ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সচেতন বা অবচেতন মনের খোরাক

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

সচেতন বা অবচেতন মনের খোরাক

হারিয়ে গেছেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মান্না দে। কিন্তু হারায়নি তাঁর বিখ্যাত গান ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই-আজ আর নেই।’ আড্ডা মানুষের সচেতন ও অবচেতন মনের খোরাক। মানুষ মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। আড্ডা না দিলে মানুষের সংকুচিত মনের প্রসার ঘটে না। তবে কোন কোন আড্ডা মানুষকে বিপথগামী করে তোলে। সুন্দর মনের আড্ডায় জ্ঞানের সুকুমার বৃত্তি প্রস্ফুটিত হয়। তাই আড্ডা মানুষের স্বভাবজাত বৃত্তের পরিচায়ক। বিকেলের সময় কাটানো হয় চায়ের দোকানে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, মিনি চাইনিজে, ফুচকার দোকানে, মিঠে-কড়া শীতের সোনা রোদে পিঠ এলিয়ে, গোধূলি সন্ধ্যায় খোলা মাঠে, বাড়ির আঙিনায় অবসরে আড্ডার আসর বসে। তবে বর্তমান সময়ের আড্ডা আর আগের দিনের আড্ডার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আগের দিনে আড্ডা করতেন বয়স্করা। তাঁরা ছিলেন কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষক-শিল্পী, সমাজপতিসহ সুশীল সমাজের মানুষ। তাঁদের আড্ডার চিন্তা-চেতনা ছিল ভিন্নধর্মী গঠনমূলক ও সৃজনশীল। তাঁদের আড্ডায় প্রজ্বলিত হতো জ্ঞানের প্রদীপ। আড্ডায় চলত সমাজ পরিবর্তনের তুখোড় যুক্তিতর্ক অথবা দিক নির্দেশনা। তখনকার আড্ডায় ঝড় বয়ে গেছে চায়ের কাপে। বর্তমানকালের আড্ডা ডিজিটাল পদ্ধতির। প্রেম-ভালবাসা ছাড়া এ সময়ের আড্ডা জমে না। ফেসবুকে স্ট্যাটাস, কমেন্টস, কমেন্টস রিপ্লাইতে লম্বা হয় আড্ডার সময়সীমা। গ্রুপ চ্যাটিং আড্ডার অন্যতম মাধ্যম। এসব আড্ডায় নৈতিক অবক্ষয়ের আশঙ্কা থাকে। যে কারণে কখনও কখনও পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি ডেকে আনে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের আড্ডা এখন জমজমাট হয় লেকের পাড়ে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে জমিয়ে আড্ডা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এছাড়া দিনের বেলা আড্ডা হয় স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমান ফুচকার দোকানে। মান্না দের কফি হাউজের সেই আড্ডাটা নেই। কিন্তু তাই বলে তো আড্ডা থেমে থাকেনি। আড্ডা এখন চটপটির দোকান কেন্দ্রিক। লেকের পাড়ে চটপটি আর ফুচকার দোকান এখন আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু। বিনোদন ও বৈকালিক মুখরোচক খাবারের জন্য প্রতিদিন বিকেল থেকে লেকের পাড়ে ভিড় জমে ওঠে। ছোট-বড়, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সের মানুষের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় লেকের পাড়। প্রতিদিন বিকেলে শহর ও শহরতলী থেকে দল বেঁধে মানুষ ছুটে আসে লেকের পাড়ে। অবসর সময় কাটানো বা সারাদিনের কর্মব্যস্ত মানুষ একটু প্রশান্তির আশায় লেকের পাড়ে এসে আড্ডায় জমায়েত হয়। গ্রামীণ জনপদে এর বেশি প্রত্যাশা করা যায় না। সামাজিকতা ও পারিপার্শ্বিক কারণে মফস্বল শহরে আড্ডার আবেদনে ঘাটতি রয়েছে। মানুষের আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতিও আড্ডায় প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে। কোথাও কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় শহরের মানুষের লেকই একমাত্র ভরসা। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ অভাব পূরণ হতে যাচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন মাদারীপুর লেককে আরও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষের পথে। কাজ শেষ হলে এটা হয়ে উঠবে মানুষের আড্ডা আর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। অল্পকিছু দিনের মধ্যে সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে লেক নতুনরূপে ফিরে আসবে। তখন আড্ডা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। শহুরে আড্ডা শুধু আড্ডাই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিছু মানুষের জীবন জীবিকা। কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে ৬ শতাধিক মানুষ আর খাদ্য চিন্তা দূর হয়েছে এদের পরিবারের প্রায় চার হাজার পোষ্যের। তাই আড্ডার নেতিবাচক দিক যেমন আছে, পাশাপাশি তেমনি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×