ভর্তি ভারি স্বর্ণালঙ্কার। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গয়নার ফ্যাশন ট্রেন্ডেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। তাই ঐতিহ্যবাহী ভারি গয়নার বদলে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন হালকা নকশার ট্রেন্ডি গয়না। বিয়ের গয়না শুধু সাজগোজের উপকরণ নয়। এটা মায়ের বাড়ির আশীর্বাদ বা শ্বশুরবাড়ির উপহার। আগে বিয়ের গয়না মানেই ছিল সোনার গয়না। সোনার আকাশছোঁয়া দাম আর ফ্যাশন পরিবর্তনের কারণে বিয়ের গয়নায় জায়গা করে নিয়েছে রুপা, গোল্ড প্লেটেড গয়না, পাথরের গয়না, মুক্তো এমকি হীরাও। তবে সোনার গয়নার আবেদন কমেনি এতটুকুও। এখনও বাঙালী বধূ মানেই সোনার গয়নায় মোড়া। তবে আগের মতো শুধু হলুদ আর সাদা সোনার গয়নার বাইরে এখন গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পেটানো খাঁটি গিনি সোনার বদলে এসেছে কিছুটা হালকা ডিজাইনের সোনার সঙ্গে পাথর। পুঁতি, কুন্দন বা মুক্তার মিশেলে তৈরি গয়না। আপনার বিয়ের শাড়ির কালারের সঙ্গে মিলিয়ে স্টোন বা পুঁতি বসিয়ে নিতে পারেন। এখনকার ট্রেন্ড সেটাই। এছাড়াও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গোল্ডের গয়নায় মিনা করিয়ে নিতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন রুবি, পান্না, টোপাজের মতো দামি পাথর। রোজ গোল্ডের সঙ্গে মুক্তা সুন্দর মানাবে। আপনার মায়ের বা দাদির ট্রেডিশনাল গয়নাগুলোকে পাথর, পুঁতি বসিয়ে বানিয়ে ফেলুন হাল ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই। সোনার গয়না কিনতে পারেন বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, রাইফেল স্কয়ার বা গুলশান পিংক সিটি থেকে। রেডিমেড কিনতে পারেন বা নিজের পছন্দ অনুযায়ী বানিয়ে নিন। কোন শাড়িতে কোন গয়না- কাতান, বেনারসি, জামদানি, মসলিন এসব দেশী শাড়ির সঙ্গে ট্রেডিশনাল সোনার গয়না বেশি মানাবে। সিফন, জর্জেট, নেট শাড়ির সঙ্গে ভাল মানাবে পাথর, পুঁতি বা হীরার গয়না। গয়নায় জমকালো ভারি কাজ থাকলে কিছুটা হালকা কাজের শাড়ি বেছে নিন। এতে গয়নার সৌন্দর্য বেশি ফুটে উঠবে।
×