ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু কার্যক্রম দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার ;###;অর্থায়ন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকায় হতাশ পরিবেশবাদীরা

মারাকেশ ঘোষণায় ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২০ নভেম্বর ২০১৬

মারাকেশ ঘোষণায় ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের দাবি

কাওসার রহমান, মারাকেশ, মরক্কো থেকে ॥ প্যারিস চুক্তির আলোকে বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রমকে বিশ্বব্যাপী দ্রুত এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মারাকেশ জলবায়ু সম্মেলন। মারাকেশ ঘোষণায় নির্মল প্রযুক্তির সহায়তায় বিলিয়ন ও মিলিয়ন ডলারের বহুমুখী প্যাকেজ এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পানি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথা ঠাঁই পেয়েছে নতুন ঘোষণায়। সেই সঙ্গে সরকারগুলো ২০১৮ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের রুল বুক প্রণয়নের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, যা আগামী দশকগুলোতে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় আস্থা, সহযোগিতা ও সাফল্য নিশ্চিত করবে। তবে মারাকেশ ঘোষণা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, দুই সপ্তাহব্যাপী আলোচনার পর অর্থায়ন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ঘোষণা দেয়নি উন্নত দেশগুলো। জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। ক্লাইমেট জাস্টিস গ্রুপ বলছে, জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারী খাতের অর্থায়ন সরকারী অর্থায়নের বিকল্প হতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এবং অভিযোজন কার্যক্রমে সরকারী অর্থায়ন জরুরী। মারাকেশে উন্নত দেশগুলো তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। অবশ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্য হলো, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোরালো দাবি ঠাঁই পেয়েছে মারাকেশ ঘোষণায়। এই প্রথম জলবায়ু সম্মেলনে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও সরকার মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। মারাকেশ ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে বিশ্বের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিনিয়োগকারী এবং নগর ও স্থানীয় সরকারগুলো একযোগে কাজ করার নতুন অঙ্গীকার করেছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ১৬৫ দেশের সাব-ন্যাশনাল সরকারী ক্লাব ‘আন্ডার টু কোয়ালিশন’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০২০ সাল নাগাদ তাদের কার্বন নির্গমন ৮০ শতাংশ হ্রাস করবে। উল্লেখ্য, ১৬৫ দেশের সম্মিলিত জিডিপি প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্ব অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশ। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার এই ১৬৫ দেশের জনসংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এছাড়া জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ চল্লিশটিরও বেশি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ঘোষণা দিয়েছে, তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি রাখার ক্ষেত্রে তাদের আহ্বান আরও জোরালো করবে। মারাকেশ ভিশন নামে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আরও একটি সংগঠন অঙ্গীকার করেছে। ’২০ ও ’৫০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নির্গমন কমাতে শতভাগ নবায়ণযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য অর্জন করবে। এছাড়া কানাডা, জার্মানি, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তাদের দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু কৌশল ২০৫০ বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জন করবে। শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে জন্ম নেবে স্বল্প কার্বণ নির্গমনের এক নতুন পৃথিবী। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতাজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতি তথা লস এ্যান্ড ড্যামেজ। এ বিষয়ে মারাকেশ সম্মেলনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির ব্যাপারে ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম অনুযায়ী ৫ বছরের একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হবে। এ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত, অভিবাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্থানান্তর ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ প্রসঙ্গে ইউএনএফসিসির নির্বাহী সেক্রেটারি প্যাট্রিসিয়া স্পেপানিশা বলেছেন, মারাকেশ জলবায়ু সম্মেলন প্যারিস চুক্তি কার্যকরে লক্ষ্য অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নে নতুন যুগের সন্ধান পাবে এ বিশ্ব। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো ’২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণে এখন থেকেই কাজ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতিকে ট্রিলিয়ন ডলারে রূপান্তর করতে হবে। জলবায়ু অভিযোজনের স্বার্থে ২০১৭ সালের মধ্যে অবশ্যই অর্থ সংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু অর্থ বিষয়ে মারাকেশ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট কোন ঘোষণা না এলেও কিছু দেশ এ্যাডাপটেশন ফান্ড ও গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডে অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। সম্মেলন চলাকালে এ্যাডাপটেশন ফান্ডে ৮১ মিলিয়ন ডলার ও ক্লাইমেট টেকনোলজি ফান্ডে ২৩ মিলিয়ন ডলারের ঘোষণা এসেছে। এছাড়া এ পর্যন্ত গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ২৫০ কোটি ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়েছে। আগামী জলবায়ু সম্মেলন জার্মানিতে ॥ মারাকেশ জলবায়ু সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি। তবে এতবড় সম্মেলন আয়োজনের অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় ফিজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জার্মানির সহায়তায় বন শহরে ’১৭ সালের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করবে।
×