ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুদকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ নভেম্বর ২০১৬

দুদকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সাবেক ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বর্তমান ‘দুদক’ প্রতিষ্ঠা করে। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কেটে গেছে এক যুগ। দুর্নীতি বিরোধী রাষ্ট্রীয় একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৩ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। তার ৪ বছরের মেয়াদ পূরণের আগেই সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় লে. জে. (অব) হাসান মশহুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। তবে হাসান মশহুদ চৌধুরীরও মেয়াদ পূরণ করা হয়নি। এরপর সাবেক সচিব গোলাম রহমানের নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো পুনর্গঠন করা হয় দুদক। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনিই প্রথম দুদকে মেয়াদ শেষ করে বিদায় নেন। এরই মধ্যে আইনে সংশোধনী এনে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদকাল ৫ বছরে উন্নীত করা হয়। এরপর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দুদক কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান। চলতি বছর ১৩ মার্চ তিনি অবসরে গেলে সর্বশেষ চেয়ারম্যান হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনিই দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। গত এক যুগে সংস্থাটির অন্যতম কাজের মধ্যে দু’বার দুদক আইন সংশোধন করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন (সংশোধনী)-২০১৩ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০১৬। এর মাঝে ২০০৭ সালে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দুদক আইনে সংশোধনী আনা হলেও পরে জাতীয় সংসদ সেটি অনুমোদন করেনি। পরে ২০০৯ সালে কয়েকটি ধারা-উপধারায় সংশোধনী আনা হলে উচ্চ আদালত সেটি অবৈধ ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, এক যুগের পথ চলায় নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক, ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের ট্রুথ কমিশনে প্রেরণ ছিল ঐ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। পরে উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তৎকালীন গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই জামিনে মুক্তি পান ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বেখসুর খালাস পান। তবে ২০০৯ সালের পর আলোচিত হিসেবে একপর্যায়ে পুনর্গঠিত দুদক অনেকটাই নখদন্তহীন হয়ে পড়ে। এ সময়ে প্রথমে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পরে ‘নির্দোষ’ হিসেবে প্রভাবশালীদের দায়মুক্তি, অনুসন্ধান-তদন্তের নামে হয়রানি, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আলোচনার পাশাপাশি নানা সমালোচনাও রয়েছে দুর্নীতবিরোধী দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এরপর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ইকবাল মাহমুদের যোগ দেয়ার পর স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আসামি গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। এতে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া এ চেয়ারম্যানের আমলেই প্রথমবারের মতো দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে দুদক কর্তৃক ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের গণমানুষের সঙ্গে তাদের মতামত গ্রহণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। যার কাজ চলমান রয়েছে। ইকবাল মাহমুদ সমাজ থেকে দুর্নীতিকে স্থায়ীভাবে নির্মূলের পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে সংস্থাটির পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করা হবে। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় কমিশনের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও কমিশনের পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়ানো হবে। সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে কমিশনের চেয়ারম্যান কমিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। এছাড়া বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, আলোচনা সভা, কমিশনের ছয়টি অনুবিভাগের মহাপরিচালকগণ তাদের বাৎসরিক বাস্তবায়িত কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একইসঙ্গে কমিশনের চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় এবং ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। সূত্র জানায়, জনসচেতনতা বাড়াতে কমিশনের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বিটিআরসির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ‘দেশপ্রেমে শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’ শীর্ষক ক্ষুদে বার্তা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
×