ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিতে ইউএনএইচসিআরের প্রস্তাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া

সেনা অভিযানে দলে দলে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা ॥ অনুপ্রবেশের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ নভেম্বর ২০১৬

সেনা অভিযানে দলে দলে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা ॥ অনুপ্রবেশের চেষ্টা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে দলে দলে পালাচ্ছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী, শিশু ও পুরুষ। রোহিঙ্গাদের মধ্যে সর্বত্র চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চিরুনি অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নরনারী রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়েছে। তবে বেসরকারী পর্যায়ে এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। এদিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের বহুমুখী চেষ্টা চালানোর প্রেক্ষাপটে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। সর্বশেষ নাফ নদী অতিক্রম করে কক্সবাজার অঞ্চলে প্রবেশকালে শুক্রবার দু’দফায় ২০৩ রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বিজিবি। প্রথম দফায় ৩৬ শিশুসহ ১২৫ ও দ্বিতীয় দফায় ৭৮ রোহিঙ্গাকে আটকে দিয়ে বিজিবি তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এদিকে খাদ্যাভাব নিয়ে বাড়িঘরবিহীন ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা রাখতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে যে আহ্বান শুক্রবার জানানো হয়েছে তা নিয়ে কক্সবাজার অঞ্চলজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এমনিতেই এখনও বিপুলসংখ্যক শরণার্থী রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার দফায় দফায় কথা দিয়েও তা রক্ষা করেনি। অর্থাৎ ফেরত নেয়নি। এছাড়া অব্যাহত সহিংসতার মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টের ফাঁকফোকরে এমন কোন দিন নেই যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে না। বিজিবি তাদের নজরদারি যতই কঠোরভাবে আরোপ করুক না কেন, সীমান্তের অরক্ষিত অঞ্চল দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঠেকানোর কোন উপায় নেই। অপরদিকে সীমান্তের ওপার থেকে শনিবার সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গাবিরোধী সে দেশের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের চিরুনি অভিযানের পাশাপাশি বর্বর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। গৃহবন্দী রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। অনুরূপভাবে জেলেও আছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। গত ১০ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা বেসরকারীভাবে আরও বেশি। নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন চালানোর ব্যাপারে মুখ খুলছে না। অতীতের সামরিক জান্তা সরকার যেভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন চালিয়েছে সুচির সরকারও এর ব্যতিক্রম নয় বলে সে দেশের বিভিন্ন এনজিও ও সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সূত্রে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। এদিকে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কর্মান্ডার লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ নাফিউর রহমান জানান, মিয়ানমারের ফাদংচা হয়ে নাফনদী সীমান্ত অতিক্রম করে শুক্রবার রাতে সাবরাং নয়াপাড়ার সংলগ্ন ৫নং সুইচ গেট এলাকায় নৌকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ১২৫ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৩৬ শিশু, ৬১ নারী ও ২৮ পুরুষ ছিল। তিনি আরও জানান, আটক রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রাখাইন প্রদেশে চলমান পরিস্থিতিতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের সচেতন মহল ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের প্রাণপণ চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি সীমান্তে টহল আরও জোরদার করেছে। তবে বিজিবির টহলকে ফাঁকি দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গার বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কড়া ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে। যে কারণে তাদের অনুপ্রবেশ কঠিন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য জাতিসংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। যেহেতু বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যাটি জিঁয়ে থাকার পেছনে ইউএনএইচসিআরের কতিপয় কর্মকর্তার ইন্ধন রয়েছে বলে বহু অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে সহিংসতার ঘটনা সেটি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে বাংলাদেশের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। জাতিসংঘ চাইলে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এ ব্যাপারে সমাধানে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
×