ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেরণার অনন্ত উৎস সুফিয়া কামাল

জননী সাহসিকার দেখানো পথে নারী, অহর্নিশ সংগ্রামে থাকার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ নভেম্বর ২০১৬

জননী সাহসিকার দেখানো পথে নারী, অহর্নিশ সংগ্রামে থাকার প্রত্যয়

মোরসালিন মিজান ॥ সুফিয়া কামাল নেই। অনেক আগেই গত হয়েছেন। এরপরও প্রাণবান তিনি। অত্যুজ্জ্বল আলোর ঝলকানি হয়ে ফিরে আসছেন। বার বার। প্রিয় কবিতায় প্রকাশিত। একইভাবে যে কোন ধরনের সঙ্কটে ধ্রুবতারা হয়ে পথ দেখিয়ে চলেছেন। বাঙালী নারীর অধিকার বুঝে নেয়ার সংগ্রামে তিনি পথিকৃৎ। মানবমুক্তি আন্দোলনের অগ্রসেনানী। বার বার তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন নারীরা। রবিবার জননী সাহসিকার সাহস নিজেদের মাঝে সঞ্চারিত করে আরও একবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তারা। এদিন সুফিয়া কামালের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শপথের হয়ে ওঠে। মহিলা পরিষদ মিলনায়তনে বিকেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। ৬৯টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্লাটফর্ম থেকে সুফিয়া কামালের আদর্শ ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। এখন অদ্ভুত এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। হঠাৎই কেমন বদলে যাচ্ছে সব। সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা। নারীর উপর নির্মম নিষ্ঠুর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সকলের সামনে কুপিয়ে জখম করা হচ্ছে তরুণীকে। পাঁচ বছরের কন্যা শিশুটিকে ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। পুরুষ নামের অভিশাপ তাকে ঘ্রাস করছে যখন তখন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আবারও শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রন্ত হচ্ছেন। এমনকি সাঁওতালরা ঘরহীন। এই অবস্থায় সুফিয়া কামালের চেয়ে বড় প্রতিবাদ আর কে হতে পারেন? সঙ্গত কারণেই গতানুগতিক স্মরণানুষ্ঠানে আটকে না থেকে সুফিয়া কামালকে আরও বেশি করে জানার ওপর জোর দেয়া হয় অনুষ্ঠানে। তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার পাশাপাশি নীরবে দাঁড়িয়ে কিছু কথা যেন যেন সেরে নেন আয়শা খানম, সুলতানা কামাল, সাইদা কামাল, অ্যারোমা দত্ত, জাকিয়া কে হাসান, রঞ্জন কর্মকার, নাসিমুন আরা হক মিনু, হেলেন মনীষা সরকার, এ্যাডভোকেট রওশন জাহান পারভিন, সেলিনা আহমেদ, চঞ্চনা চাকমা, চিররঞ্জন সরকার প্রমুখ। আরও অনেকে এসেছিলেন। সকলেই সুফিয়া কামালের কাছে নত হন। অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেন। মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্রনাথের অমর সঙ্গীতে সুফিয়া কামালকে শ্রদ্ধা জানান প্রখ্যাত গায়িকা ইফফাত আরা দেওয়ান। পরে বিভিন্ন বক্তা সুফিয়া কামাল, আজকের বাস্তবতা ও করণীয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও কবিকন্যা সুলতানা কামাল বলেন, সুফিয়া কামাল চাইতেন বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক মানে সম্মানে মাথা উঁচু করে বাঁচবেন। তার সে চাওয়া আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীন দেশে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে। মন্দির ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ থেকে পরিষ্কার যে, সুফিয়া কামালের আদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। এর দায় এবং দায়িত্ব আমাদের সকলকে নিতে হবে। যদি সুফিয়া কামালকে সত্যিই আমরা ভালবেসে থাকি তবে সেই স্বাক্ষর আমাদের রাখতে হবে। যে কোন সমস্যা সরাসরি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। পরিষদ সভাপতি আয়শা খানম বলেন, আজ আমরা কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ হতাশ, কেই রাগান্বিত আবার কেউ আশান্বিত। কিন্তু আজকের এই সভার মূল বিষয়ই হচ্ছে আমরা সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কবি সুফিয়া কামালের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তের সাথী কবি সুফিয়া কামাল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শীতল দেহ ছুয়ে আমরা শপথ নিয়েছিলাম এই সংগ্রাম আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। নারী আন্দোলন এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
×