ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতর্ক ছাড়া শুরু হলো প্রাথমিক পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২১ নভেম্বর ২০১৬

প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতর্ক ছাড়া শুরু হলো প্রাথমিক পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন রকম জটিলতা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশব্যাপী শুরু হলো প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। দেশের সর্ববৃহৎ এ পাবলিক পরীক্ষায় গত কয়েক বছর প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক উঠলেও এবার সে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এবার বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণ ও বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ শিক্ষার্থী। তবে নিবন্ধন করেও প্রথম দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৬ জন। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেয়ে প্রচার বেশি হয়। যারা এ কাজ করেন প্রচারে তারা উৎসাহ পান। তাদের কাছে এ অপরাধ তাই রোমাঞ্চকর মনে হয়। প্রথম দিন ইংরেজী পরীক্ষা চলাকালে রাজধানীর লালবাগের অগ্রণী স্কুলে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, এবার আমরা এমনভাবে প্রশ্ন সংরক্ষণ করেছি যাতে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। প্রতারক চক্রের আর সুযোগ নেই রোমাঞ্চ উপভোগ করার। প্রশ্নপত্র নির্বাচনের পদ্ধতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পুরো প্রক্রিয়া আমরা আপনাদের বলব না। তবে প্রশ্নের অনেক সেট তৈরি করা হয়েছে। সরকার শুধু প্রাথমিকে নয়, যেকোন পরীক্ষার ক্ষেত্রেই প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী প্রতারক চক্রকে কঠোরভাবেই প্রতিহত করছে। অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এবার মোট নয়টি স্কুলের এক হাজার ২৩৬ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্র ২২৭ এবং ছাত্রী ১০০৯। সরকারের দেয়া পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১০ সালের পর প্রাথমিকে সারাদেশে শিক্ষার্থী বেড়েছে। এবার পঞ্চম শ্রেণীতে পরীক্ষা দিচ্ছে ৩২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী, অথচ এই ব্যাচেই প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল ৪২ লাখ। এ অবস্থায় প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী নেই। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেন, কখনও কখনও এমনটা হতেই পারে। অন্য স্কুলে যেতে পারে। অন্য দেশেও চলে যেতে পারে। মাইগ্রেশনের কারণেও এমনটা হতে পারে। কারণ গ্রাম থেকে মানুষ শহরে যাচ্ছে। হিসেবেও গড়মিলও থাকতে পারে। এটা কোন বড় বিষয় নয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর মোট সাত হাজার ১৯৪ কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সাত হাজার ১৮৩ কেন্দ্র দেশে এবং দেশের বাইরে রয়েছে আরও ১১ কেন্দ্র। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ৬৪ জেলাকে এবার বিশেষ আট অঞ্চলে ভাগ করে আট সেট প্রশ্নে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিচ্ছে সরকার। দুর্গম এলাকার ২১০ কেন্দ্রেও বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। যার নম্বর ০২৯৫১৫৯৭৭ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নম্বর ০২৫৫০৭৪৯৩৯, ০১৯৭৯০৮৮৭১৯, ০১৭১২৪১৩১০০ এবং ই-মেইল: (ফফবংঃধনফঢ়ব@মসধরষ.পড়স) এদিকে বরাবরের মতো এবারও রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত স্কুলকে কেন্দ্র করে ছিল একই আমেজ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রগুলোতে অভিভাবকদের ভিড় তুলনামূলকভাবে কম হলেও রাজধানীসহ শহরের কেন্দ্রজুড়ে ছিল অভিভাবক বিশেষত মায়েদের ভিড়। স্কুলের বাইরে রীতিমতো যানজট লেগে গিয়েছিলম কোথাও কোথাও। সন্তানের অপেক্ষায় বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন শত শত অভিভাবক। এবার সমপনীর প্রতি পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বেশি রাখা হয়েছে। আগামী ২৭ নবেম্বর পরীক্ষা শেষ হবে। প্রাথমিক সমাপনীতে এবার ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ জন পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ ছাত্র এবং ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪১ ছাত্রী। আর ইবতেদায়ীর দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭১৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ ৫৭ হাজার ৩১৯ ছাত্র এবং এক লাখ ৪২ হাজার ৩৯৬ ছাত্রী। প্রাথমিকে দুই হাজার ৮৫৭ এবং ইবতেদায়ীতে ৯০ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী/অটিস্টিক) পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এদিকে চলতি বছরেই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত হয়। একইসঙ্গে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা ন্যস্ত হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। ফলে শিক্ষার্র্থী ও অভিভাবকরা আশা করেছিল, এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণী শেষে পিইসি পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে। একবারে অষ্টম শ্রেণী শেষে অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিক সমাপনী। সেই হিসেবে মন্ত্রণালয়ও পঞ্চম শ্রেণী শেষের সমাপনী পরীক্ষা তুলে দিতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মন্ত্রিসভা তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। আগামীতে কবে এই পঞ্চম শ্রেণী শেষের সমাপনী পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে তা জানাতে পারছে না মন্ত্রণালয়ও।
×