ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধৃত দুই পুলিশ কনস্টেবল রিমান্ডে

কাওরানবাজারের ডিম ব্যবসায়ীদের টাকা ছিনতাই হচ্ছে ৫ বছর!

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ নভেম্বর ২০১৬

কাওরানবাজারের ডিম ব্যবসায়ীদের টাকা ছিনতাই হচ্ছে ৫ বছর!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাওরানবাজারের ডিম ব্যবসায়ীদের রাস্তায় আটকে এর আগেও একাধিকবার টাকা ছিনতাই করেছে পুলিশ। এতদিন ধরা না পড়লেও শুক্রবার ভোরে ঘটনাক্রমে পুলিশ ধরা পড়ে যায়। এ ঘটনায় হাতেনাতে দুই পুলিশ কনস্টেবল আটক হওয়ায় এখন বের হয়ে আসছে কেঁচো খুুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো কাহিনী। এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে গ্রেফতারকৃত দুই পুলিশ কনস্টেবল লতিফুজ্জামান ও রাজিকুল ইসলামকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা বিষয়টি অনায়াসেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনতে সক্ষম হন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করে জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে তারা প্রায়ই পড়েন। ভোরে আড়ত থেকে টাকা নিয়ে যাবার সময় পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী ধরার অজুহাতে তাদের আটক করে শরীর তল্লাশি করে হাতিয়ে নিত নগদ টাকা পয়সা। কাওরানবাজার ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আমানতুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটছে। পুলিশের পোশাক পরে কখনও ছিনতাই, কখনও ডাকাতি হয় ব্যবসায়ীদের গাড়িতে। গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে এর মাত্রা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা ভাবত তারা ভুয়া পুলিশ। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের চোখ খুলে গেছে। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর লালবাগে ডিম দিয়ে ভাড়া করা একটি ভ্যানে করে টাকা নিয়ে আব্দুল বাসির মনা তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়তে ফিরছিলেন। তার সঙ্গে ৪০ হাজার টাকা ছিল। এ সময় পান্থকুঞ্জের পাশে মোটরসাইকেলে থাকা দুই পুলিশ কনস্টেবল তাদের গতিরোধ করেন। মনা বলেন, ‘তারা আমাদের জিজ্ঞেস করে ‘কই গেছিলি? গাঁজা খাস? পকেটে গাঁজা আছে? এ সময় আমি টাকা ও পকেটে থাকা চাবি বের করলে তারা টাকা টান দিয়া মোটরসাইকেল টান দেয়। আমি পেছন থেকে আনসারের ওই সদস্যকে ঝাপটে ধরি। মোটরসাইকেল পড়ে গেলে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার দেই। তবে পুলিশের পোশাক দেখে অনেকেই সাহায্যের জন্য আসতে চায়নি। পরে আশপাশের লোকজন ও দায়িত্বরত পুলিশ এসে শাহবাগ থানায় খবর দেয়। শাহবাগ থানার একজন কনস্টেবলকে ধরতে পারলেও অপরজন পালিয়ে যায়। এরপর ডিম ব্যবসায়ীরা সবাই শাহবাগ থানায় চলে যান। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক গ্রেফতারকৃত কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওই কনস্টেবল তার নাম জানায় লতিফুজ্জামান। পালিয়ে যাওয়া কনস্টেবলের নাম রাজিকুল খন্দকার। শুক্রবার সন্ধ্যার পর গুলশান এলাকা থেকে পুলিশ পলাতককেও গ্রেফতার করেছে। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। পুলিশ জানায়, তারা দুজনেই ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের গুলশান জোনে কর্মরত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদিকে কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, ডিমের গাড়িগুলো খুব ভোরে বের হয়। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এখান থেকে ডিম সরবরাহ করা হয়। রাজধানীর কাওরানবাজার, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী ও কুড়িল বিশ্বরোডে গাড়িগুলো পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ব্যক্তিরা তল্লাশির নাম করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে। গত সপ্তাহে জাহাঙ্গীর গেটের সামনে বসে সফর আলী ডিমের আড়তদারের গাড়ি থামিয়ে পুলিশ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরও এক সপ্তাহ আগে মহাখালী থেকে আশেক হারুন নামে এক ডিম ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে। এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। পুুলিশ জানায়, ঘটনায় দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রমনা জোনের সহকারী কমিশনার ইহসানুল ফেরদাউস জানান, ভুক্তভোগীরা দুই ছিনতাইকারীর একজনকে আনসার সদস্য মনে করলেও আমরা খবর পেয়েছি তিনিও পুলিশের কনস্টেবল এবং ট্রাফিকের উত্তর বিভাগেই কর্মরত। এ ধরনের ঘটনা আগে শুননি। পুলিশ বাহিনী কোন ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নেবে না। আমরা অতীতের মতো এসব ঘটনায় জিরো টলারেন্স দেখাব। কোন ছাড় দেয়া হবে না। দুদিনের রিমান্ডে ॥ এ দুই পুলিশ কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার দুপুরে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক দেবরাজ চক্রবর্তী তাদের মহানগর মুখ্য হাকিম সারাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে উপস্থিত করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত এ আদেশ দেন।
×