ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান ও কথায় ছায়ানটের সুফিয়া কামাল স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ নভেম্বর ২০১৬

গান ও কথায় ছায়ানটের সুফিয়া কামাল স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুধু কবি হিসেবে আপন পরিচয়কে সীমাবদ্ধ রাখেননি সুফিয়া কামাল। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। জননী সাহসিকা হিসেবে বলেছেন নারী জাগরণের কথা। একই ভাবে সংস্কৃতিচর্চায় রেখেছেন অনন্য অবদান। সেই সূত্রে পালন করেছেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব। রবিবার এই মহীয়সী নারীর প্রয়াণবার্ষিকীতে ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। হেমন্তের সন্ধ্যায় সুফিয়া কামালকে নিবেদিত স্মারক বক্তৃতা এবং একক ও সম্মেলক গানে স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। কবির প্রতি ভালবাসার বার্তায় মিলনাতনজুড়ে ভেসে বেড়ায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুল প্রসাদ সেনের সুর। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সুফিয়া কামালকে নিবেদিত বক্তৃতা দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। তিনি বলেন, ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক সরকার রবীন্দ্র শতবর্ষ উদযাপনে বাধা দেয়, তারই প্রতিবাদে সুফিয়া কামালের প্রচেষ্টায় ১৯৬২ সালে ছায়ানট গঠিত হয়। তিনি আরও বলেন, সুফিয়া কামালকে একক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রাখা অসম্ভব। দুর্ভাগ্য তাঁকে আজীবন তাড়া করেছে। নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁর পথচলা। বেগম রোকেয়ার সঙ্গে বাল্যকালেই সুফিয়া কামালের পরিচয় হয় এবং তাঁর অনুপ্রেরণায়ই সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি সার্বিকভাবে মানুষের মুক্তি চাইতেন। আজকের প্রজন্ম তাঁর কাছ থেকে মুক্তির প্রেরণা পাবে। ‘জননী সাহসিকতার উৎস সন্ধানে : প্রসঙ্গ ১৯৭১’ শিরোনামে সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা। সুফিয়া কামাল কিভাবে ‘জননী সাহসিকা’ হয়ে উঠলেন বক্তৃতায় তার বিশদ ব্যাখ্যা দেন তিনি। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা। সম্মেলক কণ্ঠে গীত ‘ধন ধান্যে পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’। এরপর সুমা রায় শোনান দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ‘আজি নূতন রতনে’। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘তুমি যে হে প্রাণের বধূ’ গেয়ে শোনান জান্নাত ই ফেরদৌসী। ‘একবার গাল ভরা মা ডাকে’ গানটি পরিবেশন করে ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা। অতুল প্রসাদ সেনের ‘আজি বাঁধিনু তোমার তীরে’ গেয়ে শোনান ঝুমা খন্দকার, ‘আমায় রাখতে যদি’ শোনান বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, ‘পাগলা মনটারে তুই বাঁধ’ শোনান সত্যম কুমার দেবনাথ, ‘মম মনের বিজনে’ গেয়ে শোনান খায়রুল আনাম শাকিল, ‘ওগো নিঠুর দরদী’ শোনান সিফায়েত উল্লাহ মুকুল। রজনীকান্তের ‘যদি পার হতে তোর’ গানটি পরিবেশিত হয় সম্মেলক কণ্ঠে । ‘সখা তোমারে পাইলে’ গানটি শোনান নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, ‘মধুর সে মুখখানি’ গেয়ে শোনান সুমন মজুমদার। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় এ স্মরণানুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ॥ বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং সৃষ্টিশীলতার বিকাশ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার উšে§ষ, ও চিন্তাশীল মনন গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলো ‘আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) রবিবার সকালে শুরু হয়েছে এ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এ উপলক্ষে সকালে টিএসসি মিলনায়তনে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (এ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রফেসর মোঃ আকতারুজ্জামান। এ সময় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেনÑ ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক একেএম মহিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর ড. মাহবুবা নাসরিন, ঢাবি মাইম এ্যাকশনের মডারেটর ড. ফাদার তপন কামিলুস ডি রোজারিও। উদ্বোধনী বক্তব্যে মোঃ আকতারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশকেও এখন সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গীবাদের সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি দেশে এ জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক হামলাসহ নানান ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলো এসব ঘটনা ঘটানোর জন্য তরুণসমাজকে বেছে নিচ্ছে। তাই এ তরুণদের যদি সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত রাখা যায় তাহলে দেশের কা-ারি তরুণরা তাদের থেকে দূরে থাকবে। আর এ উদ্দেশ্য নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আয়োজন। উদ্বোধনী আয়োজন শেষে দুই দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার প্রথম দিনে টিএসসি মিলনায়তনসহ টিএসসির বিভিন্ন কক্ষের মোট পাঁচটি ভেন্যুতে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সঙ্গীত (উচ্চাঙ্গসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, ভক্তিমূলক গান ও লোকসঙ্গীত), যন্ত্রসঙ্গীত (তবলা, বাঁশি) ছাড়াও নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি, অবিরাম গল্প বলা, বিতর্ক (বাংলা ও ইংরেজী), উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায় থেকে মোট ৫৩১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছে। এ আয়োজন করেছে ‘ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র- টিএসসি’ এবং ‘ঢাবি সাংস্কৃতিক সংসদ-ডিইউসিএস’। সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে ‘ঢাবি বিতর্ক সংসদ’ ও ‘ঢাবি মাইম এ্যাকশন’। আজ সোমবার এ প্রতিযোগিতার সমাপনী সন্ধ্যায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন কবি হাসান হাফিজ ॥ প্রথমবারের মতো ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রবর্তিত ‘ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬’ পেলেন কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ। এ বছর প্রকাশিত ‘অভিমান মৃত্যু ও পাথর’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তাঁকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। রবিবার বিকেলে ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কারের সম্মাননা স্মারক, সনদ ছাড়াও বিজয়ীকে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ডিআরইউ সভাপতি জামালউদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ কবি আসাদ চৌধুরী, ‘ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬’ জুরি বোর্ডের প্রধান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ডিআরইউর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাফি কামাল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক মাহবুব আলম ও জাহিদ নেওয়াজ জুয়েল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পুরস্কার পাওয়ার জন্য কাজ করলে কষ্ট পেতে হতে পারে। কিন্তু আনন্দের জন্য কাজ করলে পুরস্কার এমনিতেই আসে। আমাদের তরুণরা যে সামনে এগোবে সে পথটি কেউ তৈরি করছেন না। কারণ আগামীর পথ দেখানোর মানুষটি এখন আর খুব দেখা যায় না। যারা আছেন তারা শুধু বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় নয়, জীবনাচার দিয়ে তরুণদের উৎসাহিত করতে হয়। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার ভেতরে থাকে তথ্য। আর তথ্যের ভেতর থাকে সত্য। তথ্যকে আবিষ্কার করা সাংবাদিকের কাজ। আর সত্যকে আবিষ্কার করা সাহিত্যের কাজ। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমার দেখা সকল প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ডিআরইউ ভিন্ন। এখানে পৃথক দলীয় মতাদর্শ থাকলেও পেশাদারিত্বের প্রশ্নে, সংগঠনের প্রশ্নে সবাই এক। সে কারণেই এ সংগঠনের প্রতি মানুষের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আসাদ চৌধুরী বলেন, আমার ভাবতে ভাল লাগছে ডিআরইউ সাহিত্যে পুরস্কার প্রদান করছে। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস যে, একদিন এ পুরস্কার একটি সম্মানজনক জায়গা তৈরি করবে। আয়োজকরা জানান, ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ২৭ জন ডিআরইউ সদস্যের বই জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে একজনকে ডিআরইউ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাকি সবাইকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। উদীচীর স্মরণে অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিম ॥ শ্রদ্ধা-ভালবাসায় কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিমকে স্মরণ করল উদীচী। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত স্মরণ সভায় দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও প্রগতিশীল রাজনীতিতে অধ্যাপক আশারাফ-উজ-জামান সেলিমের অবদানের কথা স্মরণ করেন বক্তারা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ ও ঢাকা মহানগর সংসদ ছাড়াও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ স্মরণ সভায় অংশ নেন। স্মরণ সভার শুরুতে দুটি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা গেয়ে শোনান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ এবং ‘ও আলোর পথযাত্রী এখানে থেমো না’। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিমের স্মৃতিচারণ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক এএন রাশেদা, সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের অন্যতম সংগঠক শ্যামল বিশ্বাস, অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিমের কন্যা সাজিয়া নুসরাত জামান প্রমুখ। স্মরণ সভা সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিমের মৃত্যুতে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারানোর ব্যথা অনুভব করছে উদীচী পরিবার। একজন সফল শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিম। তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিমের। এরপর বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের সশস্ত্র সংগ্রামে নিজেকে নিযুক্ত করেন তিনি। স্বাধীনতার পরে অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিম দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় ছিলেন অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান সেলিম।
×