ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা লিট ফেস্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২০ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকা লিট ফেস্ট

ঢাকা লিট ফেস্ট বা ঢাকা সাহিত্য উৎসব মূলত ইংরেজীতে লেখালেখি করেন যারা তাদের এবং ইংরেজী পড়ুয়াদের বার্ষিক উৎসবে পরিণত হলেও এটি শীত মৌসুমের শুরুতে রাজধানীর বর্ণিল সব উৎসবের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের ৬৬ জন কবি-সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক ও প্রকাশক। আছেন দেশের দেড় শতাধিক কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পী। উৎসব উদ্বোধন করেন একজন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক, পাশে ছিলেন দেশের দু’জন মন্ত্রী। বেশ ভারিক্কি আর আকর্ষণীয়ই বলতে হবে শুরুটা। অর্থমন্ত্রী, যিনি একজন লেখকও বটে, যথার্থ কথাটিই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ সাহিত্য উৎসবটি একই সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিকে যেমন বিশদভাবে তুলে ধরছে, তেমনি আমাদের সামনে হাজির করছে বিশ^ সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে। ঠিক এ জন্যই উৎসবটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হবে আমাদের অনুবাদ সাহিত্য। তাহলেই বিশ^ দরবারে তুলে ধরতে পারব আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাহিত্যকে।’ সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের সৃষ্টিশীল নান্দনিক চেতনার আরেক নাম। সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ও উচ্চতা সীমাবদ্ধ হতে পারে না। একমাত্র মানুষই নিয়োজিত হয় সুকুমার বৃত্তিতে। মানুষ যেমন সাহিত্য-সংস্কৃতির উপাদান সৃজন করে, তেমনি সেটি তার জীবনযাপনের অংশ, জীবন উপভোগের সূত্র করে তোলে। সাহিত্য রচিত হয় ব্যক্তির হাতে, কিন্তু সেটি হয়ে ওঠে সমষ্টির সম্পদ। সেই সম্পদ সমষ্টিকে আপ্লুত করে, তাকে শক্তি যোগায়, অনির্বচনীয় আনন্দ প্রদান করে। সাহিত্যের আলোয় যে আলোকিত হয় তার পক্ষে অন্ধকার রচনা করা, কিংবা অন্ধকারের যাত্রী হওয়া অসম্ভব। সঙ্গীত কিংবা নাটক, চিত্রকলা কিংবা চলচ্চিত্র- শিল্পের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে আমরা একই কথা উচ্চারণ করতে পারি। একটি সমাজের এসব সাংস্কৃতিক শক্তি সমাজকে সুশীলতা ও সৌরভ দান করে। অসুস্থ মনের পরম শুশ্রƒষা হতে পারে সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ। বিচ্ছিন্ন, বিহ্বল, বিপথগামী তারুণ্যকে জীবনের ইতিবাচক দিকটির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করার জন্য শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগানোর তাই বিকল্প নেই। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে চিরকালের বাতিঘর হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও অনন্য অর্জন। অপশক্তির বিরুদ্ধে হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম মহা একতার শক্তি সুষমা প্রদর্শন করেছিল ওই মহান একাত্তর। সামাজিক সাংস্কৃতিক শক্তি একযোগে সুপরিকল্পিত উপায়ে কাজ করলে অশুভ শক্তি অপসারিত হবেÑ এটা সুনিশ্চিত। সাহিত্য উৎসবে সেই চেতনাও মানুষ প্রত্যাশা করে। উৎসবে যোগদানকারী ম্যানবুকার বিজয়ী লেখক ডেবোরাহ স্মিথ জনকণ্ঠকে একটি চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডেও অনেক সাহিত্য উৎসব হয়, কিন্তু ঢাকার উৎসবের মতো মিলনমেলা হয় না।’ শুধু লেখকদের মিলনমেলা নয়, ঢাকা লিট ফেস্ট হয়ে উঠেছে লেখক-পাঠক-সংস্কৃতিবান মানুষের মিলনমেলা। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আগামীতে বাংলা সাহিত্যের কোন দিকপাল বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন কিংবা পৌরহিত্য করবেন এবং অবশ্যই দেশের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পণ্ডিতেরা, সৃষ্টিশীল ও মননশীল গুণীজনেরা এর সঙ্গে বেশি বেশি করে যুক্ত থাকবেন। আগে বাঙালী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়, এরপর আমরা বিশ্ববাসী। মধুসূদনের বাণী আমরা ভুলে যাইনি- ‘হে বঙ্গভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন, তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি’। আমাদের আরও প্রত্যাশা থাকবে এখন থেকেই দেশের সেরা সাহিত্যকর্মগুলো যথাযথ অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে করে বহির্বিশ্বের পাঠক বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও উচ্চ ধারণা লাভ করতে পারে।
×