ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আখক্ষেতে আগুন

সাঁওতালদের পক্ষের মামলা নিয়ে গাইবান্ধায় নানা প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২০ নভেম্বর ২০১৬

সাঁওতালদের পক্ষের মামলা নিয়ে গাইবান্ধায় নানা প্রশ্ন

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে ॥ গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে দায়ের করা মামলা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। এ মামলা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা এখন টক অব দ্য টাউন। আদিবাসী ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ওই মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে সাপমারা ইউনিয়নের তরফকামাল গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় মৃত নায়েব আলীর ছেলে ছরোয়ার হোসেন (৪১) ও আবদুর রহমানের ছেলে আকবর আলীকে (৫০)। এর আগে বৃহস্পতিবার কাটাবাড়ি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় সাদেকুল ইসলাম, লেবু মিয়া ও জিয়াউর রহমানকে। রামপুর মাহলীপাড়া গ্রামের স্বপন মুরমু’র দায়ের করা মামলায় এ নিয়ে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরের লোকজনও রয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকার জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে সাঁওতালদের অভিযোগ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। উল্লেখ্য, সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত ৬শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাঁওতাল পল্লীতে ১৩ নবেম্বর এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়ার সামনে সাঁওতালরা স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল, কাটাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক শাহজাহান আলী প্রধানসহ আরও স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এব্যাপারে সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি তারা এড়িয়ে যান। অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে পরবর্তীতে বিপদ হতে পারে। এদিকে এ ধরনের মামলার বিষয়টি নিয়ে এখন গোবিন্দগঞ্জসহ সাঁওতাল পল্লীতে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। আদিবাসী সাঁওতালদের পক্ষে মামলা দায়েরকারী স্বপন মুরমু সাঁওতালদের ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির কোন নেতা নয়। পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলা সংলগ্ন ঘোড়াঘাট এলাকার মুরালীপাড়া গ্রামের প্রকৃত বাসিন্দা বলে সাঁওতাল নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়। তারা ধারণা করছেন বিশেষ প্রভাবশালী মহলের স্বার্থ রক্ষায় তাকে দিয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে গোবিন্দগঞ্জসহ গোটা জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই মামলার পর পুলিশের ভূমিকাও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে পুলিশ সূত্রে এব্যাপারে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন সাঁওতাল বা ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাদের পক্ষে মামলা দেয়ার জন্য পুলিশ একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম আদিবাসী ভূমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাসকে শনিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে জানান, স্বপন মুরমু’র দায়েরকৃত মামলাটি মূলতঃ স্থানীয় কিছু লোকজনকে হয়রানি করতে এবং সাঁওতালদের প্রশ্নবিদ্ধ করতেই দায়ের করা হয়েছে। তবে তাদের কমিটির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ধান কাটা এখনও শুরু হয়নি ॥ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের যে একশ’ একর জমিতে বসতি স্থাপন করে সাঁওতালরা আমন ধান রোপণ করেছিল তা ইতোমধ্যে পাকতে শুরু করেছে। হাইকোর্ট ধান কাটার নির্দেশ দেয়ার পর মহিমাগঞ্জ চিনিকল কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে সাঁওতাল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত ধান কাটতে আসছে না। এব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল আউয়াল শনিবার জানান, প্রায় একশ’ একর জমিতে সাঁওতালরা ধান চাষ করেছে। সুশৃঙ্খলভাবে ধান কাটতে এবং ফসলের মালিকানা নির্ধারণের জন্য তাদের জরুরী ভিত্তিতে তালিকা জমা দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত সাঁওতালদের পক্ষ থেকে তালিকা জমা দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম আদিবাসী ভূমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাসকে জানান, ওইসব জমিতে ব্যক্তিগতভাবে কোন সাঁওতাল ধান চাষ করেন নাই। কমিটির নামে সংঘবদ্ধভাবে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। সেজন্য কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধান কাটা হবে। তবে এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এছাড়া এখনও অনেক জমির ধান পাকতে বাকি আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে সাধারণ সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তাদের আবাদি জমির চারপাশে চিনিকল কর্তৃপক্ষ কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে। যা তাদের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত করছে। সুতরাং তারা চান ধান কাটার আগেই চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই কাঁটা তারের বেড়া অপসারণ করুক। ত্রাণ বিতরণ ॥ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আখক্ষেতে অগ্নিকা-॥ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের আখক্ষেতে শনিবার দুপুরে এক অগ্নিকা-ে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। খামারের ডিজিএম জানান, দুপুর দেড়টার দিকে খামারের ফকিরগঞ্জ এলাকার ১১ আই ব্লকের জমিতে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়, এতে খামারের ৩৩ বিঘা জমির দ-ায়মান আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অগ্নিকা-ের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
×