ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ সামিটের ২৩ দফা কুয়ালালামপুর ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশ সামিটের  ২৩ দফা  কুয়ালালামপুর  ঘোষণা

তৌহিদুর রহমান, কুয়ালালামপুর থেকে ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ চেয়েছেন প্রবাসীরা। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনে প্রবাসীদের জন্য একটি বিশেষ শাখা তৈরির জন্য সুপারিশ করেছেন তারা। সরকার থেকে প্রবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন নীতি ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাদের মতামত গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে। রবিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে প্রথম বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে ২৩ দফা ঘোষণায় এসব বলা হয়েছে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা) দুই দিনব্যাপী এই সামিটের আয়োজন করে। রবিবার সমাপনী অনুষ্ঠানে ২৩ দফা সুপারিশ ঘোষণা করা হয়। কুয়ালালামপুরের বেরজায়া টাইমস্কয়ার হোটেলে বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার পর্যটন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী দাতো সেরি মুহম্মদ নাজরি বিন আবদুল আজিজ, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম, অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. জয়নুল আবেদীন, মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ, সহ-সভাপতি ড. জিন্নুরাইন জায়গীরদার, কোষাধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান মাহবুব প্রমুখ। সমাপনী অনুষ্ঠানে আয়েবার পক্ষ থেকে ২৩ দফা ঘোষণা করা হয়। সমপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রবাসে জন্মগ্রহণ করা দ্বিতীয় প্রজন্ম যেন বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সুযোগ না হারান, সে বিষয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে তাদের। সে কারণে সরকার থেকে প্রস্তাবিত নাগরিক আইন প্রণয়নে প্রবাসীদের মতামত নেয়ার আহ্বান জানান তারা। সামিটের ঘোষণাপত্রে বলা হয়, প্রবাসে থাকা অনেক বাংলাদেশী অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছে। সরকার তাদের বিভিন্নভাবে কাজে লাগাতে পারে। সরকারের যেকোন প্রয়োজনে তারা সাড়া দেবেন। এতে আরও বলা হয়, প্রবাসীদের জন্য বন্ড চালু করা হলে সরকার ও প্রবাসী উভয়েই লাভবান হবে। কোন দেশে কত বাংলাদেশী প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন, বিভিন্ন মিশন থেকে ডাটাবেজ তৈরির সুপারিশ করেছেন তারা। প্রতিটি প্রবাসীকে বাংলাদেশের পজিটিভ ইমেজ তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মিশনের পাশাপাশি প্রবাসী কমিউনিটিও তাদের নিজেদের উদ্যোগে ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেবে। সেখানে প্রতিটি প্রবাসী নাগরিকের জীবন বৃত্তান্ত, নাম-ঠিকানা থাকবে। বাংলাদেশের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরকে আধুনিকায়ন ও বন্দরের সেবার মান উন্নীত করতে সুপারিশ করেছেন তারা। এর ফলে দেশের ইমেজ আরও বাড়বে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। পোশাক শিল্প খাতের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদন খাতে বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা খাত বিকাশে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছে সামিট। এর ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার মান আরও বাড়বে বলে ঘোষণা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সামিট। যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, সেসব দেশে বাংলাদেশের কনস্যুলার অফিস খোলার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন খাত বিকাশে সরকারকে আরও উদ্যোগ নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে সামিট। রবিবার সামিটের শেষ দিনে অভিবাসন, তথ্য প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের ওপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেমিনারে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনার শেষে কুয়ালালামপুর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ সামিট শেষ হয়। উল্লেখ্য, শনিবার এই সামিটের উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে দুই শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী এই সামিটে যোগ দেন।
×