ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ইন্টারনেট গোয়েন্দাগিরি

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২০ নভেম্বর ২০১৬

ইন্টারনেট গোয়েন্দাগিরি

গুপ্তচরবৃত্তি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পেশা। সেই পেশার মস্তো বিবর্তন ঘটে গেছে। বলা যায় বিপ্লব ঘটে গেছে। পুরনো ধারার গুপ্তচরবৃত্তি বিদায় নিয়েছে বা নিচ্ছে এবং সেই জায়গায় এসেছে ডিজিটাল বা ইন্টারনেট গুপ্তচরবৃত্তি। এমন বিস্ময়কর রূপান্তর কল্পনাই করা যায় না। এই তো বিশ-পঁচিশ বছর আগের কথা। কি মামুলি ধরনেরই না ছিল গুপ্তচরবৃত্তির কৌশল! ১৯৯২ সালের দৃষ্টান্তটাই দেয়া যাক। সে বছরের বসন্তে ভাসিলি মিট্রোখিন নামে কেজিবির এক গুপ্তচর তার ব্যাগে করে কিছু সসেজ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন রিগার এক ফুটপাথ দিয়ে। সসেজের নিচে ব্যাগে ঠাসা ছিল সোভিয়েত গোয়েন্দা ফাইলের কপি। হাঁটতে হাঁটতে তিনি একসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে গিয়ে ঢুকেন। গোয়েন্দা ফাইলগুলো তিনি গোপনে রাশিয়া থেকে পাচার করে এনেছিলেন। ঐ বছরেরই শেষ দিকে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ মিট্রোখিন, তার পরিবার-পরিজন এবং তার বাড়ির মেঝের নিচে ট্রাকে ও দুধের কনটেইনারে লুকিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ কেজিবি রেকর্ড গোপনে পাশ্চাত্যে পাচার করে আনে। মিট্রোখিনের পাচার করা তথ্যাবলী নিয়ে পরে ‘মিট্রোখিন আর্কাইভস’ নামে বই বেরিয়েছিল। গুপ্তচরদের হাত দিয়ে রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার এবং পক্ষত্যাগের ঘটনা আরও অনেক আছে। তবে মিট্রোখিন যত গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাসে সেটা ছিল সর্ববৃহৎ। অবশ্য মিট্রোখিনের এই রেকর্ড ভেঙ্গে যায় ২০১৩ সালে যখন মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও ন্যাশনাল সিকিউিরিটি এজেন্সির (এনএসএ) প্রাক্তন কর্মচারী এ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন হাওয়াই থেকে হংকংয়ে পালিয়ে আসেন তার নিজের এক গোপন আর্কাইভ নিয়ে যেখানে ছিল এনএসএ’র ১৫ লাখ ক্লাসিফাইড ফাইল। স্নোডেন পরে উন্মোচন করেন কীভাবে এনএসএ ও তার সমগোত্রীয় ব্রিটিশ সংস্থা জিসিএইচকিউ সারা বিশ্বের টেলিফোন ও কম্পিউটারগুলো গোপনে আড়ি পাতছে ও নজরদারি করছে। স্নোডেনের অভিযোগ অবশ্য এই ছিল না যে বিদেশী এজেন্টরা পাশ্চাত্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে চুপিসারে ঢুকে পড়েছে। বরং তিনি দেখিয়েছেন যে, পশ্চিমী সংস্থাগুলো তাদের নাগরিকসহ বিশ্বের সাধারণ মানুষের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে। মিট্রোখিন টাইপ করা ট্রান্সক্রিপশনগুলো পাচার করেছিলেন আর স্নোডেন দেড় লাখ গোপন তথ্য এনেছিলেন ছোট্ট কয়েকটা পেনড্রাইভে। এ থেকেই বোঝা যায় কত গভীর ও ব্যাপক পরিসরে গুপ্তচরবৃত্তির ধারা বদলে গেছে। সোজা কথায় গুপ্তচরবৃত্তিতে বিপ্লব ঘটে গেছে। এই বিপ্লব অংশত নতুন প্রযুক্তির ফল। মিট্রোখিনের দিনগুলোতে গুপ্তচররা শর্টওয়েভ বেতার ও ডেডলেটার বক্সের সাহায্যে সাংকেতিক বার্তা পাঠাত। এখন সে জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন যার দ্বারা নিমিষে যে কোন সময় ও স্থানে গোপন বার্তা পাঠানো যেতে পারে। আজকের এই ইন্টারনেটের যুগে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির প্রসার ঘটে চলেছে। এখানে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য কোন একক ব্যক্তির ঘাড়ে দায় চাপানোর উপায় নেই। এখানে কাউকে ধরা পড়া বা গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি নিতে হয় না। আজকের সাইবার গুপ্তচরদের হদিস বের করা কঠিন। দায়ী সরকার ও সংস্থাগুলোরও এ সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করা সহজ। এজেন্টদের আজ প্রচ- শীতের মধ্যে গুপ্তচরগিরির জন্য বাইরে বেরোনোর দরকার পড়ে না। তাদের আর কষ্টসাধ্য ও অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ ফিল্ডওয়ার্ক করতে হয় না। বরং গুপ্তচররা আজ তাদের টার্গেট থেকে অনেক দূরে আরামদায়ক অফিসরুমে বসে কাজ করতে পারে। সাইবার ক্যাফেগুলো এক সময় পাশ্চাত্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গুপ্তচরবৃত্তির পছন্দের হাতিয়ার ছিল। কিন্তু স্নোডেন এ সংক্রান্ত গোপন কাহিনীগুলো ফাঁস করে দেয়ায় সাইবার ক্যাফেকে এখন বাদ দিয়েছে গুপ্তচররা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত নতুন নতুন প্রযুক্তি বের হওয়ায় ইলেক্ট্রনিক তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল ব্যবস্থাকে সম্পূূর্ণ বাদ দিয়ে জীবনযাপন করা এখন কঠিন। কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কের ব্যবহার হচ্ছে এমন যে কোন কাজ আজ অন্যের চোখে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। কিছু কারিগরি কৌশল জানা থাকলে অন্যের ই-মেইল হ্যাক করা কঠিন কিছু নয়! সামান্য কিছু টুইট করলে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা ও তাতে আড়িপাতা সম্ভব। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের দ্বারা বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য হাতিয়ে নেয়া যায়। প্রযুক্তি বিপ্লব আরও একটা কাজ করেছে। তা হলো গুপ্তচরবৃত্তিকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। তেমনি আবার সাধারণ মানুষের জীবনে গোপনে ঢুকে পড়ার নজিরবিহীন সুযোগ পেয়েছে। রাষ্ট্র এখন গুপ্তচর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এবং সেই রাষ্ট্রের আওতা ক্রমাগত প্রসারিত হয়ে চলেছে। সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কর্মকা- যত ব্যাপক আকার ধারণ করছে তেমনি তাদের মোকাবেলায় গুপ্তচরবৃত্তির পরিধিও বাড়ছে। প্রযুক্তির বদৌলতে রাষ্ট্রের চোখ এখন সর্বত্র নির্মিলিত। রাষ্ট্র এখন প্রত্যেকের সমস্ত কর্মকা- দেখতে পাচ্ছে এই ধারণাটাই নাগরিকদের দেহ-মনে শিহরণ জাগানোর জন্য যথেষ্ট। কেউ কোন অন্যায় না করলেও তার মনেও এ ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। হয়ত কোন কথা বা উক্তি ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। গুপ্তচরবৃত্তির সাইবারিকরণ বলা হয় কম্পিউটারের জন্মই হয়েছে গুপ্তচরগিরির জন্য। একদম প্রথম দিকের কম্পিউটারগুলো আমেরিকা ও ব্রিটেনে গোয়েন্দা সিগন্যাল দেয়া ও সাংকেতিক কোড ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণেও অতি উত্তম। আগে দেশে দেশে গুপ্তচরবৃত্তির ফাইলগুলো শেলফের পর শেলফে ভরা থাকত। সাবেক পূর্ব জার্মান গুপ্ত পুলিশ স্টাসির ফাইলের এত বিশাল স্তূপ গড়ে উঠেছিল যে সেগুলো একটার পর একটা সাজালে লম্বায় এক শ’ কিলোমিটার হতো। আগে বৈরী কোন দেশের কাজ কারবার জানবার জন্য সে দেশের দূতাবাস থেকে বেরিয়ে আসা টেলিফোন লাইনে ক্রোকোডাইল ক্লিপ যুক্ত করে যোগাযোগ ইন্টারসেপ্ট করা হতো। ড্যাটা সংগ্রহ করে সেগুলোর সাংকেতিক ভাষা পাঠোদ্ধার করা হতো। তবে সাংকেতিক কোড ভাঙ্গার কাজটা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য, যদিও একবার ভাঙলে তা দিয়ে ১০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত চলে যেতে পারত। ইন্টারনেট সবকিছু বদলে দিল। ড্যাটার এক একটি প্যাকেট এখন আর ফোন লাইনে যায় না। বরং এমন এক পথে যায় যা সর্বাধিক সুবিধাজনক এবং নিমেষের মধ্যে পৌঁছে যায়। এর ফলে দেশী বিদেশী যোগাযোগের ক্ষেত্রে পার্থক্য মুছে গেছে। ইন্টারনেট জগত গুপ্তচরবৃত্তির অপার সুযোগ ও সম্ভাবনা হাজির করেছে। এনএসএ ও জিসিএইচকিউ এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে। সেটা করার মতো অবকাঠামোগত সুযোগও তাদের রয়েছে। কারণ বেশিরভাগ ইন্টারনেট ট্রাফিক আমেরিকা দিয়ে গেছে। বাদবাকির এক বড় অংশ গেছে ব্রিটেন দিয়ে। সুতরাং যোগাযোগের উৎপত্তি কোথায় ঘটেছে আর কোথায় গিয়ে শেষ হচ্ছে তাতে ওদের কিছু যায় আসে না। প্রত্যেকেই একই হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কাজেই একটা ডিভাইস ভাংতে পারলে অন্য যে কোন জায়গায় অনুরূপ ডিভাইস ভাংতে পারা সম্ভব। কে কাকে ফোন করছে সেটা জানা যেমন অনেকটা সম্ভব তেমনি তারা কি কথা বলছে সেটাও জানা সম্ভব। ‘কনটাক্ট চেইনিং’ নামে একটি কৌশল ব্যবহার করে গোয়েন্দা বা গুপ্তচর সংস্থাগুলো ‘বীজ’ তথ্যকে কাজে লাগায়। সেটা হলো হুমকির কারণ হতে পারে এমন জ্ঞাত ব্যক্তির টেলিফোন নম্বর বা ই-মেইল ঠিকানা। সেগুলোর সূত্র থেকে তাঁর কনটাক্টগুলো এবং সেই কনটাক্টগুলোরও কনটাক্ট বের করে ফেলে তারা। এই কনটাক্টগুলোর মধ্যে যোগাযোগ হঠাৎ করে বেশ বেড়ে গেলে বিপদাশঙ্কার সঙ্কেত পাওয়া যায়। এভাবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামলার আগাম সঙ্কেত পায় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তথ্য সেটা যত গোপনই হোক তা সংগ্রহের প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা এখন সীমাহীন। মোবাইল ফোনের অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন কিছু নয়। আজকাল মোবাইল ফোন কিনতে গেলে ক্রেতার যাবতীয় তথ্য যেমন নাম-ঠিকানা, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সবই লাগে। কাজেই প্রযুক্তি ব্যবহার দ্বারা কলারের সমস্ত তথ্য এমনকি কখন কোথা থেকে ফোন করছে বের করে ফেলা যায়। সফটওয়্যার কলারের চেহারা এমনকি গাড়ির নম্বর প্লেট চিনতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্তিসাধ্য ডিভাইস মোবাইল ফোনের বেস স্টেশনের অনুকরণ করে কল ইন্টারসেপ্ট করতে পারে। এ জাতীয় ডিভাইসের উন্নততর মডেল টেলিফোন কলের বক্তব্য বদলে দিতে, কল আটকে দিতে এমনকি ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে দিতে পারে। হ্যাকিংয়ের সুযোগ থাকায় ব্রিটিশ সরকার ক্যাবিনেট মিটিংয়ে এ্যাপল ওয়াচ নেয়া নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের আশঙ্কা, রুশ হ্যাকাররা সহজে এ্যাপল ওয়াচ হ্যাক করতে পারে। লোকে আর্থিক লেনদেন, সামাজিক মিডয়ায় কোন কিছু পোস্ট করা এবং ভ্রমণ রেকর্ডসহ ব্যবহৃত ড্যাটার যে মহাতরঙ্গ রেখে যায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেগুলোও কাজে লাগাতে পারে। এগুলোর কিছু অংশ হচ্ছে গোয়েন্দা তথ্যের প্রকাশ্য উৎস। সিআইএ’র বিন লাদেন ইউনিটের সাবেক প্রধান বলেছেন, ‘আপনার যা জানার প্রয়োজন তার ৯০ শতাংশ এগুলো থেকেই পেতে পারেন।’ প্রযুক্তি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অনেক কিছু করার সুযোগ এনে দিয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাদের বিপুল অর্থও বাঁচিয়ে দিয়েছে। আগে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে শুধু গোয়েন্দাদের পিছনে মাসে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করতে হতো। এখন সেই তথ্য সংগ্রহে কোন এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির গাড়িতে শুধু জিপিএস লাগিয়ে দিলেই হলো। মাসে ব্যয় হবে মাত্র দেড় শ’ ডলার। আর কোন টার্গেট মোবাইল ফোনে আড়িপাতার জন্য খরচ পড়বে মাসে মাত্র ৩০ ডলার। এখন গোয়েন্দাবৃত্তির রেকর্ড কাগজপত্রে সংরক্ষণ করার কাজটা আয়ত্তের অসাধ্য হয়ে উঠেছে। সেখানে এসেছে ইলেক্ট্রনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা। অতি সুলভে এখানে কোটি কোটি গোয়েন্দা তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর কাজ অনেক কমে গিয়েছিল। এদের বাজেট ও লোকবল বেশ কাটছাঁট করা হয়। কিন্তু নাইন ইলেভেনের ঘটনা পরিস্থিতি একেবারে বদলে দেয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায় সন্ত্রাসবাদ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আবার কোমর বেঁধে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদের পিছনে বিপুল অর্থও ব্যয় হয়। ইলেক্ট্রনিক বা ইন্টারনেট গোয়েন্দাবৃত্তি তাদের কাজের পরিধিকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীকালে রাশিয়ার সামরিক শক্তির নতুন করে উত্থান এবং চীনের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধির ফলে গুপ্তচরবৃত্তি আবার সেই প্রাক-সোভিয়েত পর্যায়ে ফিরে যায়। আবার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পাশ্চাত্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে। আমেরিকা এখন রাশিয়াকে তার প্রধান সাইবার হুমকি বলে মনে করে। রাশিয়া এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়িয়ে হিলারিকে বেকায়দায় ফেলার জন্য যেভাবে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের ই-মেইল ফাঁস করে দিয়েছিল তাতে ঐ হুমকিকে সত্য বলে মনে করার কারণ আছে। গোয়েন্দাবৃত্তির ক্ষেত্রে মহাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান সাম্প্রতিক ঘটনা। সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধার থেকে কম্পিউটার হ্যাকিংয়ে চীনের উত্তরণ ঘটে ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে। ইন্টারনেটের বদৌলতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে বিপ্লব ঘটে গেছে সেটার সুযোগ নিয়ে চীন আজ বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তবে চীনের গোয়েন্দা তৎপরতার বেশিরভাগ তার ভূখ-ের ভেতরেই কেন্দ্রীভূত- উদ্দেশ্য, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা। গুপ্তচরবৃত্তিতে চীন তার জনশক্তিকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়ে থাকে। ৪ লাখ লোকের একটি জেলাতে পুরো ৪ শতাংশ লোক বেতনভুক্ত গুপ্তচর হিসেবে কর্মরত। এদিক দিয়ে চীনারা সাবেক পূর্ব জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্রাসিকে বহুলাংশে ছাড়িয়ে গেছে। তবে চীনারা প্রযুক্তিরও পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে থাকে। চীনের স্বার্থ অধিকতর আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করায় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকা-ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপ্ত হয়েছে। চীনের হ্যাকাররা নাসা ও মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের গবেষণাগার থেকে বি-১ বোম্বার, বি-২ স্টিলথ বোম্বার, উন্নত সাবমেরিন প্রোপালসন ব্যবস্থা ক্ষুদে আণবিক বোমাসহ অনেক কিছুর বিস্তারিত তথ্য হ্যাক করে নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। চীনারা যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল, সোলার ও নিউক্লিয়ার ফার্মের গোপন তথ্যাবলীও নাকি হ্যাক করে হাতিয়ে নিয়েছে চীনের এসব কর্মকা- আমেরিকার সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান ক্ষমতাদ্বন্দ্বের প্রতিফলন। গুপ্তচরবৃত্তিতে এখনও আধিপত্য বজায় রেখেছে আমেরিকা। মার্কিন গোয়েন্দা সমাজ ১৭টি সংস্থায় বিভক্ত। যেমনÑ ডিএনআই, সিআইএ, এনএসএ, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, ন্যাশনাল রিকনাইজেন্স অফিস, ন্যাশনাল জিও স্প্যাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, এফবিআই, ব্যুশে অব ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ, অফিস অব ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স, ইন্টেলিজেন্স ডিভিশন, অফিস অব ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড এনালিসিস, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, অফিস অব নেভাল ইন্টেলিজেন্স, টুয়েন্টি ফিফথ, এয়ারফোর্স ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট, কোস্ট গার্ড ইন্টেলিজেন্স। আমেরিকা ইন্টারনেটের ওপর তার নিয়ন্ত্রণকে কাজে লাগিয়ে দেশে দেশে আধিপত্য টিকিয়ে রাখা ও নাশকতার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে চীন ও রাশিয়া অভিযোগ করে থাকে। এই দেশ দুটির আরও অভিযোগ, আমেরিকা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাশ্চাত্য মূল্যবোধ তাদের দেশে ‘ইনজেক্ট’ করছে। পুতিন তো ইন্টারনেটকে ‘সিআইএ’র প্রজেক্ট’ বলে অখ্যায়িত করেছেন। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×