ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী সিরিয়াল কোনভাবেই চালানো উচিত নয় ॥ ডি এ তায়েব

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২০ নভেম্বর ২০১৬

বিদেশী সিরিয়াল কোনভাবেই চালানো উচিত নয় ॥ ডি এ তায়েব

সময়ের ব্যস্ত ও নন্দিত অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ডি এ তায়েব। গত দুই দশক ধরে দুই হাজারেরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন পুলিশের উর্ধতন এই কর্মকর্তা। সরকারী উচ্চপদে আসীন এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চাকরিজীবনে যেমন সফল ঠিক তেমনি মিডিয়াতেও তিনি সমান সফল ও জনপ্রিয়। সম্প্রতি ‘ডিবি’ নাটকে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। তার পরিচালনায় আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে ধারাবাহিক ‘অনাকাক্সিক্ষত সত্য’। বৈশাখী টিভিতে অচিরেই প্রচার হতে যাচ্ছে ব্যয়বহুল মেগা ধারাবাহিক ‘লেডি গোয়েন্দা’। এছাড়া সম্প্রতি ‘সোনাবন্ধু’ নামে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয়, নির্মাণ এবং বর্তমানের মিডিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো দর্শক দেখছে না আপনি কী মনে করেন? ডি এ তায়েব : প্রথম কথা হচ্ছে বাংলাদেশের চ্যানেগুলোর নাটক দর্শকরা দেখছে না- এটা ঠিক না। বাংলাদেশেও ভাল ভাল নাটক ও ভালমানের অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রত্যেকটি নাটকই ভাল। দর্শকরা দেখছেনও। দু’একটা ছেলে তো ফেল করবেই। তবে আমাদের বেশিরভাগ নাটক ভাল। তবে এটা ঠিক, নাটক দেখানোর নিয়মটায় ঘাটতি আছে। বিশেষ করে আধুনিক কারিগরি জ্ঞান আমাদের কম হওয়ায় এ বিষয়ে আমরা ঠিক সেভাবে এগোতে পারছি না। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে আসল কথা হচ্ছে নাটক বা বিভিন্ন ভালমানের অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন বেশি দেখানোর জন্য মানুষ চ্যানেল চেঞ্জ করে ফেলে। যখন ফিরে আসে তখন আর ওই প্রোগ্রামটি পায় না। ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে না। তাছাড়া ধারাবাহিকের বিষয়ে দর্শকদের মধ্যে এটাকশনটা তৈরির ঘাটতি আছে। তবে বিরতিহীন নাটকগুলো কিন্তু চলছে এবং মানুষ দেখছে। এছাড়া ইউটিউবেও কিন্তু মানুষ নাটক দেখছে। টিআরপি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? ডি এ তায়েব : টিআরপি বলে কিছু নেই। আমি পারসনালি টিআরপিটাকে বিশ্বাস করি না। কারণ টিআরপিতে দেখা যাচ্ছে যে, যে চ্যানেলে ভাল অনুষ্ঠান হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের রেটও বেশি, বেশি মানুষ দেখছে; সেই চ্যানেল টিআরপিতে নেই। কারণ টিআরপির সঙ্গে তাদের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। টিআরপিকে তারা বেনিফিট করে দেয়, টিআরপি তাদের বেনিফিট এনে দেয়। টিআরপির নামে ব্যবসা চলছে। ব্যবসা আর ক্রিয়েশন একসঙ্গে হয় না। তবে আমরা অনেক কনসাস এইটাও এক সময় ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের স্যাটেলাইট জগতটা একেবারেই নতুন, ভারতের তুলনায় আমরা একদম পিছিয়ে। আমাদের নাটক ডেফিনেটলি ভাল, আমাদের চলচ্চিত্র ভাল। আমরা এগিয়েছি কম। তবে সব কিছু মিলে ইট উইল বি চেঞ্জ। আমি আশাবাদী। সম্প্রতি বিদেশী সিরিয়াল ডাব করে প্রচার নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? ডি এ তায়েব : আমি আসলে বিদেশী সিরিয়াল ডাব করে প্রচারের বিপক্ষে। আমার মায়ের ভাষা বাংলা, বাংলাদেশ আমার দেশ। আপনি তো আগে আপনার দেশের মাটিকে রক্ষা করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের বিদেশপ্রীতিটা যেন একটু বেশিই বেড়েছে। বিদেশী জিনিস, বিদেশী ভাষা ভাল লাগছে। ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা বিদেশী ভাষা বলছে, এটা যে কতবড় লজ্জার বিষয়। আমার নিজের যেখানে একটা ভাষা আছে, মায়ের ভাষা- সেটাকে আমরা এনকারেজ করছি। তবে এ বিষয় নিয়ে স্বল্পসংখ্যক লোক মাতামাতি করছে। আমি আশা করি তারা ফিরে আসবে। আমি মনে করি বিদেশী সিরিয়াল কোনভাবেই আমাদের দেশে চালানো উচিত নয়। ধারাবাহিক ‘লেডি গোয়েন্দা’ প্রসঙ্গে জানতে চাই- ডি এ তায়েব : সাহসী মেয়েদের ওপর বাংলাদেশে এই প্রথম ক্রইম ফিকশন নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, যা আজ বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে। আমরা এমনভাবে এটি নির্মাণ করছি এ দেশের দর্শক এমন নাটক আগে কখনও দেখেনি। নাটকটি রচনা করেছেন মাহবুবা শাহরীন, ফজলুল করিম, জি এম সৈকত। প্রযোজনা করেছে এসজি প্রোডাকশন। প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেন- এ প্রসঙ্গে কিছু বলেন। ডি এ তায়েব : এটা বলতে গেলে আমার প্রথম চলচ্চিত্র। এর আগে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। ‘সোনাবন্ধু’ পুরোপুরি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র। এটা চমৎকার একটি গ্রামীণ ও মৌলিক গল্পের চলচ্চিত্র। এটি এমন একটি গল্প যা পৃথিবীতে আর কোথাও এ ধরনের গল্প নাই। কোন কিছুরই অনুকরণ না কিংবা নকল না। নিজেদের গল্প, বাঙালীর গল্প, ঘরের গল্প, আমাদের যা কিছু কালচার, সব পাওয়া যাবে এ চলচ্চিত্রে। সব ধরনের দর্শকের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরা খুব ভাল অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে চিত্রনায়িকা পপি, সাম্প্রতিক সময়ের ক্রেজ পরিমণি দুই প্রজন্মের অভিনেত্রীকে একসঙ্গে করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখেছেন মাহবুবা শাহরীন, চিত্রনাট্য ও সংলাপ মমর রুবেল এবং পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীর আলম সুমন। তপন বসাকের প্রযোজনায় শুভ টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত চলচ্চিত্রটির উপদেষ্টা পরিচালক নাদিম মাহমুদ। আমরা এ চলচ্চিত্রটি নিয়ে বেশ আশাবাদী। শিল্পী ঐক্যজোটের কার্যক্রম নিয়ে বলেন। ডি এ তায়েব : শিল্পীদের একটা ইউনিটি থাকা দরকার, সারাদেশ থেকে শুধু না, বাইরের শিল্পীদের মধ্যে ঐক্য রাখা, তাদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন তৈরি, যোগাযোগ রক্ষায় কাজ করবে এ সংগঠন। এটার পেছনে টোটাল অবদান জিএম সৈকতের। আমি এর পেছনে আছি। এ অঙ্গনের মানুষের মধ্যে আমরা সমন্বয় করছি, ভবিষ্যতেও করব। কেউ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী না। আমরা সবাই একত্রে চলব, কাউকেই ফেলে দেব না। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের স্লোগান আমরা বাংলাদেশী, আমরা আমাদের পক্ষে, দেশের সংস্কৃতির পক্ষে, সংস্কৃতিমনাদের পক্ষে- তাদের কল্যাণে শিল্পী ঐক্যজোটের ব্যানারে আমরা কাজ করব। -সাজু আহমেদ
×