ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট উদ্বোধন

প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ নভেম্বর ২০১৬

প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

তৌহিদুর রহমান, কুয়ালালামপুর থেকে ॥ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে বিদেশী প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে। প্রবাসীরাও এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তাদের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে প্রথম বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এই আহ্বান জানান। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা) দুই দিনব্যাপী এই সামিটের আয়োজন করেছে। কুয়ালালামপুরের বেরজায়া টাইমস্কয়ার হোটেলে বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটের উদ্বোধন করেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে দুই শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী এই সামিটে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক বিদেশী প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবানও হচ্ছে। বাংলাদেশের বাইরে যেসব প্রবাসী বসবাস করছেন, তারাও দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দেশে বিনিয়োগের এই সুযোগ নিতে পারেন। এতে করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবেন, একইসঙ্গে দেশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও আরও গভীর হবে। হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ প্রবাসীদেরও কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরো বলেন, হাজার বছর ধরে বাংলায় ক্ষুধা থাকলেও সেটা এখন আর নেই। এখন বাংলাদেশের মানুষ নিজের ক্ষুধার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চাল রফতানি করছে। এটা মনে রাখতে হবে, এখন বাংলাদেশ অনেক উঁচুতে অবস্থান করছে। আমাদের ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের অবদান ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। প্রবাসীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে আরও কি কি ধরনের অবদান রাখতে পারেন, সেটা আলোচনার জন্যই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটের আয়োজন করা হয়েছে। এই সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে একটি রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান। সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ আমি দেখেছি। সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এখন আমরা একটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। এই বাংলাদেশ দেখে আমি গর্বিত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আরো বড় হবে। হেলাল হাফিজের কবিতার ভাষায় বলতে চাই, এই বাংলাদেশ আরও উঁচুতে উঠবে। সেই উচ্চতাকে জায়গা দেয়ার জন্য আকাশকে আরও ওপরে উঠতে হবে। আবেদ খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খাতে আমাদের বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও অবদান রাখতে পারেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিদেশে যেসব প্রবাসীরা থাকেন, প্রতিটি প্রবাসীরই জীবনের একটি গল্প আছে। সেই গল্প হলো তাদের দাঁড়াবার গল্প। তারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এখন তারাই আবার বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকিয়েছেন। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সামনে দুইটি বিশেষ দিন অপেক্ষা করছে। আগামী ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন হবে। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে। এই দুইটি বিশেষ দিন সামনে রেখে বিশ্বের বুকে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফরহাদ আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসীরাও এখন গ্লোবাল সিটিজেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছেন। এসব প্রবাসীরা সেসব দেশে যেমন অবদান রাখছেন, আবার নিজের দেশেও অবদান রাখছেন। এটা বিশেষ একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তিনি বলেন, আগামী বিশ্বটা হবে এশিয়ার। এশিয়াই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। সে কারণে বাংলাদেশও বিশেষ ভাবে অগ্রসর হবে। আর এই অগ্রসর হওয়ার দিকগুলো নিয়ে এখনই আমাদের ভাবতে হবে। সামিটের উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন আয়েবার সভাপতি ড. জয়নুল আবেদীন, বিশিষ্ট সাংবাদিক নঈম নিজাম, সাইফুল আলম, আহমেদ জোবায়ের, শ্যামল দত্ত, পীর হাবিবুর রহমান, ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আয়েবার কোষাধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান মাহবুব, প্রবাসী বাংলাদেশী আহমেদুস সামাদ চৌধুরী, মকবুল হোসেন মুকুল, তাহমিমা ওয়াটসন, কামরুল চৌধুরী, এবিএম সালাহউদ্দিন, আবু রেজা খান, ড. এম এ রহিম প্রমুখ। উদ্বোধন পর্ব উপস্থাপনা করেন বিবিসির বাংলা বিভাগের প্রধান সাবির মুস্তাফা। আজ রবিবার সামিটে বিভিন্ন বিষয়ে চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনার শেষে কুয়ালালামপুর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ সামিট শেষ হবে।
×