ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্যে জ্বলুক আলো

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২০ নভেম্বর ২০১৬

বর্জ্যে জ্বলুক আলো

বর্জ্যকে বর্জন করার দিন ফুরিয়েছে সেই কবে। কিন্তু আমরা এখনও উপেক্ষা করে যাচ্ছি বর্জ্যকে। বরং বর্জ্য যে আলো দিতে পারে, তৈরি করতে পারে গ্যাস ও বিদ্যুত এবং চমকে দিতে পারে অনেক কিছু সে কথা জানা সত্ত্বেও কার্যকরের উদ্যোগ স্তিমিত। বিশ্বের উন্নত, এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলোও এখন আর বর্জ্যকে নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। বরং ওই কাজে লাগিয়ে তারা উৎপাদন করছে গ্যাস, বিদ্যুত এবং জৈব সার। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কোন কার্যকারণ ছাড়াই পিছিয়ে আছে। অদূরদর্শিতা, অজ্ঞতা এবং অদক্ষতার কারণে বর্জ্যকে কাজে লাগাতে পারছে না। বরং বর্জ্য হয়ে আছে পরিবেশ বিনষ্টের অন্যতম উপাদানে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না অথচ বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে নাগরকিদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও সুখকর পরিবেশের যেমন নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব, তেমনি দেশে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা হলেও বিদ্যুতের ঘাটতি লাঘব করা সম্ভব। বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা যায় এই ধারণাটা এদেশীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধে কাজ করছে না বলেই এ ক্ষেত্রটি বিকশিত হচ্ছে না। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ দহনে গ্যাস উৎপাদন এবং গ্যাস থেকে টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন একটি নিরাপদ পদ্ধতি। বর্জ্য থেকে গ্যাস তৈরির জন্য জাপান, চীন ও ভারতে বর্জ্য পদার্থগুলো তরলে পরিণত করা হয়। প্রথমে স্মেল্টিং ও ইবারা ফ্রুইডাইজেশন পদ্ধতিতে করার পর তা থেকে থার্মোসিলেক্ট গ্যাসিফিকেশন প্রক্রিয়ায় গ্যাস বা বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। গাজন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্জ্যরে সেলুলোজ বা অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে তৈরি হয় ইথানল। তবে বর্জ্যরে মধ্যে চিনি জাতীয় পদার্থ থাকলে তা থেকে তৈরি হয় কার্বন ডাই অক্সাইড ও এলকোহল। তাপীয় বিয়োজনের মাধ্যমে তৈরি করা মিথেন বা ইথেন গ্যাস থেকে টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত শক্তি উৎপাদন করা যায়। বর্জ্য সংরক্ষণ, নিষ্কাশন ও পুনঃব্যবহার উপযোগী করে দেশকে একদিকে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যেমন সম্ভব তেমনি বিদ্যুত ঘাটতি হ্রাস করাও সম্ভব। তাই বিশ্বের বহু দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হলেও বাংলাদেশ এ বিষয়টিকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনেনি। আর তাই এই পদ্ধতিতে বিদ্যুত উৎপাদনের যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, সবই ফাইলবন্দী রয়েছে। বছর চারেক আগে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরকে বেছে নেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে আশাবাদ জেগেছিল নগরবাসীদের মনে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সবই থমকে গেছে। পরিবেশ সুরক্ষা ও বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে দেশকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া অধরাই থেকে গেছে। ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন, আর চট্টগ্রামে প্রায় ১৫শ’ টন বর্জ্য জমে। প্রতিদিনই এই হার বাড়ছে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ডাম্পিং করা এসব বর্জ্য থেকে প্রচুর মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে। এই গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে বিশগুণ অধিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। ঢাকা ও চাটগাঁর বর্জ্য থেকে বিদ্যুত ও গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ইতালির একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চুক্তি করেছিল। বিশ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি দুই সিটি কর্পোরেশনকে বছরে প্রায় সত্তর লাখ টাকা প্রদানেরও কথা ছিল। এতে পঞ্চাশ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে টনক নড়ছে বিদ্যুত বিভাগের। সিটি মেয়ররাও গা ঝাড়া দিয়েছেন। প্রকল্পটি আবার নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ তিনটি মডেলও দাঁড় করিয়েছে। এতে সিটি কর্পোরেশনের যেমন মুনাফা হবে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষা হবে, ডাম্পিংয়ের জন্য স্থানের প্রয়োজন হবে না। এবার আশা করা যাচ্ছে, কোন জটিলতাই এ কাজে বাধা হবে না। বর্জ্য ব্যবহারের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হোক, তা কারও কাম্য নয়।
×