ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষাতকারে দক্ষিণ আফ্রিকার গল্পকথক ভিউয়েলা মালুলিকি

সামাজিক নয়, বর্ণবাদ হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ নভেম্বর ২০১৬

সামাজিক নয়, বর্ণবাদ হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের এক অধিবেশনে কসমিট টেন্টে গল্প শুনিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গল্পকথক ভিউয়েলা মালুলিকি। তার গল্প বলা শেষে নিজ জীবনের গল্প আর বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন জনকণ্ঠের প্রতিনিধির সঙ্গে। তার সাক্ষাতকারে সহজাতভাবেই উঠে আসে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিষয়টি। তিনি বিষয়টিকে মূলত সামাজিকের চেয়ে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেই সঙ্গে বলেন, এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষেরা নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। ভিউয়েলা মালুলিকি একাধারে কথাশিল্পী, স্ক্রিপ্ট রাইটার ও অভিনেত্রী। তিনি ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়ারটারসর‌্যান্ড থেকে নাট্যকলায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১৪ সালে ব্রুনেল ইউনিভার্সিটিতে আফ্রিকান পোয়েট্রিতে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। ‘থিংস উই লস্ট ইন দ্য ফায়ার’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ‘স্প্যাম চ্যাম্পিয়ন অব দ্য ওয়ার্ড ও সাউন্ড-২০১৫ পোয়েট্রি লীগ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। লেখক হলেও নিজেকে গল্পকথক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন ভিউয়েলা মালুলিকি। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার সময়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তিনি বারবার নিজের লেখায় তুলে এনেছেন। বর্ণবৈষম্যের তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে তার লেখায়। তবে বলার চেষ্টা করেছেন, ভালবাসাই হলো বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা সামাজিক সমস্যার চাইতেও বেশি রাজনৈতিক সমস্যা। আমরা কালো বর্ণের মানুষরা রাজনৈতিকভাবে ও সাদা মানুষদের দ্বারা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কৃষ্ণাঙ্গদের একটা আলাদা সংস্কৃতি আছে। সেই সংস্কৃতিকেই প্রতিষ্ঠার জন্য কালো মানুষেরা কাজ করে চলেছে। আমিও সেটা করছি। আমার ক্ষোভ, প্রতিবন্ধকতা এসব বিষয়গুলো লেখার মধ্য দিয়ে বলার চেষ্টা করছি। তার পুরস্কারবিজয়ী বই ‘থিংস উই লস্ট ইন দ্য ফায়ার’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ কবিতার বইটিতে আমি মূলত কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা, নারীত্ব, আমার দেশকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। অনুবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যেটা বিশ্বাস করি, মাতৃভাষার কোন অনুবাদ হয় না। কারণ সেই অনুবাদের ভেতরে মাতৃভাষার আবেগ-অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। ঢাকা লিট ফেস্ট সম্পর্কে তিনি বললেন, সবাই খুব আনন্দ নিয়ে বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন, এটা আমার খুব ভাল লাগছে। সাহিত্য ছাড়াও গানের আসর, কবিতা পাঠসহ নানান আয়োজন রয়েছে এখানে। যাতে আমার মনে হচ্ছে শিল্প ও সাহিত্যের অনন্য মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। একজন ভাল গল্পকথকের কী গুণ থাকতে হয়- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে আমি জানি না কিভাবে ভাল গল্পকথক হতে হয়। কিন্তু আমি আমার গল্প বলার কথা মনে পড়লে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। তিনি যেভাবে ছোটবেলায় আমাকে গল্প শোনাতেন, সেভাবেই আমি গল্প শোনাই। বাংলা একাডেমি চত্বরে ঢাকা লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বেঙ্গল লাইটস অথারস লাউঞ্জে আলাপচারিতার শুরুতেই তিনি বললেন বাংলাদেশে আসতে পারায় তার খুশির কথা। তবে ব্যস্ততার দরুণ ঘুরে ফিরে এ দেশের মানুষ ও সংস্কৃতিকে জানতে না পারার বেদনাও ছিল তার কণ্ঠে। বললেন, হোটেল থেকে উৎসবস্থল ঘুরেই সময় পার হচ্ছে। রবিবার দেশে ফিরে যাচ্ছি। তবে এ উৎসবে আসা মানুষগুলোকে দেখে খুব ভাল লাগছে। সবার পোশাক-আশাক, আচরণ ও অভিব্যক্তি দেখে বাংলাদেশকে খুব রঙিন মনে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা এখানকার সবাই খুব বন্ধুত্বপরায়ণ।
×