ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মহাবিদ্যা’ নাটকে উন্নত রাষ্ট্রের আগ্রাসন নীতির প্রতিফলন ঘটেছে ॥ এনামতারা সাকী

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

‘মহাবিদ্যা’ নাটকে উন্নত রাষ্ট্রের আগ্রাসন নীতির প্রতিফলন  ঘটেছে ॥ এনামতারা সাকী

এনামতারা সাকী। এই সময়ের মঞ্চ ও টিভি নাটকের সুঅভিনেত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী নিজ দল কিসসা কাহিনীর প্রযোজনা ছাড়াও বিভিন্ন দলের মঞ্চনাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি পোশাক পরিকল্পনার কাজ করেও প্রশংসিত হয়েছেন। শুক্রবার মঞ্চে এসেছে কিসসা কাহিনী নাট্যদলের দ্বিতীয় প্রযোজনা তার নির্দেশিত নাটক ‘মহাবিদ্যা’। আজ শনিবার একই মঞ্চে নাটকটির আরও দুটি প্রদর্শনী রয়েছে। নাটক ও সাম্প্রতিক সময়ের অন্য বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। মঞ্চে আপনার প্রথম নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাই এনামতারা সাকী : মনোজ মিত্রের নাটক ‘মহাবিদ্যা’ নিয়ে নির্দেশক হিসেবে আমি প্রথম মঞ্চে এসেছি। শুক্রবার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে নাটকটির দুটি মঞ্চায়নের পর ভাল সাড়া পেয়েছি। আজও নাটকটির দুটি প্রদর্শনী রয়েছে। নাটকের এই পা-ুলিপিটি খুবই জনপ্রিয় এবং বহুল মঞ্চায়িত। বলতে দ্বিধা নেই যে, প্রথম নির্দেশনায় আমি পান্ডুলিপির বিষয়ে খুব বেশি ঝুঁকি নিতে চাইনি। নাটকে নাট্যকার কোন ব্যক্তিকে নয় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধিকেই দায়ী করেছেন। সমাজ-রাষ্ট্রের এই বিধি কেবল বর্তমান বাংলাদেশের নয়, যে কোন সময়ের যে কোন কালের। তাই এ নাটকের বক্তব্য শেষ পর্যন্ত কোন বিশেষ দেশ বা কাল নয় বরং সর্বকালের সর্বসময়ের হয়ে ওঠে। ‘মহাবিদ্যা’ প্রযোজনার উপস্থাপনায় আমরা শুধুই নাট্যকারের পা-ুলিপির অনুগামী থাকতে চাইনি বরং নাট্যকারের পা-ুলিপির উপর ভিত্তি করে একটি নির্দেশকের পা-ুলিপি নির্মাণের চেষ্টা করেছি। প্রযোজনায় আমরা পুতুলনাট্য, ছায়ানাট্য, মুখোশনাট্য ইত্যাদি থেকে উপাদান সংগ্রহ করে নানাভাবে প্রয়োগ করেছি। এছাড়া সঙ্গীতশিল্পী অরূপ রাহীর ‘মরার দেশে ভাল লাগে না’ গানটিও ব্যবহার করেছি। হাস্যরসাত্মক আবহে উপস্থাপিত কিসসা কাহিনীর দ্বিতীয় প্রযোজনা ‘মহাবিদ্যা’ নিয়ে আমরা আশাবাদী। এই সময়ে ‘মহাবিদ্যা’ নাটকটি কেন বেছে নিয়েছেন? এনামতারা সাকী : মনোজ মিত্রর বহুল প্রচারিত এবং জনপ্রিয় নাটকগুলোর একটি হচ্ছে ‘মহাবিদ্যা’। রাষ্ট্রের নির্লজ্জ অনাচার ও চৌর্যবৃত্তি প্রত্যক্ষ বক্তব্য হলেও তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্রসমূহের আগ্রাসন নীতি ‘মহাবিদ্যা’ নাটকে প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা মনে করি- পুঁজিবাদের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে পুঁজি বৃদ্ধি ও পুঁজি সঞ্চয়। এই সঞ্চিত পুঁজি কিন্তু পক্ষান্তরে মৃতপুঁজি। মৃতের স্বাভাবিক ধর্ম বিকৃত হওয়া এবং বিকৃত করা। এ নাটকে আমরা তাই দেখি। নাটকে অত্যন্ত যৌক্তিভাবে শ্রেণী শোষণ, শ্রেণীর নিজস্ব-নিঃশব্দ লড়াই, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয় হাস্যচ্ছলে বিধৃত হয়েছে। যেহেতু নির্দেশনা হিসেবে এটা আমার প্রথম কাজ স্বভাবতই মনোজ মিত্রের সহজ-সরল গল্পের পা-ুলিপি হিসেবে ‘মহাবিদ্যা’ আমাকে আকৃষ্ট করেছে। দীর্ঘদিন থেকে মঞ্চনাটকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় পোশাক ডিজাইন করছেন এ প্রসঙ্গে বলুন । এনামতারা সাকী : পোশাক ডিজাইন আমার পছন্দের এবং আনন্দের কাজের একটি ক্ষেত্র। মঞ্চ-টেলিভিশন-চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রায় ৪০টি প্রযোজনার পোশাক ডিজাইন আমি করেছি তবে বেশিরভাগই মঞ্চের। মামুনুর রশীদ, সৈয়দ জামিল আহমেদ, লিয়াকত আলী লাকী, ইস্রাফিল শাহীনসহ উল্লেখযোগ্য নাট্য নির্দেশকদের বিভিন্ন প্রযোজনায় পোশাক ডিজাইন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। পোশাক ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমি সবসময় প্রচলিত ধারার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করি। বিশেষ করে কিসসা কাহিনীর প্রথম প্রযোজনা ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাটকে আমি প্রচলিত কাপড়ের পোশাকের পরিবর্তে শরীর অঙ্কন শিল্প প্রয়োগ করেছি। কিসসা কাহিনী নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? এনামতারা সাকী : বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের দর্শকের সংখ্যা ক্রমাগত নিম্নমুখী। প্রায় সবারই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরাও এর বাইরে নই। দর্শক সংখ্যার এই ক্রমবর্ধমান নিম্নগতিকে কীভাবে উর্ধগতিতে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আমরা কিসসা কাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। আমাদের এমনই একটি কর্মসূচী ‘শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থী সংযোগ।’ এই কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের অঙ্কিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও প্রদর্শনী স্থানেই শিক্ষার্থীদের জন্য নাট্যপ্রদর্শনীর ব্যবস্থা করি। কর্মসূচীটি বেশ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা নিয়মিতভাবে দর্শক তালিকাভুক্ত করে তাদের নাটক দেখার আমন্ত্রণ জানাই। এক কথায় বলতে গেলে কিসসা কাহিনীর আপাতত পরিকল্পনা হচ্ছে-নাট্যপ্রদর্শনীর দিনগুলোতে মিলনায়তনের গেটে ‘মিলনায়তন পূর্ণ’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড ঝোলানোর স্তরে উন্নীত করা। বাংলাদেশে থিয়েটারে পেশাদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? এনামতারা সাকী : আমাদের গ্রুপ থিয়েটারধারার নাট্যকর্মীরা যে পরিমাণ শ্রম-মেধা-সময় ব্যয় করে নাট্যচর্চা করেন তাতে বিষয়টা পেশাদারিত্বের একটা পর্যায়েই অবস্থান করছে। তবে নাট্যকর্মীদের জীবিকার সমাধান যদি থিয়েটার থেকে না হয় তাহলে তাকে পেশাদারি বলার সুযোগ নেই। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে অপেশাদারভাবে যে কোন কাজ করা দুরূহ। তাই পেশাদারি থিয়েটার এখন সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ফোরাম এবং সর্বোপরি আমাদের অগ্রজ নাট্যজনদের আন্তরিক পদক্ষেপ বাংলাদেশে পেশাদারি থিয়েটার চর্চার পত্তন করবে বলে আমার বিশ্বাস। মঞ্চে অভিনয়, নির্দেশনা ও পোশাক ডিজাইনের মধ্যে কোনটিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? এনামতারা সাকী : তিনটাতেই। পোশাক ডিজাইনে আমি সংখ্যা ও মানের দিক থেকে আমি আত্মবিশ্বাসী। অভিনয়ে সংখ্যা কম হলেও মান সৃজনে আমি সর্বোত সচেষ্ট আর নির্দেশনা তো শুরু করলাম। তবে আমি বিশ্বাস করি- চর্চায় যদি নিজেকে অব্যাহত রাখতে পারি এবং নিরন্তর পরিশ্রম করে যেতে পারি তাহলে সফলতার পুষ্প একদিন আমার বাগানে ফুটবেই। Ñসাজু আহমেদ
×