ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাইকোর্টের রুল

বিনা বিচারে দেড় যুগ ৪ বন্দী জেলে, কোর্টে হাজিরের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২১ নভেম্বর ২০১৬

বিনা বিচারে দেড় যুগ ৪ বন্দী জেলে, কোর্টে হাজিরের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনা বিচারে দেড় যুগ ধরে কারাগারে থাকা আরও চারজনের সন্ধান মিলেছে। তাদের আগামী ৪ ডিসেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিনের অপেক্ষায় প্রায় দেড় যুগ ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ওই চারজন হচ্ছে- চাঁন মিয়া, মকবুল, সেন্টু ও বিল্লাল। বিষয়টি নজরে আনার পর রবিবার এ আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ। একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ওই চারজনকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনটি রবিবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্র্ট লিগ্যাল এইডের আইনজীবী কুমার দেবুল দে ও আইনুন নাহার সিদ্দিকা। এরপর তাদের হাজির করার নির্দেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে বিনা বিচারে দেড় যুগ আটক চার ব্যক্তিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আদেশের পর আইনজীবী কুমার দেবুল দে সাংবাদিকদের বলেন, এই চারজনের একজন ১৮ বছর ধরে কারাগারে আছেন। একজন ১৭ বছর ধরে, আর দুজন আছেন ১৬ বছর ধরে। প্রতিবেদনটি নজরে আনলে আদালত চারজনের জন্য পৃথক রুল জারি করেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি আবারও শুনানির জন্য আসবে। ওইদিন নিম্ন আদালতের নথি হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে এ আইনজীবী জানান। এর আগে ১৫ নবেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন ১৭ বছর বিনা বিচারে কারাগারে থাকা ঢাকার সূত্রাপুরের ৫৯, গোয়ালঘাট লেন এলাকার মোঃ শিপন মিয়া। একইভাবে তার বিষয়টি গত ৩০ অক্টোবর নজরে আনা হলে শিপনকে ৮ নবেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঐ দিন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দীর্ঘ ২২ বছর আগের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১৭ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে থাকা মোঃ শিপনকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন প্রদান করেন। সেদিন আদালত তার আদেশে বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং আদালত ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের সকলের জন্য লজ্জাকর। এই দায় রাষ্ট্রের এবং বিচারকের।’ এদিকে ১৬ নবেম্বর বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক বন্দীদের তালিকা চেয়ে দেশের সকল কারাগারে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটি। পাঁচ ও দশ বছরের অধিক সময় ধরে যারা আটক রয়েছেন তাদের বিষয়ে দুটি তালিকা প্রস্তুত করে কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। কারাগারগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র গরিব ও অসহায় মানুষদের সুপ্রীমকোর্টে বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনার ভার বহন করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গণমাধ্যম সূত্রে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি অপরাধে বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় ধরে আটক থাকার সংবাদ সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়া এসব মামলা সাক্ষ্যগ্রহণসহ নানাবিধ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে কার্যত সাজা হওয়ার পূর্বেই আটক বন্দী দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করছেন। এরই মধ্যে ৫৬ বন্দীর তালিকা আইজি (প্রিজন্স) কার্যালয়ে পাঠিয়েছে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ। বিনা বিচারে কারাগারে আটক নতুন চারজনের একজন চাঁন মিয়া। গত আঠারো বছর ধরে কারাগারে বন্দী তিনি, যার হাজতি নম্বর ২৮৩৪। ঢাকার শ্যামপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে ১৯৯৯ সাল থেকে বিনা বিচারে বন্দী তিনি। এ দেড় যুগে চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার কোন অগ্রগতিই হয়নি। মামলাটি বর্তমান বিচারাধীন ঢাকার পরিবেশ আদালতে। একই ঘটনা মাদারীপুরের মকবুল হোসেনেরও। ৬৬৬ পরিচয়ধারী মকবুল রাজধানীর উত্তরা থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০০০ সালে। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৭ বছর মামলাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মকবুলে পক্ষে আইনী লড়াই করারও কেউ ছিলেন না। মতিঝিলের এজিবি কলোনির সেন্টু কামাল গ্রেফতার হন ২০০১ সালে। সর্বশেষ গত মাসেও তাকে হাজির করা হয়েছিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরে ৫৯ কার্যদিবস আদালতে হাজির করা হলেও মামলা শেষ হয়নি। মামলা শেষ হয়নি কুমিল্লার বিল্লার হোসেনেরও। তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় বিল্লাল হোসেন কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন ২০০২ সাল থেকে। তার মামলাটিও বিচারাধীন আছে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।
×