ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পারে ইঞ্জিনসহ ৭ বগি লাইনচ্যুত ॥ রেল যোগাযোগ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ নভেম্বর ২০১৬

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পারে ইঞ্জিনসহ ৭  বগি লাইনচ্যুত ॥ রেল যোগাযোগ  বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপারে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় ইকো পার্কের কাছে মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাত বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রেললাইনে সিগন্যাল ত্রুটির কারণে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।। এদিকে, লাইনচ্যুত হবার পর থেকে সেতুর পূর্বপাড়ে নীলসাগর ও একতা এক্সপ্রেস এবং পশ্চিমপারে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসসহ তিনটি ট্রেন অপেক্ষমাণ রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী মোট ১৩টি ট্রেন চলাচল। ফলে ট্রেনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বগি লাইনচ্যুতির পর সয়দাবাদ স্টেশন মাস্টার পালিয়ে গেছে। বিকেলে পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার খায়রুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধারের জন্য ঈশ্বরদী থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।। লাইনচ্যুত বগি রেলপথ থেকে সরিয়ে ফেলার কাজও শুরু হয়েছে। তবে কতক্ষণের মধ্যে লাইন সচল হবে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সাঈদ ইকবাল জানান, দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মালবাহী ট্রেনটি ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর প্রথমে ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। পর্যায়ক্রমে ইঞ্জিনের পিছনে থাকা ছয়টি বগিও লাইনচ্যুত হয়। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ের সন্নিকটে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকার ইকোপার্ক এলাকায় মালবাহী একটি ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। বগি লাইনচ্যুতির খবর পেয়ে পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও রেলের নিরাপত্তা কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু সেতু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ হোসেন জানান, দিনাজপুর থেকে চাল বোঝাই ট্রেনটি সেতুর পশ্চিমপাড় এলাকায় পৌঁছলে ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকা থেকে উত্তর-দক্ষিণবঙ্গগামী সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও জানান, ট্রেনটির মালামালের নিরাপত্তার জন্য সেতুর পশ্চিম থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে। সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ আলী জানান, ট্রেনটি মিটারগেজে চলছিল কিন্তু লাইনটি ছিল ব্রডগেজে। লাইন ম্যানুয়ালে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার আব্দুল গফুর লাইনটি চেঞ্জ না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে তিনিও ট্রেনটিতে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনকেও দায়ী করেন। লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধার এবং ট্রেন চলাচল করতে কত সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এমনকি সারারাতও লাগতে পারে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ট্রাফিক এ্যান্ড সিকিউরিটি ম্যানেজার মেজর (অব) রুহুল আমিন বলেন, ২৫টি বগি নিয়ে মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠতেই এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ওভার লোডিংয়ের কারণে লাইন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে লোহার রেললাইনও। তার মতে যদি এই মালগাড়ি সেতুর ওপরে ওঠার পর এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে জাতীয় সম্পদ বঙ্গবন্ধু সেতুর বড় ধরনের ক্ষতি হতো। এ সময় সেতুর রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী প্রকৌশলী ওয়াসিম আলী, নিরাপত্তা ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে ঢাকাগামী চাল বোঝাই ট্রেনটি সেতুর সন্নিকটে দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর থেকে চালক ও ট্রেনের স্টাফদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার স্থান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে সয়দাবাদ রেল স্টেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত স্টেশন মাস্টার আব্দুল গফুরও পলাতক আছেন।
×